পবিত্র জমজমের পানির নামে ‘বোতলজাত পানি’, দেশে বিক্রি বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক:নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ১:২০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩০, ২০২৩

সৌদি আরবের পবিত্র জমজম কূপের পানির নামে রাজধানী ঢাকার বায়তুল মোকাররমে দেদার বিক্রি হচ্ছে বোতলজাত পানি। সংগৃহীত ছবি

সৌদি আরবের পবিত্র জমজম কূপের পানির নামে রাজধানী ঢাকার বায়তুল মোকাররমে দেদার বিক্রি হচ্ছে বোতলজাত পানি। কোনো দোকানে প্রকাশ্যে, আবার কোনো দোকানে গোপনে বিক্রি হচ্ছে এই পানি। দাম সাধারণ পানির তুলনায় ৫০ থেকে ৬০ গুণ বেশি। এমতাবস্তায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মার্কেটসহ সারাদেশে পবিত্র জমজমের পানি বিক্রি বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

সোমবার (৩০ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে অংশীজনদের সঙ্গে পবিত্র জমজম কূপের পানি খোলা বাজারে বিক্রি সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

ইসলামী ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে ইসলামে ধর্মীয় ব্যাখ্যা জানার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

তিনি বলেন, অনেকে ফেসবুক পেজে বিজ্ঞাপন দিয়ে জমজমের পানি বিক্রি করছে। এসব পেজ নজরদারিতে নেওয়া হবে। বিটিআরসির মাধ্যমে এসব পেজ বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এর আগে রোববার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মার্কেট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

অভিযানে দেখা যায়, প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ জন আতর-টুপি-গোলাপজল ব্যবসায়ী জমজম কূপের এই পবিত্র পানির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতি লিটার জমজমের পানি বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে তিন হাজার টাকায়। মার্কেটের প্রায় সব দোকানেই ২৫০ মিলি লিটারের জমজমের পানি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা খুচরা দরে বিক্রি করা হয়।

Nagad

ব্যবসায়ীরা জানান, জমজমের পানির পাঁচ লিটারের বোতল সৌদি আরব থেকে আনা হয়। কেউ এটা একসঙ্গে বিক্রি করেন, আবার কেউ খুচরা বিক্রি করেন। খুচরা ২৫০ মিলি লিটারের বোতলেও বিক্রি হয়।

প্রসঙ্গত, জমজম পানির কোনো রঙ বা গন্ধ নেই, তবে এর বিশেষ একটি স্বাদ রয়েছে। সৌদি আরবের বাদশাহ সৌদ বিশ্ববিদ্যালয় জমজম পানি পরীক্ষা করে এর পুষ্টিগুণ ও উপাদানসমূহ নির্ণয় করেছে। এই পানিতে সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, বাইকার্বোনেট, ক্লোরাইড, ফ্লোরাইড, নাইট্রেট এবং সালফেটের উপাদানসমূহ রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, স্বাভাবিক পানিতে আর্সেনিকের গ্রহণযোগ্য মাত্রা প্রতি লিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম। জমজমের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা এর চেয়ে অনেক কম। মক্কায় নতুন প্রতিষ্ঠিত বাদশাহ আব্দুল্লাহ জমজম পানি বিতরণ কেন্দ্রটি উন্নত সুবিধায় সজ্জিত এবং সেখানে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী বোতলজাত করা হয়।দেশটির জিওলজিক্যাল সার্ভের একটি ‘জমজম স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার’ রয়েছে। এই সেন্টারটি এই কূপের পানির মান, গভীরতা, অমøতার মাত্রা এবং তাপমাত্রার দিকে নিয়মিত নজর রাখে।২০১১ সালের ৫ মে বিবিসি এক প্রতিবেদনে দাবি করে লন্ডনে অবৈধভাবে বিক্রি হওয়া জমজমের পানিতে আর্সেনিক দূষণ রয়েছে। কিন্তু এই দাবি তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করে সৌদি আরব। ওই সময়ে দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়, জমজমের পানি পরীক্ষিত এবং আসল জমজম পানিতে কোনো আর্সেনিক নেই।

উল্লেখ্য, আসল জমজম পানি মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র। শুধু সৌদি আরবের একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে এই পানি উৎসরিত হয়। আর এটি কোনোভাবেই বৈধ উপায়ে ওই দেশ থেকে বাইরে বাণিজ্যিকভাবে রপ্তানি সম্ভব নয়। তাই দোকানে বিক্রি হওয়া পানির উৎসের কোনো নিশ্চয়তা নেই।