গেমিংয়ের স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি লক্ষ্য এখন বিশ্ববাজার
ভিডিও গেম ইন্ডাস্ট্রি এখন বিশ্বব্যাপী কয়েকশ বিলিয়ন ডলারের বাজার। সেই বাজারের আংশিক দখলে নিতে পারলেও কয়েক বিলিয়ন ডলারের বাজার হতে পারে বাংলাদেশও। সেই বাজার ধরতে হলে স্থানীয়ভাবে বিশ্বমানের গেম তৈরি করতে হবে। সেই সঙ্গে সে গেম ছড়িয়ে দিতে হবে সারা বিশ্বে।
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি ও সফটওয়্যার খাতের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) আয়োজিত ১৭তম ‘বেসিস সফটএক্সপো’তে এক সেমিনারে এসব কথা বলেন আলোচকরা।
বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে এক্সপোর প্রথম দিনে আয়োজিত ‘গেম পাবলিশিং: অ্যান আনট্যাপড পটেনশিয়াল ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব বিষয় তুলে ধরেন অংশগ্রহণকারীরা।
সেমিনারটি সঞ্চালনা করে গেম উদ্যোক্তা সানজার আদনান আলম। এতে আলোচক ছিলেন রবির ভ্যাস বিভাগের কর্মকর্তা আহমেদ আরমান সিদ্দিক, আইসিটি বিভাগের স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর মোবাইল গেম অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, আইসিটি বিভাগের আইডিয়া প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আলতাফ হোসেন, গেমিং উদ্যোক্তা মাহমুদুর রহমান ও আরিফ মোহাম্মদ।
রবির ভ্যাসের কর্মকর্তা আহমেদ আরমান জানান, বাংলাদেশ এখন ৫০ থেকে ৬০ মিলিয়ন ডলারের গেমিং বাজার। যা বিশ্ববাজারের অবস্থার সঙ্গে তুলনা করার মতো নয়। এটির বিশ্ববাজার এখন ৩০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
তিনি বলেন, ‘রবি ফাইভজি সেবা বিস্তৃত করছে, সে সঙ্গে একটি ক্লাউড গেমিং প্ল্যাটফর্ম আনতে কাজ চলছে। সেটা অবশ্যই দেশের বাজারের গেমারদের কথা মাথায় রেখে করা হচ্ছে। দেশের তরুণরা গেমিংয়ে উৎসাহিত হচ্ছে। ফলে গেম তৈরির দিকে আমাদের মনোযোগ জোরালো করতে হবে।’
আইসিটি বিভাগের স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর মোবাইল গেম অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গেমিংকে পেশা হিসেবে নিতে হলে আমাদের পর্যাপ্ত রিসোর্স প্রয়োজন হয়, কিন্তু পরিবার থেকে সেটি হয়তো অ্যাফোর্ড করতে পারে না। ফলে সেটি জানলেও অনেক সময় সম্ভব হয় না।’
তিনি বলেন, ‘আবার কোনো গেম তৈরির ক্ষেত্রে দেখা যায়, গেমের প্রতিটি পার্ট ডিজাইন করা হয় একজনকে দিয়েই। কিন্তু সেটা যদি কয়েকজনকে দিয়ে করা যায়, তবে সেটি আরও উন্নত হবে। আমাদের গেইমিংকে উন্নত করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গেইমিং নিয়ে কাজ করতে হবে। সেজন্য নিজেদের অ্যানিমেটর তৈরি করতে হবে। আমরা ২৮ হাজার জনকে এই প্রকল্পের অধীনে প্রশিক্ষণ দিয়েছি, যারা দেশে গেইমিং নিয়ে নিজেরাও উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন।’
আইডিয়া প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘গেমিং বাজার দেশে এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমাদের সন্তানরা বাইরের দেশের গেম খেলে। আমরা বিশ্ব গেমিং বাজার থেকে অন্তত অল্প হলেও বিলিয়ন ডলারের মার্কেট ধরতে চাই। সেক্ষেত্রে আমাদের তরুণরা কাজ করলে সেই সুযোগ আমাদের ধরা দেবে। গেম রপ্তানি আমাদের করতেই হবে।’
প্লেইনস বাংলাদেশের উদ্যোক্তা ও গেম ডেভেলপার মাহমুদুর রহমান একটি উপস্থাপনার মাধ্যমে দেশের ও বিশ্বের গেমিং সম্পর্কে ধারণা দেন। তিনি জানান, তিনি নিজে ২০১৬ সালে তার কোম্পানি প্লেইনস প্রতিষ্ঠার পর থেকে বেশ কিছু গেম পাবলিশ করেছেন। এটি এখন দিনকে দিন পরিচিতি পাচ্ছে।
আরেক উদ্যোক্তা ও গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেকনো ম্যাজিকের সিইও আরিফ মোহাম্মদ বলেন, ‘২০১৩ সাল থেকে গেম ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করছি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাজারে কাজ করছি। কারণ এখন গেম তৈরিতে খুব স্বল্প খরচে বাংলাদেশে ডেভেলপার পাওয়া যায়। আমাদের ডেভেলপাররা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করেন। কিন্তু আমরা তাদের কাজে লাগাতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘দেশে অনেক তরুণ থাকলেও প্রশিক্ষণের অভাবে তারা ডেভেলপার হয়ে উঠতে পারে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এসব বিষয়ে একটু এগিয়ে এলে এবং সে অনুযায়ী পাঠ্যক্রম সাজাতে পারলে আমরা খুব শিগগিরই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।’
পরে তারা সেমিনারে এসব বিষয় নিয়ে প্যানেল আলোচনা করেন। আলোচনায় প্রায় সব বক্তা একমত হন যে, বাংলাদেশ এখন অন্যতম একটি পটেনশিয়াল গেমিং বাজার। বিশ্বের ৩০০ বিলিয়ন ডলারের বাজার ধরতে হলে আমাদের তরুণ ডেভেলপারদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কোনো বিকল্প নেই। সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে তরুণদের গেম ডেভেলপমেন্টে কাজে লাগাতে হবে।
গেম তৈরির ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের উচিত গেমের স্ক্রিপ্ট, অ্যানিমেশন, ডিজাইন এসব তৈরিতে দক্ষ লোক নিয়োগ করা এবং সেটি আলাদা আলাদাভাবে কাজে লাগানো। একটা ইকো সিস্টেম গড়ে তুলতে পারলে গেম পাবলিশিং আমাদের জন্য বড় বাজার ও বড় বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎস হবে।
এ ছাড়া তারা জানান, দেশে অন্যতম সমস্যাগুলোর মধ্যে প্রথম হচ্ছে গেমে কোনো মনিটাইজেশন পাওয়া যায় না। তাই অনেকেই স্থানীয় বাজারে গেম প্রকাশ করতে অনীহা প্রকাশ করেন। এর বাইরেও বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের কমিউনিকেশন, প্রবলেস সলভিং গ্যাপ দূর করতে হবে।
চার দিনব্যাপী বেসিস সফটএক্সপো ২০২৩ চলবে আগামী রোববার পর্যন্ত। সব ধরনের দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকছে এই আয়োজন। দর্শনার্থীরা যাতে সহজেই বেসিস সফটএক্সপোতে যাতায়াত করতে পারেন সেজন্য বিশেষ শাটল বাস সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া রয়েছে গেমিং জোন, বিজনেস লাউঞ্জ, ফুড কোর্ট ও কনসার্ট।
এবারের বেসিস সফটএক্সপোর প্ল্যাটিনাম স্পন্সর হিসেবে রয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেড। গোল্ড স্পন্সর হিসেবে রয়েছে হুয়াওয়ে। সিলভার স্পন্সর হিসেবে রয়েছে রবি, পাঠাও এবং ফাইবার অ্যাট হোম। এছাড়া ফাইভজি পার্টনার হিসেবে রয়েছে গ্রামীণফোন। আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (আইবিপিসি) এর সহযোগিতায় আয়োজিত এবারের বেসিস সফটএক্সপোর পেমেন্ট পার্টনার হিসেবে বিকাশ, ইন্টারনেট পার্টনার হিসেবে আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেড এবং অ্যাসোসিয়েট পার্টনার হিসেবে রয়েছে দারাজ, বিডিজবস ডটকম ও ই-কুরিয়ার।
এবারের বেসিস সফটএক্সপো প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে। আগ্রহীরা বেসিস সফটএক্সপোর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট (https://softexpo.com.bd/) থেকে বিনামূল্যে নিবন্ধন করে প্রদর্শনীতে অংশ নিতে পারবেন।