সম্পদের লোভে নিখোঁজের মৃত্যু সনদের জন্য মরিয়া দুই ভাই

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৫:২৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৮, ২০২২

সম্পদ হাতিয়ে নিতে নিখোঁজ ভাইয়ের সন্ধান না করে মৃত্যু সনদ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে নিখোঁজ আবুল কালাম আজাদ এর ভাই মোঃ তারা মিয়া ও ফজলু।

এঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন নিখোঁজ আবুল কালাম আজাদ এর পরিবার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত পঁচিশ বছর আগে ১৯৯৭ সালে টাঙ্গাইলে ব্যবসার জন্য কাপড় কিনতে গিয়ে নিখোঁজ হন ধামরাইয়ের রোয়াইল ইউনিয়নের খরারচর গ্রামের আবুল কালাম আজাদ। পরে সে বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি ধামরাই থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলেন ভাই তারা মিয়া। তবে সম্প্রতি সেই ভাইয়ের মৃত্যু সনদ নিতেই মরিয়া এখন তারা মিয়া।

নিখোঁজ আবুল কালাম আজাদের ছেলে বলেন, আমার বাবা কাপড়ের ব্যবসা করত। তিনি ১৯৯৭ সালে টাঙ্গাইল কাপড় কিনতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। তখন আমি একেবারে ছোট। শুনেছিলাম প্রায়ই কাপড় কিনে নিয়ে এসে ধামরাইয়ে দোকান করত। সেসময় বাবার সাথে কুটি নামের আরেকজন দোকানদার গিয়েছিল। কুটি কাকা তিন দিনপর ফিরে আসলেও আমার বাবার ফিরে আসেনি। কুটি কাকার থেকে জানতে পেরেছি আমার বাবা ও তিনি মলম পার্টির খপ্পরে পড়েছিলেন তখন থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল তারা।

এরপর আর বাবার খোঁজ কেউ পায়নি। ইদানীং আমার দুই কাকা বাবাকে মৃত বলে ঘোষণা করতে গতচার মাস যাবত চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছে ঘুরছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার বাবা যখন নিখোঁজ হয়েছে তখনও দাদা বেচে ছিলো। বাবা নিখোঁজের কয়েকবছর পর দাদাও মারা গেছে৷ এখন বাবার সেই নিখোঁজ হওয়ার সময় ধরে আমার দুই কাকা মৃত সনদ করতে চাইছে। যেনো তারা বাবার নামে থাকা সম্পত্তির ওয়ারিশ হিসেবে ভাগ নিতে পারে । কিন্তু আমার বাবা তো আমাদের কাছে মারা যায়নি। তার লাশও তো আমরা পায়নি। আমার কাকারা কিভাবে এই ঘৃণিত কাজটি করার জন্য মানুষের কাছে ঘুরতেছে আমার জানা নেই।

Nagad

নিখোঁজের স্ত্রী মোছা: খোদেজা বেগম বলেন, আমার স্বামী ২৫ বছর ধরে নিখোঁজ। সেই ছোটবেলা থেকেই এক ছেলে ও এক মেয়েকে খুব কষ্ট করে বড় করেছি। এর মধ্যে কারও কোনো খোঁজ খবর ছিলনা। আজ সম্পত্তি হাত করে নিতে আমার স্বামীকে মৃত বানাতে তারা চেয়ারম্যানের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

সাবেক ইউপি সদস্য আইবুর রহমান বলেন, আমাদের বাড়ি ও আবুল কালাম আজাদের বাড়ি কিন্তু বেশি দুরে নয়। তিনি টাঙ্গাইলে মোকাম (কাপড় কিনতে) করার জন্য টাকা-পয়সা নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। তারপর তিনি আর বাড়িতে আসেনি। উনি নিখোঁজ অবস্থা এখনো আছেন আমরা তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করছি কিন্তু পাইনি। সে কি আজও বেঁচে আছে না মরে গেছে তার লাশটা পর্যন্ত এখন আমরা পাইনি।

রোয়ইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজিম উদ্দিন বলেন, তারা মিয়া ও ফজুল নামের দুইজন আমার কাছে ৭ দিন আগে আসছিল। ওদের ভাইয়ের নাকি মৃত্যু সনদ লাগবে এর জন্য। তারা মৃতের কোন প্রমাণ বা সাক্ষ্য দিতে পারেনি। পরে তাদের আমি আজাদের একটি নিখোঁজ সনদ দিয়েছি। এবং তাদের বলেছি মৃত সনদের বিষয়টি অনেক জটিল আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও এর সাথে আলোচনা করবো৷ পরে অবশ্যই ইউএনওর সাথে আলোচনা করেছি তিনি বলেছেন আগে থানায় একটি জিডি করতে। তারপর একটি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

নিখোঁজ আবুল কালাম আজাদের ভাই তারা মিয়া অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং কথা বলতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, চেয়ারম্যান আমার সাথে এসে পরামর্শ করেছিলেন। দুই পক্ষের সাথে কথা বলে চেয়ারম্যানকে সমাধান করতে বলেছি।