পোশাক প্রস্তুতকারক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে লাভজনক: জরিপ
বিশ্বের তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে লাভজনক-এমন তথ্য উঠে এসেছে মার্কিন ফ্যাশন মালিক সমিতির এক গবেষণা জরিপে। যেখানে দেখা যায়, দাম বিবেচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর কাছে তৈরি পোশাকের সবচেয়ে আকর্ষণীয় উৎস বাংলাদেশ। বিশ্বের তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে লাভজনক। এক্ষেত্রে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম পিছিয়ে পড়েছে।
চলতি মাসে প্রকাশিত ইউনাইটে স্টেটস ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (ইউএসএফআইএ) জরিপের তথ্য অনুযায়ী, গতবছর (২০২২ সালে) যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের জন্য তৈরি পোশাকের শীর্ষ সরবরাহকারী হিসেবে এশিয়ার অবস্থান অক্ষুণ্ন আছে। যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিকারক শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে সাতটিই এশিয়ায়। বাংলাদেশের পোশাক সস্তা হলেও যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক দেশের শীর্ষে আছে চীন, ভিয়েতনাম দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে। বাংলাদেশর পর ভারতের অবস্থান।
ইউএসএফআইএর শীর্ষ জরিপ প্রতিবেদন ‘২০২৩ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি বেঞ্চমার্কিং স্টাডি’ আগস্টের প্রথম সপ্তাহে প্রকাশিত হয়। গত বছর এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ৩০টি ফ্যাশন ব্র্যান্ডের নির্বাহীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে এই জরিপ করা হয়েছে।
এতে দেখা যায়, সামাজিক ও শ্রম বিষয়ে উপযুক্ত পরিবেশ বিবেচনায় বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর মান বেশ উন্নত হয়েছে। রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে সামাজিক দায়িত্বশীলতা চর্চার উন্নয়নে অংশীদার সকল পক্ষের সামষ্টিক প্রচেষ্টার ফলে এই উন্নতি হয়েছে বলে জরিপে উঠে এসেছে।
চীন, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় তৈরি পোশাক শিল্পের সার্বিক কর্মপরিবেশ নিয়ে অনেক আপত্তি উঠেছে। এইসব বিষয়ে গত দুই বছরে বাংলাদেশ বেশ উন্নতি করেছে। দামের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানের দিক থেকে বাংলাদেশের রেটিং ২০২২ সালের ২ থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে ২.৫ হয়েছে।
অন্যদিকে ভিয়েতনামের অবস্থানের অবনতি হয়েছে, রেটিং ৩.৮ থেকে কমে ৩.৫ হয়েছে। মূল্যস্ফীতি ও বেতন বাড়ার কারণে ভিয়েতনাম থেকে কাপড় কেনা আগের বছরের চেয়ে অলাভজনক হয়েছে বলে উত্তরদাতারা জানান। দামে অলাভজনক হলেও ভিয়েতনাম ও চীন থেকে সহজে পোশাক আমদানি করা যায়। বিশেষ করে কোভিড মহামারীর পর বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের পর অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
চীন ও ভিয়েতনাম থেকে তৈরি পোশাক কেনার ক্ষেত্রে জিনজিয়াং উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে নিপীড়নমূলক শ্রম ব্যবহারের সম্পর্ক থাকতে পারে বলে অনেকেই উদ্বেগ দেখিয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ঝুঁকি হ্রাসে চীনের উপর থেকে নির্ভরশীলতা কমানোর পরিকল্পনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন কোম্পানিগুলো।’
সব মিলিয়ে চীনের বাইরে নতুন উৎস ও সুবিধার খোঁজে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন কোম্পানিগুলো। তাঁরা আগামী দুই বছরে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ ও ভারত থেকে তৈরি পোশাক কেনা বাড়াবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
গবেষণা বলছে, ফ্যাশন কোম্পানিগুলো সাধারণত ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে সুষমভাবে পোশাকের ক্রয়াদেশ দেয়।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, টাকার অঙ্কে ২০২৩ সালের প্রথম পাঁচ মাসে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পোশাক রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কমে ১৮ দশমিক ৩ শতাংশে নেমেছে, যেটা ২০১৯ সালে প্রায় ৩০ শতাংশ ছিল।
অন্যদিকে চীন ছাড়া এশিয়ার শীর্ষ সরবরাহকারী পাঁচটি দেশ (ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও কম্বোডিয়া) থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি নতুন উচ্চতায় উঠেছে। ২০১৯ সালের ৩৭ দশমিক ১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ হয়েছে। সূত্র: আজকের পত্রিকা।
সারাদিন. ২১ আগস্ট