বাদ জুমা দাফন করা হবে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে আগামীকাল ঢাকার সাভারে দাফন করা হবে। শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) জুমার নামাজের পর জানাজা শেষে তাকে সমাহিত করা হবে।

বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ছেলে বারিশ চৌধুরী এই কথা জানান।

জানাজা শুরুর আগে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ছেলে বারিশ চৌধুরী বলেন, আমার বাবার সারা জীবনের ইচ্ছা ছিল যে, তার দেহ মেডিকেল সায়েন্সের জন্য দান করা হোক। আমরা তার সন্তান হিসেবে তার এই আশাটা পূর্ণ করতে চেষ্টা করেছিলাম। ঢাকা মেডিকেল কলেজ যেখানে তিনি পড়েছিলেন, তা-না হলে গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল, যেটা তিনি গড়ে তুলেছিলেন, সেখানে দেহ দান করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দুই প্রতিষ্ঠান থেকেই আমরা শুনেছি, এমন কেউ নেই যিনি আমার বাবার মরদেহে ছুরি লাগাতে পারবেন।

সম্মান থেকেই এমনটি (মরদেহে ছুরি লাগাতে অস্বীকৃতি) বলা হয়েছে জানিয়ে বারিশ চৌধুরী বলেন, আমরা খুব করে চেয়েছিলাম, কারণ তিনি সারা জীবন একটি উদাহরণ হতে চেয়েছিলেন। তার এই শেষ আশাটাও আমরা পূর্ণ করতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু যখন সম্মান থেকে, ভালোবাসা থেকে আমাদের বলা হচ্ছে যে, কেউ উনার মরদেহে হাত দিতে রাজি নন। এরপর তো আমাদের আর কিছু করার থাকে না। আমরা চাচ্ছি, সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র যেখানে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল গড়েছেন, যেখানে এত বছর ধরে কাজ করেছেন, এ দেশের মানুষের জন্য, স্বাস্থ্যসেবার জন্য বিশেষ করে গরিব মানুষের জন্য কাজ করেছেন, সেখানে তাকে আমরা দাফন করবো।

বারিশ চৌধুরী আরও বলেন, আমার বাবা কোনো অন্যায় বা কাউকে দিয়ে থাকলে মাফ করে দেবেন। কারও কাছে কোনো ঋণ করে থাকলে, সেটা আমাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করবেন। আমার বাবা ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের পরেও তার যুদ্ধ শেষ হয়নি। তার যুদ্ধ তার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত চলেছে।‌ তার কাছে সবচেয়ে বড় ছিল দেশ ও দেশের মানুষ এবং মানুষের অধিকার। আর এজন্য তিনি সারাজীবন লড়াই করেছেন। সেজেছে আমরা সবাই যেন এই জিনিসটির জন্য লড়াই করি।

এর আগে সকাল ১০টা ৫ মিনিটে বারডেম হাসপাতালের হিমঘর থেকে ফ্রিজিং ভ্যানে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয়। সেখানে শিক্ষক, চিকিৎসক, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দুপুর আড়াইটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আগামীকাল শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ১০টায় তার মরদেহ নেওয়া হবে সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে। বাদ জুমা সেখানে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাত ১১টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ইন্তেকাল করেন। গুরুতর অসুস্থ হয়ে তিনি ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ৮১ বছর বয়সী জাফরুল্লাহ চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে কিডনিসহ নানা রোগেও ভুগছিলেন।

সারাদিন/১৩ এপ্রিল/এমবি