হাওরে বুয়েট শিক্ষার্থীসহ আটক ৩৪: ‘নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগ হাস্যকর’

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৯:৫১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১, ২০২৩

ঢাকা থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরে গিয়ে ‘নাশকতার পরিকল্পনা করা হচ্ছে’ পুলিশের এমন অভিযোগকে ‘হাস্যকর’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) আটক শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। তারা বলছেন, এসব শিক্ষার্থীদের অযথা হয়রানি করা হয়েছে। বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ তারপরও তাদের এর সঙ্গে জড়ানো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

মঙ্গলবার বিকেলে বুয়েটের শহীদ মিনারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বুয়েটের ছাত্র আলী আম্মার মৌয়াজের ভাই আলী আহসান জুনায়েদ।

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাদের অভিভাবকরা করছেন, আমাদের সন্তানরা নিরপরাধ। তারা কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়, এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

তিনি বলেন, ‘গত ২৯ জুলাই এই শিক্ষার্থীরা সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে যায়। দীর্ঘক্ষণ তাদের ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রায় তিন ঘণ্টা পর রাত ১০টার দিকে হঠাৎ ফোন করে আমাদের অনেকেই তারা নিজের ও অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর জানাতে বলে। তারা জানায়, হাওরে নৌকাভ্রমণের সময় জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে পুলিশ তাদের আটক করে তাহিরপুর থানায় নিয়ে এসেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, এরপর পরিচয়পত্রের নম্বর দেওয়ার পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে। তারা ফোনে শুধু এটুকুই বলতে পেরেছে। তাদের ফোন নিয়ে নেওয়া হয়। স্থানীয় পুলিশ সুপার ও ওসির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা পারা যায়নি।’

জুনায়েদ বলেন, ‘অনেক উদ্বেগের পরে সোমবার বিকেলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে আমরা জানতে পারি, তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে। তারা নাকি নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার জন্য সেখানে গেছে! এমন অকল্পনীয় অভিযোগ শুনে আমরা যারপরনাই আশ্চর্যান্বিত হই। আমরা মনে করি, এ রকম হাস্যকর ও বানোয়াট অভিযোগ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দুরভিসন্ধিমূলক। স্থানীয় এসপি ও ওসিকে ফোন দেওয়ার পাশাপাশি আমরা রাত থেকে বুয়েটের মাননীয় উপাচার্যকেও ফোন করেছি অসংখ্যবার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা কারও সঙ্গেই যোগাযোগে সক্ষম হইনি। মঙ্গলবার (আজ) বিকেলে আমাদের হাতে পৌঁছানো মামলার বিবরণীতে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ঘটিয়ে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, জানমালের ক্ষতিসাধন, রাষ্ট্রদ্রোহের কর্মকাণ্ডসহ ধর্মীয় জিহাদ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অপরাধ ইত্যাদি অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই পুরো বিষয়টি আমাদের প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।’

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, কোনো ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে আমাদের সন্তানেরা জড়িত নয়। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলছি, তারা সাধারণ শিক্ষার্থীমাত্র। কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে এমন ভয়ংকর মামলা সাজানো হলো, তা আমাদের বোধগম্য নয়।’

Nagad

গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন অভিভাবকেরা। সন্তানদের দ্রুত জামিন দেওয়া ও মামলা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য বিচার বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে দাবি জানান তারা।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে সুনামগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার বুয়েট ছাত্র এ টি এম আবরার মুহতাদীর মা ওয়াহিদা নাসরিন, হাইছাম বিন মাহবুবের মা ফাতেমা বেগম, আফিফ আনোয়ারের বাবা আনোয়ারুল হক, সাকিব শাহরিয়ারের বাবা জামাল উদ্দিন চৌধুরী, বাকি বিল্লাহর ভাই আরিফ বিল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনের পর চলে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তাঁরা সবাই নিজেদের সন্তান ও স্বজনদের নিরপরাধ বলে দাবি করেন।

গত রোববার বিকেলে টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে ৩৪ জনকে আটক করা হয়। সোমবার বিকেলে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পুলিশ বাদী হয়ে তাহিরপুর থানায় একটি মামলা করে। এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিকেলে তাদের আদালতে হাজির করলে আদালতের বিচারক ৩২ জনকে কারাগারে ও দুজন কিশোর হওয়ায় তাদের কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পুলিশের দাবি, গ্রেপ্তার সবাই ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী।