ফজরের পর বয়ানে শুরু ইজতেমার তৃতীয় দিন, মানুষের স্রোত

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:২০ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৫, ২০২৩

গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে কুয়াশা ও কনকনে শীত উপেক্ষা করেই গত শুক্রবার থেকে লাখ লাখ মুসল্লির পদভারে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ইজতেমা ময়দান। ফজরের পর বয়নের মাধ্যমে শুরু হয়েছে প্রথম পর্বের তৃতীয় দিন। এই দিনের তাবলিগ জামায়াতের ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের স্রোত বয়ে চলেছে টঙ্গী অভিমুখে। আজ আজ রোববার (১৫ জানুয়ারি) জোহর নামাজের আগে যেকোনো সময়ে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে বলে ইজতেমা আয়োজক সূত্রে জানা গেছে।

ইজতেমা ময়দানে আসতে এবং ময়দানে প্রাঙ্গণে অনেক সমস্যা থাকলেও এ নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ নেই। বরং মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে করোনা মহামারির সময় পেরিয়ে একত্রে আবারও সমবেত হতে পারায় কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন বারবার। সবার পরিচয় তারা আল্লাহর বান্দা ও রাসুলের (সা.) উম্মত। নবিওয়ালা জিন্দেগি গড়ে তুলতে দাওয়াতে তাবলিগের দীক্ষা নিতেই হাজির হয়েছেন এই সম্মেলনে। তারা বিশ্বকে জানাতে চান এটাই যে ইসলামের মাহাত্ম্য।

এদিকে আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে ‘মোনাজাত স্পেশাল’ নামের বিশেষ ট্রেন পরিচালিত হয়। যা রোববার সকাল ১০টা থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে টঙ্গীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে টঙ্গীর উদ্দেশে প্রথম ট্রেন ছেড়ে যাবে ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে, দ্বিতীয় ট্রেন ছাড়বে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে, তৃতীয় ট্রেন ছাড়বে ৭টা ৩০ মিনিটে, চতুর্থ ট্রেন ছাড়বে ৯টায় এবং পঞ্চম ট্রেন ছাড়বে সকাল ১০টায়। গত দুদিন টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে লাখ-লাখ মুসল্লির উদ্দেশে চলে পবিত্র কুরআন হাদিসের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান।

এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, আখেরি মোনাজাতে দূর-দূরান্ত থেকে অনেক লোক শরিক হবেন। সেজন্য ট্রাফিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এ জন্য শনিবার রাত ১২টার পর থেকে কয়েকটি সড়ক বন্ধ রাখা হবে।

এ সময় যানবাহন চলাচলে বাইপাস সড়ক ব্যবহার করতে হবে। সড়কগুলো হলো, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে ভোগড়া বাইপাস পর্যন্ত, কামারপাড়া রোড, আশুলিয়ায় রোডের আবদুল্লাহপুর থেকে বাইপাইল পর্যন্ত।

এবার ইজতেমা ময়দানে রোববার সকাল পর্যন্ত ৬ মুসল্লির মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। ময়দানে মরদেহের জিম্মাদার মাওলানা মুহাম্মদ শাকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে গোসল ও কাফন পরিয়ে স্বজনদের জিম্মায় তুলে দেওয়া হয়েছে।

Nagad

তারা হলেন, নরসিংদীর মনোহরদী থানার মাসিমপুর গ্রামের রহমতুল্লাহর ছেলে হাবিবুর রহমান হাবি, চট্টগ্রামের রাউজান থানা সদরের আবদুর রশিদের ছেলে আবদুর রাজ্জাক এবং খুলনার ডুমুরিয়া থানার মলমলিয়া গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে মুফাজ্জল হোসেন খান, গাজীপুরের আবু তৈয়ব ওরফে আবু তালেব (৯০), সিলেটের নুরুল হক (৬৩) এবং মুন্সীগঞ্জের আক্কাস আলী (৫০)।

এবারের বিশ্ব ইজতেমায় বিশেষ আকর্ষণ ছিল যৌতুকবিহীন শতাধিক বিয়ে। ইজতেমার দ্বিতীয় দিন শনিবার (১৪ জানুয়ারি) বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী মাওলানা জহির ইবনে মুসলিম সাংবাদিকদের বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ভারতের মাওলানা মো. জোহায়রুল হাসান ইজতেমা ময়দানের পশ্চিম-উত্তর দিকের দোয়া মঞ্চে এ বিয়ে পড়ান। হজরত ফাতেমা (রা.) ও হজরত আলী (রা.)-এর বিয়ের দেনমোহর অনুসারে বিনা যৌতুকে শতাধিক বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের আগে বাদ-আসর হাফেজ মাওলানা জোবায়ের বিয়ের খুতবা প্রদান করেন।

বয়ান শেষে বর-কনের অভিভাবকদের সম্মতিতে বরের উপস্থিতিতে এ বিয়ে পড়ানো হয়। বিয়ে শেষে উপস্থিত দম্পতিদের স্বজন ও মুসল্লিদের মধ্যে খুরমা খেজুর বিতরণ করা হয়।

এদিকে, ইজতেমার এ পর্বে শিল্পনগরী টঙ্গী ইতোমধ্যেই ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের ব্যাকুলতায় দ্বীনের দাওয়াতে মেহনত করার জন্য ইসলামের মর্মবাণী সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা দলে দলে ছুটে আসেন টঙ্গীর তুরাগতীরে। ইজতেমায় মূল বয়ান উর্দুতে হলেও অংশ নেওয়া বিভিন্ন ভাষাভাষী মুসল্লিদের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়। বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা খোরশিদুল হক, ভারতের মাওলানা ইবরাহিম দেওলা।