শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১:৪৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১, ২০২২

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে শনিবার (১ অক্টোবর)। ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে এ দুর্গোৎসব শুরু হবয়। বুধবার (৫ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের এ মহোৎসব।

ইতোমধ্যে এ মহোৎসবকে আনন্দমুখর করতে দেশজুড়ে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সারাদেশে উৎসবের আমেজ বইছে, ঢাক-ঢোল কাঁসা ও শঙ্খের আওয়াজে বিভিন্ন মন্দির মুখরিত হয়ে উঠেছে।

দুর্গা শব্দের অর্থ হলো ব্যূহ। যা কিছু দুঃখ কষ্ট মানুষকে আবদ্ধ করে, যেমন- বাধাবিঘ্ন ভয় দুঃখ শোক জ্বালা যন্ত্রণা এসব থেকে তিনি ভক্তকে রক্ষা করেন। অশুভ শক্তির বিনাশ এবং সত্য ও সুন্দরের আরাধনা শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী সকল নাগরিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, দুর্গাপূজা কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়, সামাজিক উৎসবও। দুর্গোৎসব উপলক্ষে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজন, পাড়া-প্রতিবেশী একত্রিত হন, মিলিত হন আনন্দ-উৎসবে। তাই এ উৎসব সর্বজনীন। এ সর্বজনীনতা প্রমাণ করে, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। ধর্মীয় উৎসবের পাশাপাশি দুর্গাপূজা দেশের জনগণের মাঝে পারস্পরিক সহমর্মিতা ও ঐক্য সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন।

Nagad

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আবহমান কাল ধরে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’- এ মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশে আমরা সব ধর্মীয় উৎসব একসঙ্গে পালন করি। আমাদের সংবিধানে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমান অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। সকলে মিলে মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। এই দেশ আমাদের সকলের। বাংলাদেশ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের নিরাপদ আবাসভূমি। প্রত্যেকে যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সবার উন্নয়ন করে যাচ্ছে। সব ধর্মের মানুষ সমভাবে উন্নয়নের সুফল উপভোগ করছে।

ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠও রামকৃষ্ণ মিশনের হরি প্রেমানন্দ মহারাজ বলেন, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার গজে (হাতী ) চড়ে কৈলাশ থেকে মর্ত্যালোকে (পৃথিবী) আসবেন। এতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঝড় বৃষ্টি হবে এবং শস্য এবং ফসল উ্ৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে কৈলাশে (স্বর্গে) বিদায় নেবেন নৌকায় চড়ে। যার ফলে জগতের কল্যাণ সাধিত হবে ।

পূজাকে আনন্দমুখর করে তুলতে দেশজুড়ে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। সারাদেশে এখন বইছে উৎসবের আমেজ। ঢাক -ঢোল কাঁসা এবং শঙ্খের আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন মণ্ডপ।

শনিবার (১ অক্টোবর) ভোরে কল্পারম্ভ এবং বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে মহাষষ্ঠীর দিন শুরু হয়েছে। এদিন সকাল থেকেই চন্ডিপাঠে সকল মন্ডপ মুখরিত ।

এ বছর সারাদেশের ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন করা হচ্ছে। গত বছর সারাদেশের পূজামণ্ডপের সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ১১৮টি। ঢাকা মহানগরে মণ্ডপের সংখ্যা ২৪১টি, যা গত বছরের থেকে ছয়টি বেশি।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র‌্যাবসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মণ্ডপেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের স্বেচ্ছাসেবক দল নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন।

ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় পূজা উৎসব হিসেবে পরিচিত এ মন্দিরের মণ্ডপে পূজার পাশাপাশি ভক্তিমূলক সংগীতানুষ্ঠান, বস্ত্র ও মহাপ্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছায় রক্তদানসহ বিজয়া শোভাযাত্রা করা হবে।

হিন্দু সম্প্রদায়সহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সব নাগরিককে শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি।