বেকসুর খালাস পেলেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন, দ্রুত দেশে ফিরতে চান

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:১২ অপরাহ্ণ, মার্চ ১, ২০২৩

ফাইল ছবি

ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বেকসুর খালাস পেয়েছেন। ফলে তার দেশে ফিরতে আর কোনো আইনি বাধা নেই। ভারতের আসামের এক আদালতের আপিল বিভাগ গতকাল মঙ্গলবার এ রায় দিয়েছেন।

আজ বুধবার (১ মার্চ) বিকেলে ভারতের শিলং থেকে তিনি নিজেই এ কথা জানান। তিনি বলেন, গতকাল মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ভারতের শিলংয়ের জজ কোর্টের রায়ে আমি বেকসুর খালাস পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ।’

কবে নাগাদ দেশে ফিরবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বহুদিন ধরেই দেশে ফিরতে চাই। কারণ বাংলাদেশ আমার জন্মস্থান এবং সবচেয়ে প্রিয়। আমি দেশে ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি। ভারত সরকার আমাকে যখনই দেশে পাঠিয়ে দেবে বা ব্যবস্থা নেবে তখনই আমি দেশে ফিরব।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতির উত্তাল সময়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ ঢাকার উত্তরার একটি বাড়ি থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে অচেনা মুখোশধারী অপহরণকারীরা সালাহউদ্দিন আহমদকে চোখ বেঁধে গুপ্ত স্থানে তুলে নিয়ে যায়। তখন থেকে দীর্ঘ ৬৩ দিন অজ্ঞাত স্থানে গুম অর্থাৎ নিখোঁজ থাকার পর একই বছরের ১১ মে সালাহউদ্দিন আহমেদকে সর্বপ্রথম মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ের গলফ লিংক মাঠে পাওয়া যায়। সেখান থেকে তাকে প্রথমে শিলং মানসিক হাসপাতালে, পরে শিলং সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং পরে শিলংয়ের বিশেষায়িত হাসপাতাল নিমগ্রিসে ভর্তি করানো হয়। এরপর মেঘালয় রাজ্যের পুলিশ ২০১৫ সালের ৩ জুন ভারতে অবৈধ প্রবেশের অভিযোগ এনে বৈদেশিক নাগরিক আইনের ১৪ ধারায় সালাহউদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে এবং তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে প্রথমে হাসপাতালে চিকিৎসা ও পরে শিলং জেলে পাঠায়।

শিলং শহর ছেড়ে না যাওয়ার শর্তে আদালত পরে সালাহউদ্দিনকে জামিন দেন। তখন থেকে নির্বাসিত অবস্থায় দীর্ঘ ৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে খাসিয়া খ্রিষ্টান অধ্যুষিত এলাকা শিলং শহরে বিষ্ণপুর ‘সানরাইজ গেস্ট হাউজ’ নামের একটি দোতলা ভাড়াবাড়িতে তিনি বসবাস করে মামলা পরিচালনা করে আসছেন।

মামলার পর মেঘালয়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে সালাহউদ্দিনকে প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত করে ২০১৫ সালের ২২ জুলাই চার্জশিট দেওয়া হয়। এতে ‘সালাহউদ্দিন আহমদ বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা বিভিন্ন মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এড়াতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়’।

Nagad

ওই মামলায় ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর সালাহউদ্দিনকে বেকসুর খালাস দিয়ে শিলং আদালতের প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট ডিজি খার সিং রায় ঘোষণা করেন। প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের ওই রায়ে সালাহউদ্দিন আহমদকে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের মাধ্যমে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে দ্রুততম সময়ে সমস্ত রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে হস্তান্তর করার জন্য নির্দেশ দেন বিচারক।

আরও জানা যায়, সালাহউদ্দিন আহমেদ আদালতের রায় অনুযায়ী সে দেশের রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে দেশে ফেরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঠিক তখনই, ২০১৮ সালের ২৭ অক্টোবর সালাহউদ্দিন শিলং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের একটি নোটিশ পান। নোটিশে সালাহউদ্দিন নিম্ন আদালত থেকে বেকসুর খালাস পাওয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেছে, উল্লেখ করে আপিল মামলায় জেলা ও দায়রা জজ তাকে আদালতে হাজির হতে বলা হয়। এরপর সালাহউদ্দিন আহমদ শিলং জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল মামলায় যথারীতি হাজিরা দিয়ে আসছিলেন।

সালাহউদ্দিন আহমেদ ১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন। এরপর প্রশাসনের চাকরি ছেড়ে তিনি রাজনীতিতে আসেন। এরপর ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। অষ্টম সংসদ নির্বাচনের পর চারদলীয় জোট বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার গঠন করলে সালাহউদ্দিন আহমদ ২০০১ সালের ১০ অক্টোবর যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ভারতে আটকের সময় তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। ভারতে আটক থাকা অবস্থায় তিনি ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হন।