মনের বন্ধুর অ্যাপ উন্মোচন করলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সারাবিশ্বের মানুষের কাছে হাতের নাগালে নিয়ে যাওয়ার জন্য মনের বন্ধু অ্যাপ উন্মোচন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত আইসিটি টাওয়ারের বিসিসি অডিটোরিয়ামে এক জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মনের বন্ধুর অ্যাপ উন্মোচন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অ্যাপ উন্মোচন করেন বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক, এমপি। এ সময় তিনি বলেন, মন যা চায় তাই করতে হবে। মনের কথা শুনতে হবে। ‘মনের বন্ধু’ শব্দের মধ্যে একটা আবেগ আছে। মানসিক স্বাস্থ্যে আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে। পাশাপাশি আমাদের চিন্তা চেতনাকে উন্নত করতে হবে। যা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। তিনি আরও বলেন, মানসিক অসুস্থতা মানেই পাগল নয়। শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। মনের বন্ধু বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম সারাদেশে ছড়িয়ে গেছে। আশা করি তা মানুষের মন ভালো রাখতে সাহায্য করবে। মনের বন্ধুর অ্যাপ ১৭ কোটি মানুষের উপকারে আসবে বলে আমার বিশ্বাস। একজন বন্ধু হয়ে মনের বন্ধুর পাশে থাকার আশাবাদ ব্যক্ত করেন জুনাইদ আহমেদ পলক।
অনুষ্ঠানে মনের বন্ধুর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদা শিরোপা জানান, মনের বন্ধু একটি মানসিক স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র। সব ধরনের মানসিক, সামাজিক, পারিবারিক সমস্যা, সংকোচ ও দ্বিধায় মানসিক সেবা দিয়ে থাকে – মনের বন্ধু। ২০১৬ সাল থেকে আমাদের প্রশিক্ষিত অভিজ্ঞ মনোবিদেরা সব ধরনের গোপনীয়তা বজায় রেখে সেবা দেন। মনের বন্ধু ওয়ান টু ওয়ান কাউন্সিলিং, মোবাইল ও ভিডিও কাউন্সিলিং, কর্মশালা, ফেসবুক পাতার মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে থাকে। মানসিক সুস্থতা ও স্বাস্থ্যসেবার প্ল্যাটফর্ম মনের বন্ধু ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশে কাজ করে যাচ্ছে। টেকসই লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশের সব নাগরিকের জন্য সহজ ও সাশ্রয়ী মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয় প্ল্যাটফর্মে। অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ মনোবিদ (সাইকো সোশাল এক্সপার্ট) ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে প্রায় ৩১ হাজার মানুষকে সরাসরি ও অনলাইন কাউন্সেলিং সেবা দিয়েছে। পাশাপাশি গত ৫ বছরে বিভিন্ন কর্মশালা, প্রশিক্ষণ ও সচেতনামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে ১২ লাখ মানুষকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা খাতের সঙ্গে যুক্ত করেছে, সেই সঙ্গে অনলাইনে প্রাথমিক সেবা দিয়েছে ৪০ লাখ মানুষকে।
তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের আইডিয়া প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক মো. আলতাফ হোসেন বলেন, দেশে বিদেশে মনের বন্ধু আরও কাজ করবে। আইডিয়া প্রজেক্ট থেকে ফ্যান্ড পেয়ে মনের বন্ধু আজ এতো দুর এসেছে। এটি আমাদের জন্য গর্বের। আমরা চাই তারা আমাদের সঙ্গে সব সময় কাজ করবে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কথাসাহিত্যিক ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, স্মার্টনেস মানে ভালো পোশাক নয়, স্মার্ট মানে মনে-জ্ঞানে, বুদ্ধিতে এবং চিন্তায় উন্নত সেই প্রকৃত স্মার্ট। অন্যের আনন্দে নিজেকে সামিল করতে হবে। এতে নিজের দুঃখ কষ্ট ভুলে থাকা যায়। সবসময় হাসিমুখে থাকার চেষ্টা করতে হবে। জীবনে ভালো মন্দ যা-ই আসুক না কেন সত্যকে গ্রহণ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, জীবন অনেক সুন্দর। তাই আমাদের প্রতিদিন উপভোগ করতে হবে।
স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামি আহমেদ বলেন, স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড নতুন উদ্যোগ্যের পাশে থেকেছে সবসময়। প্রযুক্তি খাতে তরুণদের এগিয়ে নেওয়ার জন্য সবধরণের সহযোগিতা করে যাচ্ছে স্টার্টআপ বাংলাদেশ। মনের বন্ধু প্রথম পর্যায়ের ফান্ড পাওয়া প্রতিষ্ঠান। হাঁটিহাঁটি পা পা করে মনের বন্ধু দেশের মধ্যে অন্যতম একটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের মধ্যেও দেশের নাম উজ্জ্বল করে চলেছে মনের বন্ধু। তিনি আরও বলেন, মনের বন্ধুর অ্যাপ উন্মোচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি এখন থেকে সবার হাতের মুঠোয় পাওয়া যাবে। এর মাধ্যমে মনের বন্ধু মানসিক স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি সবাইকে মন ভালো রাখতে সাহায্য করবে। বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে এখন মনের বন্ধুর সেবা পাওয়া যাবে অ্যাপের মাধ্যমে।
মনোচিকিৎসক ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. আহমেদ হেলাল বলেন, মন ভালো না থাকলে শরীর ভালো থাকে না। তাই শুধু মাত্র শারীরিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিলে আমরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারবো না। তাই মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে।
অভিনেত্রী অপি করিম বলেন, মনের বন্ধু থেকে আমি প্রতিদিন মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন জিনিস শিখি। যা আমাকে মানসিক ভাবে ভালো থাকতে সাহায্য করে। চিরকুট ব্যান্ডের ভোকাল সুমি বলেন, গান শুনলে আমাদের মন ভালো থাকে। গান আমাকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। আমরা যদি গানের সঙ্গে মনের কথা বলি তাহলে তা সকলকে ভালো রাখতে সাহায্য করবে। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) আবাসিক প্রতিনিধি ভ্যান নিগায়েন ও নেদারল্যান্ডস অ্যাম্বাসি সিনিয়র পলিসি পরামর্শক মাশফিকা জামান প্রমুখ।
অনুষ্ঠান শেষে গান পরিবেশন করে জুনাইদ আহমেদ পলক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, চিরকুট ব্যান্ডের সুমি ও অভিনেত্রী অপি করিম।
অনুষ্ঠানের উপস্থিত সকলকে মেডিটেশন করানোর মাধ্যমে ব্যতিক্রম ভাবে আয়োজন শুরু হয়।
সারাদিন. ১১ জানুয়ারি