‘পেশাজীবীদের শিক্ষা কার্যক্রমেই ঝুঁকি হ্রাসের বিষয়ে গুরত্ব দিতে হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক:নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ৯:১৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ১১, ২০২৩

প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের ভূমিকম্পের মতো অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে শিক্ষা কার্যক্রমেই গুরত্ব দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

আজ শনিবার (১১ মার্চ) রাতে ইন্সটিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইবি) এর উদ্যোগে আয়োজিত “ভূমিকম্পজনিত দূর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস: প্রস্তুতি ও করণীয়” শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এ মন্তব্য করেন।

ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “আমাদেরকে সমস্যার গভীরে যেতে হবে। হালকার ওপর দিয়ে হাঁটলে আর হবে না। আমাদের সকল কর্তৃপক্ষের কাছে এখন পর্যাপ্ত যান-যন্ত্রপাতি দেওয়া আছে। দুর্যোগ হলে কোথা থেকে যান-যন্ত্রপাতি আসবে সেজন্য আমাদেরকে এখন আর অপেক্ষা করতে, বসে থাকতে হয় না। আমরা সেদিক থেকে অনেকদূর এগিয়েছি। এখন আমাদের করণীয় হবে — মূল সমস্যা অনুধাবন করে ঝুঁকি হ্রাসে শিক্ষা কার্যক্রমে এ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া। সেভাবেই আমাদের পেশাজীবীদেরকে তৈরি করতে হবে। দায়িত্ব সঠিকভাবে বণ্টন করতে হবে এবং তা তদারকি করে, পরিপালন করে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে।”

শিক্ষা কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় কিছু বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ না করায় সবকিছুতেই পরামর্শক নিয়োগ দিতে হয় বলে মন্তব্য করে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “যদি ভুল হয় তাহলে সংশোধন করে দিয়েন। এ পর্যন্ত যত প্রকৌশলীকে (সিটি করপোরেশনে) নিয়োগের জন্য আমি সাক্ষাতকার নিয়েছি, তারা আমাকে বলেছে — বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের পাঠ্যক্রমে স্টাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। স্টাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং একটি আলাদা বিশেষায়িত শিক্ষা। শুধু রাস্তা নির্মাণ, নর্দমা নির্মাণের সাথে স্টাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং এক জিনিস নয়। চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেমন আলাদা আলাদা বিশেষজ্ঞ হয়, আমি মনে করি — প্রকৌশল শিক্ষায়ও তেমনি আলাদা আলাদা বিশেষজ্ঞ হওয়া উচিত। শুধু মাস্টার্স পর্যায়ে নয়, বিএসসি শেষ করে যেহেতু পেশাজীবী হচ্ছে, সুতরাং, বিএসসি পর্যায়েই সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যাতে ভবিষ্যতে সে স্টাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বিশেষজ্ঞ হতে পারেন। (গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে) আমরা দেখি, কোনও স্টাকচারাল সলিউশন প্রয়োজন হলে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আমরা সে জিনিসটা পাই না। ফলে আমাদেরকে পরামর্শক নির্ভর হতে হয়। আমরা সবকিছুতেই এখন পরামর্শক নির্ভর। একটা সেতু নির্মাণ করব, পরামর্শক লাগবে। একটা চারতলা ভবন নির্মাণ করব, পরামর্শক লাগবে!”

দুর্ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট নন এমন অনেকেই ক্যামেরায় মুখ দেখাতে র্ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে যান বলে মন্তব্য করে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “ঘটনা ঘটে গেলে দায়িত্ব কার ওপর দিয়ে পার পাওয়া যাবে সেটা নিয়েই আমরা ব্যস্ত থাকি। দুর্যোগ হলে, দুর্ঘটনা ঘটলে সেখানে উদ্ধারকর্মীরা যেতে পারে না। কারণ উৎসুক মানুষ সেলফি তোলার জন্য এতই ব্যস্ত থাকে যে, সেখানে খালি করে উদ্বার করতে তাদের হিমশিম খেতে হয়। এটা (উদ্বার কাজ) কি ফায়ার সার্ভিস করবে? নাকি সিটি করপোরেশন, রেড ক্রিসেন্ট, র‍্যাব, পুলিশ করবে? এমনকি যাদের দায়িত্ব না তারাও সেখানে হাজির হয়ে যান। শুধু সাধারণ মানুষ না, কর্তৃপক্ষসহ। যে কর্তৃপক্ষের সেখানে কোনও দায়িত্বই নেই, সে কর্তৃপক্ষও সেখানে হাজির হয়ে গেলেন। এই পরিস্থিতিতে আমরা চলছি। সবাই ক্যামেরা পেলে দু’টো কথা বলতে পারলেই মনে করে, দায়িত্ব হাসিল হয়ে গেলো!”

আইবি’র সহকারী সাধারণ সম্পাদক রনক আহসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আইবি’র সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. নুরুল হুদা, আইইবি’র পুরকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার মুনাজ আহমেদ নূর, আরবান রিজিলিয়েন্স প্রজেক্ট বাংলাদেশের ন্যাশনাল কনসালটেন্ট বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ খান, আরবান রিজিলিয়েন্স প্রজেক্টের (রাজউক পার্ট) প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুল লতিফ হেলালী এবং আইবি’র সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহাদাৎ হোসেন শিবলু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

Nagad

সেমিনারে বক্তারা বলেন, “ভূমিকম্পের ঝুঁকি রোধে প্রস্তুতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে নগরের সঠিক পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। ভবন নির্মাণে সাবধানতা অবলম্বন করলে এবং ভবন নির্মাণে নীতিমালা মেনে চললে ভূমিকম্পে ক্ষতি কমানো সম্ভব৷ এছাড়া সরকারের সকল সংস্থাগুলোর নজরদারি জোরদার করাও প্রয়োজন। ভবন মালিকেরা সরকারকে সহযোগিতা করলে ভূমিকম্পের ক্ষতি কমানো সম্ভব৷ ভূমিকম্পের উপর প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতাল নির্মাণে অবশ্যই ভূকম্পন সহনীয়ভাবে নির্মাণ করতে হবে।”

সেমিনারে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ড. ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী আহমেদ আনসারি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

সেমিনারে আইইবি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার এস এম মঞ্জুরুল হক মঞ্জু, ইঞ্জিনিয়ার মোঃ নুরুজ্জামান, খন্দকার মঞ্জুর মোর্শেদ, ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম হাজারী, ঢাকা সেন্টারের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোল্লা মো. আবুল হোসেন, সম্পাদক কাজী খায়রুল বাসার, ইঞ্জিনিয়ার নজরুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার সৌমিত্র কুমার, ইঞ্জিনিয়ার ওয়াহিদ হুদাসহ আইইবি’র বিভিন্ন বিভাগ ও সেন্টারের প্রকৌশলীরা উপস্থিত ছিলেন।