জঙ্গি ছিনতাইয়ে নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তি শনাক্ত: সিটিটিসি প্রধান

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ৮:৩৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২১, ২০২২

ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। সংগৃহীত ছবি-

ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণ থেকে প্রকাশক দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)।

আজ সোমবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এ কথা জানান সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘গতকাল রোববার আদালত থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তির নাম আমরা পেয়েছি। তাকে শনাক্ত করা হয়েছে। তার সঙ্গে আরও কারা কারা ছিল এরকম বেশ কয়েকজনের নাম আমরা পেয়েছি। কিন্তু এই মুহূর্তে তদন্তের স্বার্থে নাম-পরিচয় আমরা বলতে চাচ্ছি না।’

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিষয়টি অনেক জটিল। নাইন ইলেভেনের ঘটনা কবে ঘটেছিল সেটা আমরা সবাই জানি (২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর)। ওই ঘটনার এক যুগ পর কিন্তু ওসামা বিন লাদেনের অপারেশনটি সংঘঠিত হয়েছিল। আদালতের সামনে থেকে জঙ্গি ছিনতাই অপারেশনে কারা কারা ছিল তাদের বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। নেতৃত্ব দেয়া ব্যক্তিকেও শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের সবাইকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার কাজ চলছে। এজন্য গণমাধ্যম ও দেশবাসীর সহযোগিতা চাইছি।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা কীভাবে হয়েছে সেটাও আমরা গোয়েন্দার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। পরিকল্পনা ও অপারেশনে কারা কারা ছিল এরই মধ্যে গোয়েন্দা তথ্যে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি। তাদের যতদ্রুত সম্ভব গ্রেপ্তার করা আমাদের মূল লক্ষ্য।’

শুধু চারজনকেই ছিনিয়ে নেওয়াই জঙ্গিদের টার্গেট ছিল, নাকি আরও জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়া তাদের টার্গেট ছিল- এমন প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘চারজনকে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল তবে দুজনকে তারা নিয়ে যায়। প্রথমে চারজন নেমেছে, তাদেরই তারা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। যদি একসঙ্গে বেশি নামতো তাদেরও নিয়ে যেতো হয়তোবা, এমন পরিকল্পনা থাকতে পারে। অপারেশনে যারা ছিল তাদের গ্রেপ্তার করলে পুরো পরিকল্পনা জানা যাবে।’

Nagad

তিনি বলেন, ‘আদালতে হাজিরা দিতে আসেন আনসার আল ইসলামের শীর্ষ পর্যায়ের জঙ্গিরা। প্রত্যেক আসামিই জঙ্গি সংগঠনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সব সদস্যকে সিটিটিসি ২০১৬ সালে গ্রেপ্তার করেছিল। গ্রেপ্তারের মাধ্যমে তাদের বেশকিছু অপারেশন ও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত ও উদ্‌ঘাটিত হয়েছিল। তাদের পুনরায় গ্রেপ্তার করা আমাদের কাছে একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ।’

পলাতক দুই জঙ্গিকে ধরতে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারির বিষয়ে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে রেড অ্যালার্ট বলতে কোনো শব্দ পুলিশি ভাষায় আছে বলে আমার মনে হয় না। আমরা প্রত্যেকটা পয়েন্টকে সতর্ক করে দিয়েছি। যেন করে পলাতক জঙ্গিরা পালিয়ে যেতে অথবা কোনোভাবে দেশত্যাগ করতে না পারে, সব ব্যবস্থা পুলিশের উচ্চপর্যায় থেকে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও আইজিপি ঘোষণা দিয়েছেন তাদের ধরিয়ে দিতে পারলে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব সদস্যকে সতর্ক করা হয়েছে। যেন কোনোভাবেই পলাতক জঙ্গিরা নিরাপত্তার ফাঁকে পালিয়ে যেতে না পারে।’

সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়াকে নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘অপারেশনের নেতৃত্ব জিয়া দেননি। যে অপারেশনের নেতৃত্ব দিয়েছে তাকে আমরা শনাক্ত করেছি। তবে তার নামটি এই মুহূর্তে প্রকাশ করতে চাচ্ছি না।’

প্রসঙ্গত, গতকাল রোববার ঢাকার সিজেএম ভবনের ৮ তলার ঢাকার সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে মোহাম্মদপুর থানার এ মামলা চার্জগঠনের জন্য ছিল। সেজন্য পালিয়ে যাওয়া মইনুল হাসান শামীম ও আবু সিদ্দিক সোহেলসহ কারাগারে থাকা ১২ জনকে আদালতে হাজির করা হয়। হাজিরা শেষে চারজনকে ঢাকা সিএমএম আদালতের হাজতখানায় নেওয়ার জন্য নিচে নামিয়ে ভবনের মূলগেটের বাইরে নিয়ে আসেন চার জন পুলিশ।

ওই সময় দুটি মোটরসাইকেলে চার অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসী প্রথমে পুলিশের চোখে স্পে মারে। এরপর একজন পুলিশ সদস্যকে মারধর করে দুজনকে নিয়ে চলে যায়। আহত পুলিশ সদস্য নূরে আজাদ। পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গি জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা এবং লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।