সাংবাদিক নাদিম হত্যা: এখনও গ্রেপ্তার হয়নি ১৭ আসামি

জামালপুর সংবাদদাতাজামালপুর সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ৪:০৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ১১, ২০২৩

ছবি- সংগৃহীত

জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যা মামলার ২৫ দিন পার হলেও এজাহারে থাকা ২২ আসামির মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি ১৭ আসামিকে এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ।

গত ১৭ জুন সাংবাদিক নাদিম হত্যার ঘটনায় ২২ জনের নামে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন তার স্ত্রী মনিরা বেগম। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন মোট ১৬ জন আসামি। এর মধ্যে প্রধান আসামি সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের বরখাস্তকৃত চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে বাবুসহ চারজন আদালতে বিচারকের কাছে নিজের দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি আসামিরা বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড শেষে কারাগারে রয়েছেন ১৬ জন।

সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলায় এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন প্রধান আসামি বাবুর ছেলে রিফাত, সহযোগী শামিম খন্দকার, রুবেল মিয়া, লিপন মিয়া, স্বপন মন্ডল, শেখ ফরিদসহ এজাহারভুক্ত ১৭ আসামি।

মামলা হওয়ার প্রায় ২৫ দিন পরও এজাহারভুক্ত ১৭ আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রকাশ করেছেন নিহত সাংবাদিক নাদিমের পরিবার। নাদিমের মামা বাবুল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, “পুলিশের ভূমিকা সন্দেহজনক। পুলিশ তো আসামি ধরছে না। ২৫ দিন পেরিয়ে গেল, প্রশাসন নির্বাক। কার ছত্রছায়ায় যে কী হচ্ছে, সেটা তো বুঝতে পারছি না। আমাদের জীবনের নিরাপত্তা চাই। আসামিদের না ধরা পর্যন্ত আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নেই।”

নিহত নাদিমের মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত গণমাধ্যমকে বলেন, “আমরা সবাই ক্ষুব্ধ। ২৫ দিনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৭ আসামিকে এখনও আইনের আওতায় আনা হয়নি। তারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে, বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা ক্ষুব্ধ। আমাদের নিজেদের জীবনের নিরাপত্তাও নেই।”

সাংবাদিক নাদিমের শ্বশুর মুক্তিযোদ্ধা মঞ্জুরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, “একজন যুদ্ধাপরাধী ননীর ছেলে রাকিবের হাতে খুন হয়েছে সাংবাদিক নাদিম। ননীর ছেলে হাতে যদি আমার ছেলে সাংবাদিক নাদিমকে হত্যার সাহস পায়, তাহলে আমি মুক্তিযোদ্ধা হয়ে কী পেলাম? আসামিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি তাদের ধরার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।”

Nagad

বকশীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহিন আল আমিন বলেন, “মামলাটি যখন ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর হল, তখন আমরা আশাবাদী ছিলাম। পুলিশের চেয়ে ডিবি আরও ভালো ভূমিকা পালন করবে এবং খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সব আসামি গ্রেপ্তার হওয়ার একটি সুযোগ হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা এখনো ভালো কোনো খবর পাইনি। আমাদের কষ্ট ভেতরে আছেই। এখনো আমরা আশঙ্কাবোধ করছি যে তারা গ্রেপ্তার হবে কি হবে না।”

জামালপুর ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরমান আলী গণমাধ্যমকে বলেন, “আসামিদের গ্রেপ্তারে কয়েকটি টিম কাজ করছে। আমরা রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছি এই আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে পারব বলে আশা করছি।”

সাংবাদিক রব্বানি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন- প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম বাবু, রেজাউল করিম, মো. মনিরুজ্জামান, মো. মিলন মিয়া, মো. গোলাম কিবরিয়া, জাকিরুল ইসলাম, শহিদুর রহমান, মো. তোফাজ্জল, আয়নাল হক, মো. কফিল উদ্দিন, মো. ফজলু মিয়া, মো. মুকবুল, মো. ওহিদুজ্জামান, নয়ন মিয়া, আন্দোলন সরকার ও শামীম গাজী।

তাদের মধ্যে মামলার এজাহারে নাম রয়েছে- মাহমুদুল আলমবাবু, রেজাউল করিম, মো. মনিরুজ্জামান, মো. মিলন মিয়া , মো. গোলাম কিবরিয়ার। এই পাঁচজন ছাড়া বাকি আসামিদের নাম এজাহারে নেই। অর্থাৎ এজাহারে থাকা ২২ জনের মধ্যে ৫ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পেরেছে, বাকি ১৭ জনকে পুলিশ এখনও ধরতে পারেনি।

উল্লেখ্য, গত ১৪ জুন রাতে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে জামালপুরের বকশীগঞ্জের পাটহাটি এলাকায় হামলার শিকার হন সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম। এরপর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

সারাদিন/১১ জুলাই/এমবি