সচেতনতায় স্ট্রোক প্রতিরোধ সম্ভব, বিশ্ব স্ট্রোক দিবসে চিকিৎসকরা

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৭:০৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৯, ২০২৩

সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ৮৫ হাজারের বেশি মানুষ স্ট্রোকে মারা যান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতনতার অভাব, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য সেবনের প্রবণতা, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনসহ নানা কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ছে।

আজ রোববার (২৯ অক্টোবর) বিশ্ব স্ট্রোক দিবসে- ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের উদ্যোগে সায়েন্টিফিক সেমিনারে বক্তরা এসব কথা বলেন।

সেমিনারে বক্তরা বলেন- এছাড়াও স্ট্রোকের পর রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে পারলে শুধু ওষুধ দিয়েই সুস্থ করা সম্ভব। তবে প্রাথমিক লক্ষণ বুঝতে দেরি হওয়ায় অনেককেই যথাসময়ে হাসপাতালে নেওয়া হয় না। এতে মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের হার বাড়ছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, স্ট্রোকের অনেক রোগীকে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে মনে করে প্রথমে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় যায়। সেখানে সিটিস্ক্যান ও এমআরআই করে স্ট্রোক শনাক্তের পর নিউরো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে পাঠানো হয়। এতে চিকিৎসা শুরু করতে অনেক দেরি হয়ে যায়। এ কারণে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েও অনেক ক্ষেত্রে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না।

দেশে আটটি স্ট্রোক সেন্টার রয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে স্ট্রোক সেন্টার না থাকায় অধিকাংশ রোগী ঢাকামুখী হচ্ছেন। ঢাকা শহরের জ্যাম ঠেলে বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নেওয়ায় চিকিৎসা পেতেও দেরি হচ্ছে। এ দুই হাসপাতাল ছাড়াও ঢাকায় পাঁচটি হাসপাতালে স্ট্রোক সেন্টার আছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের সব বিভাগে স্ট্রোক সেন্টার স্থাপন জরুরি।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আজ বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্ট্রোক দিবস। স্ট্রোক সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতিবছর ২৯ অক্টোবর দিবসটি পালিত হয়। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য– ‘আমরা সবাই মিলে স্ট্রোকের চেয়ে শক্তিশালী’। এ উপলক্ষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের উদ্যোগে সায়েন্টিফিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।

Nagad

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, স্ট্রোকের পর প্রথম চার ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে চিকিৎসা শুরু হলে বেশির ভাগ রোগীই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। এমনকি, স্ট্রোকের ৬ থেকে ১৮ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা শুরু করা গেলেও অনেক রোগীকে প্যারালাইসিস ও মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব। মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হলে বা মস্তিষ্কের কোনো রক্তনালি ফেটে গেলে সেই অবস্থাকে স্ট্রোক বা ব্রেইন অ্যাটাক বলা হয়। বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মস্তিষ্কের এই রোগ দীর্ঘমেয়াদি অক্ষমতা এবং মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। দেশে প্রতি চারজনে একজন স্ট্রোকের ঝুঁকিতে।

বিএসএমএমইউ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, কথা বলতে অসুবিধা, মাথা ঘোরা, ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা, মুখ বাঁকা হয়ে যাওয়া এবং হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া স্ট্রোকের লক্ষণ। স্ট্রোক নির্মূল করা যায় না, তবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে অবিলম্বে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। স্ট্রোকের রোগীকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পর যে কোনো এমবিবিএস ডাক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা দিলে মৃত্যুহার ও রোগীর পঙ্গুত্ব হ্রাস করা সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা, ধূমপান না করা, শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা, চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা এবং খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত ফল ও সবজি রাখার মাধ্যমে স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোতাশিমুল হাসান শিপলু বলেন, উচ্চ রক্তচাপের রোগীর স্ট্রোকের ঝুঁকি ৪৮ শতাংশ। স্ট্রোকের চিকিৎসা সময়মতো না নিলে পঙ্গুত্ব, হৃদরোগসহ নানা জটিলতা দেখা দেয়। এটি ডেঙ্গু ও করোনার চেয়ে ভয়াবহ। বিশ্বে পঙ্গুত্ব হওয়ার যত কারণ রয়েছে, এর মধ্যে প্রধান কারণ স্ট্রোক। প্রতিবছর বিশ্বে দেড় কোটি মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন, ৫০ লাখ মারা যান ও ৫০ লাখ পঙ্গুত্ব বরণ করেন। সূত্র: সমকাল