পাকিস্তানে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, হুঁশিয়ারি পাকিস্তানের
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পাকিস্তানে দুই শিশু নিহত হয়েছে। বেলুচিস্তান প্রদেশে হওয়া এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও তিনজন। হামলার পর ইরানকে ‘গুরুতর পরিণতির’ হুঁশিয়ারি দিয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের ভেতরে একটি সুন্নি ‘উগ্রবাদী’ গ্রুপের ঘাঁটিতে এই ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে তার প্রতিবেশী ইরান। মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) সীমান্তের কাছাকাছি দক্ষিণ-পশ্চিমের এই গ্রামে হামলা চালানো হয়।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) ইরাক ও সিরিয়ায় বিভিন্ন স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর একদিন পর পাকিস্তানে হামলা চালালো ইরান। এ ঘটনায় চরম ক্ষোভ ও প্রতিশোধ নেওয়ার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেছে ইসলামাবাদ। এছাড়া ইসলামাবাদে নিযুক্ত তেহরানের শীর্ষ কূটনীতিককেও তলব করা হয়েছে। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।


প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের ‘অবৈধ’ হামলায় দুই শিশু নিহত এবং আরও তিনজন আহত হয়েছেন বলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার ভোরে জানিয়েছে। একইসঙ্গে পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘনের প্রতিবাদ জানাতে ইসলামাবাদে নিযুক্ত তেহরানের শীর্ষ কূটনীতিককে তলব করেছে দেশটি।
এদিকে বুধবার ভোররাতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রের দেওয়া এক বিবৃতিতে ইসলামাবাদ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, এই ঘটনার ‘গুরুতর পরিণতি’ হতে পারে এবং এটি ‘সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য’।
বিবৃতিতে হামলাটি কোথায় হয়েছে তা বলা হয়নি, তবে পাকিস্তানের বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে বেলুচিস্তান প্রদেশে বিস্ফোরণের খবর দেওয়া হয়েছে। সেখানে দুই দেশের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার (৬২০ মাইল) জনবহুল সীমান্ত রয়েছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের প্রতি এই লঙ্ঘন সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য এবং এর পরিণতি মারাত্মক হতে পারে।’
পাকিস্তানের ভেতরে ইরানের এ ধরনের হামলা নজিরবিহীন। যে এলাকায় হামলা চালানো হয়েছে সেখানে দুই দেশের প্রায় ৯০০ কিলোমিটার (৫৫৯ মাইল) সীমান্ত রয়েছে। এই সীমান্ত উভয় দেশের কাছেই উদ্বেগের বিষয় হয়ে রয়েছে। এ অঞ্চলে পাকিস্তান-ইরান উভয়েই বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর হামলার শিকার হয়। জৈশ আল-আদল নামের গ্রুপটি কয়েক দশক ধরে হালকা বসতিপূর্ণ এই অঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ইরানের এই হামলা আরও বেশি উদ্বেগজনক, কারণ পাকিস্তান এবং ইরানের মধ্যে যোগাযোগের বিভিন্ন চ্যানেল থাকা সত্ত্বেও এই অবৈধ হামলাটি ঘটেছে।’
এর আগে মঙ্গলবার পাকিস্তানে বেলুচি জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ আল আদলের দুটি ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে বলে ইরানের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া জানিয়েছে। ইরাক ও সিরিয়ায় বিভিন্ন স্থাপনায় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর একদিন পর এই আক্রমণের ঘটনা ঘটল।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, জইশ আল আদল নামের এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি এর আগে পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় ইরানি নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বেশ কয়েক দফায় হামলা চালিয়েছে। বিশদ কোনও বিবরণ না দিয়ে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ‘এই ঘাঁটিগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে।’
এছাড়া ইরানের শীর্ষ নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত দেশটির নুরনিউজ জানিয়েছে, হামলার লক্ষ্যবস্তু হওয়া ঘাঁটিগুলো পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে অবস্থিত। ইরানের সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের তথ্যমন্ত্রী জান আচাকজাই হামলার বিষয়টি নিশ্চিত বা অস্বীকার করতে অস্বীকার করেছেন। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর জনসংযোগ শাখার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আইএসপিআরের প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করুন।’
তবে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর জনসংযোগ শাখা তাৎক্ষণিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি।