ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতের ঘটনা বিচার বিভাগের কালো দাগ: হাইকোর্ট

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩:৪৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩

হাইকোর্ট, ছবি- মুস্তাঈন বিল্লাহ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আদালতের এজলাসে বিচারকের বিরুদ্ধে স্লোগান, অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের ঘটনা দেশের বিচার বিভাগে ‘কালো দাগ’ সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। ব্রাহ্মণবাড়িয়া বারের তিন আইনজীবীর উপস্থিতিতে এই মন্তব্য করেন আদালত। পরে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেন।

মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই মন্তব্য করে আদেশ দেন। আদালত বলেন, অবস্থা এমন চলতে থাকলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের নিষিদ্ধসহ কঠোর পন্থা অবলম্বন করতে বাধ্য হবো।

এদিন শুরুতেই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ফকির হাইকোর্টকে বলেন, মাই লর্ড, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিষয়টির পিসফুল ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে। আজ থেকে সব কোর্ট চলছে। আমাদের আরও কিছু কাজ আছে। সবকিছুর সমাধান হবে, আমাদের একমাস সময় দিন।

জবাবে হাইকোর্ট বলেন, কিছুই (ডেভেলপমেন্ট) হয়নি। হাইকোর্টে এটার তারিখের (শুনানির) আগে ওখানে একটু নাড়াচাড়া করেন। আমরা বুঝি। দিন যাচ্ছে আর টাইম নষ্ট করছেন। এটার পরিণতি ভোগ করতে হবে। আপনারা (রুলের) জবাব দিলে দেন, না দিলে না দেন। আমরা আমাদের মতো এগোবো। একটা কোর্টকে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে অচল করে রেখেছেন। সবকিছু আমরা দেখছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বার (আইনজীবী সমিতি) বাংলাদেশের লিগ্যাল ইতিহাসে কালো দাগ সৃষ্টি করেছে, সব আইনজীবীকে কলঙ্কিত করেছে।

এ সময় তিন আইনজীবীর পক্ষে আবারও সময় চাওয়া হলে আদালত বলেন, আইনজীবী সমিতির প্রেসিডেন্ট হোক আর সদস্য হোক, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। বার কাউন্সিল আছে। তবে বার কাউন্সিল কিছু না করলে আমরা এখান থেকেই করবো। প্রতিদিন আমরা খবরের কাগজে চোখ রাখি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বারে কী হচ্ছে। আপনারা কোর্ট বর্জন করছেন করেন, কিন্তু বিচার প্রার্থীরা কোর্টে গেলে তাদের ডিস্টার্ব করা হচ্ছে, থ্রেট দেওয়া হচ্ছে। আপনারা একতরফা (এক্সপার্টি) গেলে আমরাও (এক্সট্রিম) যাবো। কে বারের সভাপতি, কে বিজ্ঞ আইনজীবী তা আমরা দেখবো না। এরা বাংলাদেশে প্রাকটিস (আইন পেশা পরিচালনা) করার যোগ্য কি-না, সেটাও আমরা দেখবো।

এদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুককে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের ঘটনার ৮টি ফেসবুক ও ৫টি ইউটিউব ভিডিও সরানো হয়েছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে বিটিআরসি।

Nagad

এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি বিচারক মোহাম্মদ ফারুককে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যম থেকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। বিটিআরসিকে দ্রুত এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। ওইদিন আদালতে ভিডিও অপসারণের নির্দেশনা প্রার্থনা করেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এ এম) আমিন উদ্দিন ও সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি অ্যাডভোকেট মো: মোমতাজ উদ্দিন ফকির।

উল্লেখ্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন বিচারকের সাথে আইনজীবীদের অশোভন আচরণ ও গালাগালের ঘটনা ঘটে। ওই বিচারকের সাথে আইনজীবীদের অশোভন আচরণের একটি ভিডিও সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

৩ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের এজলাস চলাকালে অ্যাডভোকেট আক্কাস আলী নামে একজন আইনজীবী তাকে আদালত বর্জন করতে বলেন। এ নিয়ে যখন বিচারকের সাথে আক্কাস আলীর বাদানুবাদ চলছিল তখন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ কয়েকজন আইনজীবী গিয়ে বিচারক মোহাম্মদ ফারুককে অশোভন আচরণ ও অঙ্গুলি প্রদর্শন করে এজলাস থেকে নেমে যেতে বলেন। তবে আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর ভূঁইয়ার দাবি, তিনি বিচারকের সাথে অশোভন আচরণ করেননি। ভিডিওটি সম্পাদনা (এডিট) করা।

সারাদিন/১৪ ফেব্রুয়ারি/এমবি