ভারী ব্যাগ বহনের কারণে শিশুরা মেরুদন্ডের সমস্যা নিয়ে বেড়ে ওঠে

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৯:২৮ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৭, ২০২২

সংগৃহীত ছবি-

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব স্পাইন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, ভারী ব্যাগ বহনের কারণে শিশুরা মেরুদন্ডের সমস্যা নিয়ে বেড়ে ওঠে।

সোমবার (১৬ অক্টোবর) ‘মেরুদন্ড আপনার অমূল্য সম্পদ, মেরুদন্ডকে সুস্থ রাখতে হবে’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত সেমিনারে তারা এ কথা বলেন।

এ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ নিউরো স্পাইন সোসাইটি একটি শোভাযাত্রা ও বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজন করে।

বক্তারা বলেন, শিশুদের জন্য স্কুলে ব্যবহৃত বেঞ্চ বা চেয়ারগুলোও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এ ছাড়া দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ভারী স্কুলব্যাগ বহন করে। দীর্ঘসময় ভারী ব্যাগ বহনের কারণে অনেকের মেরুদন্ড বাঁকা হয়ে যায়, পিঠে-ঘাড়ে চাপ পড়ে। অল্প বয়স থেকেই তারা মেরুদন্ডের সমস্যা নিয়ে বেড়ে ওঠে। পরে ৪০-৫০ বছরে পৌঁছলে অনেকেই মেরুদন্ডজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হন।

তারা আরো বলেন, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য শ্রেণিকক্ষে বসার ব্যবস্থা থাকে না। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার কারণে তাদেরও মেরুদন্ডের সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বর্তমানে কমসংখ্যক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানের ঘাটতি ও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে দেশের জনগোষ্ঠীর ৫০ শতাংশ মানুষ চিকিৎসাসেবার বাইরে রয়েছে। বর্তমান সরকার আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে মেরুদন্ডের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম জেলা পর্যায়ে পৌঁছাতে কাজ করে চলেছে।

বাংলাদেশে বিগত দিনের তুলনায় স্পাইন রোগের চিকিৎসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশনায় অনেক দূর এগিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি ।

Nagad

সেমিনারে বলা হয়, বিশ্বের ৫৪ কোটি মানুষের মেরুদন্ডের সমস্যা ভুগছেন। বাংলাদেশে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষের এ সমস্যা রয়েছে। প্রতি বছর বাংলাদেশ প্রায় ২০ হাজার এ ধরণের রোগী চিকিৎসা সেবা নেন। বাংলাদেশের এসব রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছে মাত্র ২১২ জন। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। প্রতিবছর এ রোগে আক্রান্ত ৪০ হাজার রোগীর অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। এদের অধিকাংশই থেকে যান চিকিৎসার বাইরে। তাছাড়া ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেকেই চিকিৎসা ব্যয় বহনে অসমর্থ্য।

সেমিনারে আরো বলা হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে উন্নতমানের নিউরো স্পাইনের সব ধরণের চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রগুলোকে বিশ্বমানের করা প্রয়োজন। বর্তমান সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই বাংলাদেশে নিউরো সার্জারি এমএস কোর্স চালু করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন।

সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহনেওয়াজ বারী ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউরো সার্জারি বিভাগের কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. ইসমে আজক জিকো।

নিউরো স্পাইন সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোঃ কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ইউজিসি অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যার্নার্জী, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান দুলাল, নিউরোসার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যানের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আফজাল হোসেন, বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আখলাক হোসেন, অধ্যাপক ডা. ধীমান চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. হারাধন দেবনাথ, হেপাটোলিবিলিয়ারি এন্ড প্যানক্রিয়াটিক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মহছেন চৌধুরী, অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. নাজির উদ্দিন মোল্ল্,া রেডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাঈদা শওকত, হৃদরোগ বিভাগরে সহযোগী অধ্যাপক ডা. আরিফুল ইসলাম জোয়ারদার টিটো, নিউরো সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কেএম তারিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে বাংলাদেশ স্পাইন সোসাইটিও বিশ্ব স্পাইন দিবস পালন করে। দিবসটি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গণসচেতনামূলক একটি শোভাযাত্রা ও বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিটোরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল গনি মোল্লা, বাংলাদেশ অর্থোপেডিক্স সোসাইটির সভাপতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোঃ মোনায়েম হোসেন ও মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ স্পাইন সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. কেএইচ আব্দুল আউয়াল রিজভী এবং অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মোঃ আনোরুল ইসলাম।