‘আগুন লাগানোর পর সিনিয়র নেতাদের ভিডিও পাঠাতেন তারা’
৪ নভেম্বর নিউমার্কেট যাত্রী ছাউনির পাশে যে বাসটিতে আগুন লাগানো হয়েছিল, যারা দিয়েছে তাদের মধ্যে অগ্নিসংযোগকারী তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত তানভীর আহমেদই সেদিন বাসটিতে আগুন দেয়। সেদিন বাসে আগুন দেওয়ার পর তিনি নিজের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার থেকে আগুন লাগানোর কথা জানান তার এক বন্ধুর কাছে। কথোপকথনে তানভীর লিখেছেন, ‘আগুন লাগিয়ে কী হবে? আমরা আগুন লাগাচ্ছি আর লন্ডনে যারা আছেন তারা ভালো আছেন। উল্টো আগুন দিতে যেয়ে আমরা ধরা পড়ছি।’ এমন কথোপকথন তিনি করেছেন। তাকে যখন ডিবিতে নিয়ে আসা হলো তখন তিনি স্বীকার করেছেন এটি তিনি লিখেছেন।


মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
এ সময় নাশকতাকারীদের সন্ত্রাসীমূলক কার্যক্রম থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, অপরাধীরা যেখানেই থাকুক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
ডিবিপ্রধান বলেন- যারা বোমা, ককটেল নিক্ষেপ করছেন, বাসে আগুন দিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। তারা যদি মনে করেন রক্ষা পাবেন, তাহলে ভুল করছেন।
ডিবির কাছে তানভীর বলেছেন, আমরা আগুন লাগাচ্ছি, ককটেল নিক্ষেপ করছি কিন্তু জেলে গেলে আমাদের দেখার কেউ নেই। যারা নির্দেশ দিচ্ছেন তারা কোথাও লুকিয়ে আছেন অথবা বিদেশ গিয়ে অবস্থান করছেন।
তানভীরকে রিমান্ডে আনা হয়েছে জানিয়ে ডিবিপ্রধান বলেন, অনেকের নাম ও নম্বর পেয়েছি। তানভীরের সঙ্গে আর কারা কারা ছিল এসব বিষয় জানা যাবে।
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, মাঠ পর্যায়ে কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া থাকে, আগুন লাগানোর পর দলের সিনিয়র নেতাকর্মীদের ছবি-ভিডিও দেখাতে হবে। আগুন দেওয়ার সময় মুখে মাস্ক ও রুমাল ব্যবহার করতে হবে। যাত্রীবাহী চলন্ত বাসে আগুন দিতে হবে। নিয়ম হলো আগুনটা লাগানোর পরে বড় ভাইদের খুশি করার জন্য টাকা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ককটেল কিনে এনে ককটেল নিক্ষেপ করছে আবার কোথাও পেট্রোল ঢেলে আগুন দিচ্ছে।
‘ডিবির বিভিন্ন টিম অনেককে আইনের আওতায় এনেছে। তাদের মধ্যে আদালতে দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। কে কে তাদের সহয়তা করছে তাদের নামও আমরা পেয়েছি।’
তিনি বলেন, কোনো বড় ভাইয়ের কথায় যদি আগুন লাগান, ককটেল নিক্ষেপ করেন আসামি-তো আপনিই হবেন। টাকা পেয়ে ধরা পড়ার পর বড় ভাইদের নাম বললে কোনো লাভ হবে না। যারা আগুন দেবেন তারাই ধরা পড়বেন, তারাই মামলা খাবেন আর বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
ডিবি অফিসে দুপুরে খাওয়ানোর বিষয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা তো আসলে কাউকে ডেকে এনে খাওয়াই না। যদি কোনো মানুষ কাজের জন্য আমাদের কাছে আসে তাহলে তার কাজটাও করে দেওয়ার চেষ্টা করি। পাশাপাশি লাঞ্চ টাইম হলে অফার করি। সে যদি অফার গ্রহণ করে তাহলে খেয়ে যান।
তিনি বলেন, আমাদের ইসলাম ধর্মের মধ্যেও কিন্তু আছে- কোনো মানুষ যদি বাড়িতে আসে তাহলে তাকে আপ্যায়ন করাতে হয়। তাহলে আমরা স্বাধীন দেশের পুলিশ, আমরা যদি কাউকে আপ্যায়ন করি আমি মনে করি এটা খারাপ কিছু না।
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, গতকাল সোমবার হরতাল ছিল। হরাতলের মধ্যেও প্রচুর গাড়ি বের হয়েছিল, যানজট লেগেছিল। সাধারণ মানুষ আগুন, ককটেল পছন্দ করছে না। আমরা বার বার বলছি, নাশকতা, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করলে পুলিশ ডিমোরালাইজড হবে না।