‘আগুনসন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমকর্মীরা একযোগে সোচ্চার হোন’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ৫:৪৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৬, ২০২৩

দুস্কৃতিকারী ও আগুনসন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একযোগে আওয়াজ তোলার জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।

বুধবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডে জাতীয় প্রেসক্লাবে এনএএনটিভি বিডিডটকম অনলাইন সংবাদপোর্টাল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সমসাময়িক বিষয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।

এনএএনটিভি বিডিডটকম অনলাইনের সম্পাদক ও প্রকাশক সাবিনা মুবাশশিরের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে একেএম শামীম ওসমান এমপি, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, তাঁতি লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শওকত আলী, পোর্টালটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন দীপু ও পরিচালক খাদেম মো. সানাউল্লাহ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশের নামে ২৮ অক্টোবর যে বর্বরতায় পুলিশ হত্যা করা হয়েছে, বর্বরোচিতভাবে সাংবাদিকদের সাপ পেটানোর মতো পেটানো হয়েছে, তা অতি জঘন্য ও চরম অমানবিক। গণমাধ্যমের সবাই এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন যাতে ওরা আর এই কাজ করতে না পারে। আমি সমস্ত গণমাধ্যমকে অনুরোধ জানাবো এদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার জন্য।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আজকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। হরতাল-অবরোধের নামে এই চোরাগোপ্তা হামলা, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ, বাসের ড্রাইভার হত্যা করা, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে অঙ্গার করা, এগুলো কোনো রাজনৈতিক দলের কাজ বা কর্মসূচি হতে পারে না। এগুলো সন্ত্রাসী কর্মসূচি ছাড়া অন্য কিছু নয়। এমন কি “সন্ত্রাসী কর্মসূচি” শব্দটিও এই ঘটনাগুলোকে বর্ণনা করার জন্য যথেষ্ট নয়।’

মন্ত্রী বলেন, ‘দায়িত্বশীলদের সমালোচনা হবে, যে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করার জন্য জনগণকে আহ্বান জানানো হবে, কিন্তু তারা আহ্বান জানাবে আর এসি রুমের মধ্যে বসে থেকে কিছু কর্মীকে লেলিয়ে দিয়ে, কিছু নেশাগ্রস্তদের হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করতে বলবে, এগুলো কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি হতে পারে না। এদেরকে আবার রাজনৈতিক দল বলে কেউ কেউ।’

Nagad

হাছান মাহমুদ প্রশ্ন রাখেন ‘যারা সময়ে সময়ে জাতিকে জ্ঞান এবং বুদ্ধি দেয়, সেই বুদ্ধিজীবী ভাই-বোনেরা এখন কোথায়। কাউকে ঘুষি মারলেও উনারা বিবৃতি দেয়, কাউকে ধাওয়া করলেও বিবৃতি দেয় অথচ এখন যে মানুষ পুড়িয়ে মারছে, গাড়ি-ঘোড়া পোড়াচ্ছে, উনারা কোথায় হারিয়ে গেলেন! জনগণ উনাদেরকে খুঁজছে। উনাদের বুদ্ধি কি এখন লোপ পেয়েছে, না কি তারা বুদ্ধি করে চুপ করে আছেন!’

তথ্যমন্ত্রী এ সময় বলেন, ‘আমি আজকে অনলাইনে দেখলাম, যেসব ইসরাইলি ফিলিস্তিনিদের জায়গার ওপর অবৈধভাবে বসতি স্থাপন করেছে তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানাই। আশা করবো, বাংলাদেশে যারা পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করছে এবং যারা নির্বাচনকে প্রতিহত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেও তারা ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেবে।’

সম্প্রচারমন্ত্রী অতিথি ও আয়োজকদের সাথে নিয়ে কেক কেটে এনএএনটিভি বিডিডটকম অনলাইন সংবাদ পোর্টালটির শুভযাত্রা কামনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার গণমাধ্যমের বিকাশ, বিস্তৃতি এবং স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করেন যে, গণমাধ্যমের বিকাশের সাথে রাষ্ট্রের ও বহুমাত্রিক সমাজ ব্যবস্থার বিকাশ যুক্ত, বিতর্কভিত্তিক ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা যুক্ত। সে কারণে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে। এর কারণে অনেকের চাকরির সংস্থান হচ্ছে এবং মানুষের কাছে অবাধ তথ্য যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই নতুন অনলাইন গণমাধ্যম ভূমিকা রাখবে সেটিই প্রত্যাশা।’

একইসাথে তথ্যমন্ত্রী সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, ‘লক্ষ্য রাখতে হবে, সবার আগে সংবাদ দিতে গিয়ে যেন সম্পাদনাহীন এবং ভুল তথ্য পরিবেশিত না হয়। গণমাধ্যমের বিস্তৃতির সাথে সবাই সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার প্রবণতা মানুষ এবং মূলধারার গণমাধ্যমের জন্য ক্ষতিকর। এটি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আমাদের প্রেসক্লাব, সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো বারবার তাগাদা দিচ্ছে এবং প্রেস কাউন্সিল এ নিয়ে কাজ করছে। আগে ফেইসবুকে কিছু দেখলেই সেটিকে মানুষ সংবাদ মনে করতো, এখন বোঝে যে ফেইসবুকের তথ্য সংবাদ নয়।কারণ, এই দেশে গত ১২-১৩ বছরে যতো ধরণের হানাহানি, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, নাসির নগর, রামু, কুমিল্লা, বরিশাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা, সবগুলোর পেছনেই ভুয়া অনলাইন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সুতরাং এ ব্যাপারে আমাদেরকে অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে। আমাদের সরকার, আমরা অত্যন্ত শক্তভাবে সেগুলো মোকাবিলা করেছি। যারা এই কাজগুলো করেছিলো তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।’

সংসদ সদস্য শামীম ওসমান তার বক্তৃতায় বলেন, ‘রাজনীতি মানে এবাদত, মানুষের সেবা করা, মানুষকে খুশি করলে সৃষ্টিকর্তা খুশি হন। আমি রাস্তাঘাট, মসজিদ, মাদ্রাসা যাই করেছি সব মানুষের জন্য। বিএনপি-জামায়াত ২০১৩, ১৪, ১৫ সালে যে ৫শ’ মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারলো, ৩৬২৬ জনকে যে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিলো, রেলগাড়ি পোড়ালো, ২৯ জন পুলিশকে কুপিয়ে মারলো, এগুলো তো রাজনীতি নয়, সন্ত্রাস আর অপরাজনীতি।’