কুড়িয়ে পাওয়া বাচ্চা পেতে ৭ জনের আবেদন

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: ৭:৩৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৮, ২০২৩

জন্মের কয়েক ঘণ্টা পর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ছেলে। সেই শোকেই দিন কাটছিলো সোনিয়া খাতুনের। ছেলের শোকে প্রায়-পাগল হয়ে গিয়েছিলো মা সোনিয়া খাতুন। ছেলেকে হারিয়ে রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছে নবজাতক এক কন্যা শিশুকে। এখন তাকে নিয়ে মৃত সন্তানের শূন্য স্থান পূরণ করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার কুশনা গ্রামে। শিশুটিকে পেয়ে সোনিয়া খাতুনের পরিবারে এখন চলছে খুশির জোয়ার।

সরেজমিনে কুশনা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সোনিয়ার চাচাতো ভাইয়ের বাড়িতে পরম মমতায় শিশুটিকে কোলে নিয়ে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ৪৩ দিন আগে ছেলে হারানো মা সোনিয়া খাতুন। কখনও বসে আবার কখনও হেটে বাচ্চাটিকে আদর করছেন। সদ্যভূমিষ্ট ছেলে মারা যাওয়ার পর কুড়িয়ে পাওয়া এই মেয়েটিকে নিয়ে পূরণ করছেন ছেলে হারানোর বেদনা। বাচ্চাটিকে এক নজর দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে নারী পুরষ আসছেন তাদের বাড়িতে। কারো যেন নজর না লাগে সে কারণে বাচ্চাটির কপালে কালো টিপ পরিয়ে দিচ্ছেন সোনিয়া।

পরিবার থেকে জানা যায়, ঝিনাইদহ জেলা কোটচাঁদপুর উপজেলার কুশনা ইউনিয়নের কুশনা গ্রামের মোঃ বকুল মণ্ডলের তিন মেয়ের মধ্যে সোনিয়া খাতুন বড় মেয়ে। গত ৭ বছর আগে একই উপজেলার বলুহার রামচন্দ্রপুর গ্রামের আব্দুল সালামের ছেলে মোঃ রানা হামিদের সাথে তার বিবাহ হয়। তাদের পরিবারে আবির নামে ৬ বছরের একটা ছেলে রয়েছে। সোনিয়ার পেটে বাচ্চা রেখে স্বামী রানা প্রবাসে ( মালায়েশিয়া ) গেছেন পরিবারের অস্বচ্ছলতা কাটাতে। গত সেপ্টম্বরে কোটচাঁদপুর মাহাবুবা ক্লিনিকে সিজারের মাধ্যমে পুত্র সন্তান হয়। কিন্তু নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে ৯ ঘণ্টার ব্যবধানে বাচ্চাটি মারা যায়। সেই নাড়ী ছেড়া সন্তান হারানোর সেই শোক কাতর তিনি। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) ভোর সকালে মেজ বোন জিনিয়াকে নিয়ে হাটতে বের হয়েছিলেন। হাটতে গিয়ে দেখতে পান রাস্তার পাশে কাপড়ে মোড়ানো মেয়ে বাচ্চা। তখন সেই বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নেন সোনিয়া।

সোনিয়ার চাচাতো ভাই পলাশ জানান, মেয়ে শিশুটিকে কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাচ্চাটিকে আবারো বাড়িতে নিয়ে আসে সোনিয়া। নবজাতক শিশুটিকে পেয়ে খুশি সোনিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা।

সোনিয়ার চাচাতো ভাইয়ের বউ মাহফুজা জানান, আল্লাহ সোনিয়ার কোল থেকে ছেলে বাচ্চা নিয়ে নেওয়ার পর কন্যা সন্তান দিয়েছে। সোনিয়া সন্তান হারা, বাচ্চাটি মা হারা, বাচ্চাটি সোনিয়ার বুকের দুধও পান করছে।

প্রতিবেশীরা জানান, সোনিয়ার কোল শূন্য ছিলো। আল্লাহ আবারো তার কোল ভরে দিয়েছে।

Nagad

সোনিয়া খাতুন বলেন, কোটচাঁদপুর-তালসার সড়ক ধরে হাটতে হাটতে দেখতে পায় কাপুড়ে মোড়ানো কিছু পড়ে আছে। তখন দাড়িয়ে কাপড় খুলে দেখতে পায় একটি বাচ্চা। কোথা থেকে এলো কিভাবে এলো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তখন বাচ্চাটি জীবিত না মৃত দেখার পর দেখি জীবিত আছে। তখন কোলে করে বাড়িতে নিয়ে আসি। বাড়িতে আনার পর বাচ্চাটির গায়ের ময়লা পরিষ্কার করি, বুকের দুধ দিই। এরিমধ্যে জানাজানি হয়ে যায় বাচ্চাটির কথা। এরপর বাসায় পুলিশ আসে এবং বাচ্চাটিকে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে। আমি ওকে কোটচাঁদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। ডাক্তার বাচ্চাটিকে দেখেন এবং বলেন বাচ্চাটি সুস্থ আছে। ডাক্তার দেখানো হয়ে গেলে বাড়িতে চলে আসি। বাড়িতে আসার পর জানতে পারি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কোটচাঁদপুর থানার ওসি ও সমাজসেবা কর্মকর্তা সবাই বাচ্চাটিকে অন্য জায়গাই দেওয়ার জন্য বলছে।

কুশনা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান বাবুল হোসেন বলেন, বাচ্চাটি সুস্থ আছে। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কোটচাঁদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ও সমাজসেবা অফিসার সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাচ্চাটিকে একটা নিরাপদ ও স্বচ্ছল পরিবার দেখে তাদের হেফাতজে দিবেন। ছোট্ট নবজাতককে কিভাবে কার কাছে দিবেন সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। তবে আমাদের দাবি কিছুদিন হলো সোনিয়ার একটা ছেলে বাচ্চা মারা গেছে। বাচ্চাটি যদি সোনিয়ার কাছে থাকে তাহলে বাচ্চাটি লালন-পালন করতে সমস্য হবে না। তার কাছে থাকলেই ভালো হবে।

কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মেডিকেল অফিসার ডা: তারণী পাশা জানান, শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতালে আসছিলো ওই পরিবার, তাকে ভালো ভাবে দেখা হয়েছে। শিশুটির শারীরিক অবস্থা ভালো ছিলো ।

কোটচাঁদপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম জানান, শিশুটিকে হস্তান্তরের জন্য বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর ) আবেদন আহ্বান করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৭জন আবেদন করেছেন। এখনো বেশকিছু আবেদন আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি। আবেদন নেওয়া শেষ হলো উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের a-এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে শিশুটিকে কার কাছে দিলে ভালো হয়।