‘প্রত্যেক বড় ব্যবসায়ী বলছেন আমরা খুব খারাপ সময়ের মধ্যে আছি’

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৫:৫৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২১, ২০২২

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকে একটি খবরের কাগজে বড় ব্যবসায়ীদের সমস্যার কথা উঠে এসেছে। প্রত্যেক বড় ব্যবসায়ী একটা কথা বলছেন, আমরা খুব খারাপ সময়ের মধ্যে আছি। আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের এখন এমন অবস্থা যে, শ্রমিকদের মজুরির টাকা পর্যন্ত আমাদের কাছে থাকছে না।

সোমবার (২১ নভেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আবদুস সালাম হলে বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম ও উত্তরবঙ্গ ছাত্র ফোরামের যৌথ উদ্যোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৮তম জন্মদিন উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি এসব কথা জানান।

তিনি বলেন, সরকার বলার চেষ্টা করে যে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এটা হচ্ছে। হয়তোবা কিছুটা আছে। কিন্তু শুরুটা করেছে সরকার। দেশের সম্পদকে লুট করছে। ১০ বছরে ৮৬ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। গত এক বছরেই ৭৮ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। যে দেশের অর্থনীতিতে সরকারের লোকেরা সম্পদ লুট করে পাচার করে সে দেশের অর্থনীতি কী থাকতে পারে।

মির্জা ফখরুল বলেন, সংকটকালে রিজার্ভ ব্যবহার হতেই পারে। ব্যবসায়ীরা বলছেন এ সময়ে যদি আমরা প্রণোদনা পেতাম, এ সময়ে যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুবিধা পেতাম তাহলে হয়তো আমরা দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম।

তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোতে এলসি খোলা যায় না। কারণ তাদের ডলার নেই, ডলার দিতে পারছে না। রিজার্ভের টাকা তো লোপাট করে ফেলেছে আগে থেকেই এবং এতো বেশি লোপাট করেছে যে, সরকার ডিফেন্সিভ হয়ে বলছে, ‘না আমরা রিজার্ভ চিবিয়ে খাইনি’। আপনারা চিবিয়ে খাননি আমরা জানি, আপনারা গিলে ফেলেছেন এবং সেগুলো আবার পাচার করে দিয়েছেন। এটা প্রমাণিত সত্য। এতো কথা বলার আমার দরকার নাই। আজ সাধারণ মানুষ, রিকশাচালক, হকার যার কাছেই যাবেন বলবে- এ সরকার চোর।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, মানুষ জেগে উঠেছে। মানুষ কিন্তু পিছিয়ে নেই। প্রত্যেকটা সমাবেশ আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। আরেকটা মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এ সরকারকে পরাজিত করতে হবে।

Nagad

আওয়ামী লীগের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, এরা আজকে গোটা বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ধ্বংস করে ফেলেছে। যদি একটা জাতিকে ধ্বংস করতে হয়, তবে তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোকে ধ্বংস করতে হয়, সেটাই তারা করেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ বালখিল্য আচরণ করে কেউ তাদের বিশ্বাস করে না। এরা মানুষকে মানুষ মনে করে না, এরা মনে করে বোঝা। দেশটাকে এরা পৈতৃক সম্পত্তি মনে করে। যেভাবে পারবে সেভাবে লুট করবে, কেউ কিছু বলতে পারবে না। চুরি করবে কেউ কিছু বলতে পারবে না। মানুষকে খুন করবে কেউ কিছু বলতে পারবে না।

ডলারের সংকট প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, পত্রিকায় লিখছে ব্যাংকে গেলে এখন আর এলসি খোলা যায় না। কারণ তাদের ডলার নেই, ডলার দিতে পারছে না। রিজার্ভের টাকাতো লোপাট করেই ফেলেছে। এত বেশি লোপাট করে ফেলেছে যে, নিজেরাই বলছে রিজার্ভ তো আমরা চিবিয়ে খাইনি। রিজার্ভ তো আপনারা চিবিয়ে খাননি; গিলে ফেলেছেন, পাচার করে দিয়েছেন।

ফখরুল বলেন, আমরা আন্দোলন করে এই সরকারকে সরাবো। এ সরকারকে সরানোর পরে আমরা আন্দোলনকারী সকল দলগুলোকে নিয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠন করব। তখন সমস্ত মানুষগুলোকে নিয়ে এদেশকে এরা (আওয়ামী লীগ) যে ডাস্টবিন বানিয়ে ফেলেছে, নর্দমা বানিয়ে ফেলেছে, এটাকে পরিষ্কার করার জন্য সকলকে নিয়েই করতে হবে। আমাদের বিচার ব্যবস্থাকে সংস্কার করতে হবে। প্রশাসন ব্যবস্থাকে সংস্কার করতে হবে। প্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। সত্যিকার অর্থে একটি আধুনিক জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে।

যে মামলা খালাস হয়ে গেছে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে আবার নতুন করে মামলা শুরু হয়েছে জানিয়ে ফখরুল বলেন, বিচার বিভাগের প্রতি সম্মান রেখে বলতে চাই, দয়া করে ন্যায়বিচার করুন।

উত্তরবঙ্গ ছাত্র ফোরামের উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান ও ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসার মোহাম্মদ ইয়াহিয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।