টেলিটক থেকে দুষ্টু চক্র দূর করা হবে: পলক

তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিবেদক:তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ২:৪২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৭, ২০২৪

টেলিটক থেকে দুষ্টু চক্র দূর করা হবে বলে জানিয়েছেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, ইন্টারনাল আইটি ও ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিবেদন আমার লাগবে যেটা হবে এক্সক্লুসিভ ও ক্লাইসিফায়েড। টেলিটককে লাভজনক করতে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন করতে কাকে হায়ার ও ফায়ার করতে হবে তা ইনস্ট্যান্ট করতে হবে। সৎ, স্বচ্ছ্ব ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।

তিনি বলেন-টেলিটকের জন্য যে ভালো, যার পারফর্ম্যান্স ভালো, তাকে আমরা উৎসাহ দেবো, পুরস্কৃত করবো। কোম্পানির জন্য যে ঝুঁকিপূর্ণ, যে ক্ষতিকর তাকে অবশ্যই আমরা শাস্তি দেবো, সংশোধনের সুযোগ দেবো না। দুর্নীতিমুক্ত, সৎ, স্বচ্ছ, এবং জবাবদিহিতা এই চারটি মূলনীতি অনুসরণ করে চলতে হবে, টেলিটক’এর কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে যদি কোনো অনিয়মের সাথে জড়িত থাকে, কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তাকে সরাসরি শাস্তি দেওয়া হবে, কোনো সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হবে না। আমি বিশ্বাস করি টেলিটকে ভালো কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা বেশী, অসৎ, অলস, দায়িত্বে অবহেলা করে এরকম কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা হাতেগোণা। সেই অল্পসংখ্যক অসৎ, অলস, দায়িত্বে অবহেলা করে এরকম কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য যাতে টেলিটক কোম্পানির বা দেশের ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে টেলিটকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন তিনি।

এ সময় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টেলিটককে লাভজনক করার আল্টিমেটাম দিয়ে পলক বলেন, ফাইভজি’র স্পেকট্রাম পেলেও টেলিটক জনগণকে হতাশ তিনি বলেছেন, টেলিটক পরীক্ষামূলক ফাইভ-জি রোলআউট করেছে। সেই স্পেকট্রামটা আপনাদের দিয়েছি। এই বিশেষ সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তো টেলিটক-কে এগুতে হবে। প্রথম টেলিটকই সবার আগে পেয়েছিলো। এই সংযোগ পেতে মানুষ লাইন ধরেছিলো। কিন্তু সেখান থেকে আমরা অনেকটাই জনগণকে হতাশ করেছে। তাই আগামী জুনের মধ্যে যত কঠোরই হোক না কেন, আমরা কঠোর হবো। আমরা কারো মুখের দিকে তাকাবো না, কোনো ব্যক্তি বা সিন্ডিকেটের প্রভাব থাকবে না। কী কারণে কোন স্বার্থে তারা এসব করতে চায় সে বিষয়ে আমি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করবো। এখানে সংশোধনের কোনো সুযোগ নেই; শাস্তি দেয়া হবে।

সমস্যার মধ্যে যদি আমরা প্রবেশ না করি তাহলে সমাধানের পথ খুঁজে পাবো না জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন-আমাদের ডাক, টেলিযোগাযোগ, এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের যতগুলো কোম্পানি আছে, সেগুলোকে ব্যবসা করে আয় করতে হবে, যা ব্যয় তার থেকে বেশি আয় করে লাভজনক কোম্পানিতে পরিণত হতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আমি যদি সেটার আয়োজন, কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে না পারি তাহলে আমি সমাধানের পথ দেখাতে পারবো না।

প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদেরকে সুনির্দিষ্ট তিনটি নির্দেশনা দিয়েছেন জানিয়ে পলক বলেন- সরকারের সমস্ত প্রতিষ্ঠানের, সংগঠনের, অধিদপ্তরের, সংস্থার, কোম্পানির সকল ধরণের অর্থ, সময়, এবং মেধার অপচয় রোধ করতে হবে, রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট দেখিয়ে প্রকল্প অনুমোদন করতে হবে, এবং সকলের কাজের যৌক্তিকতা থাকতে হবে। টেলিটকের ক্ষেত্রে আমাদের নীতি হবে, সেবার মান বাড়ানো, অর্থের অপচয় রোধ করা, এবং সীমিত সম্পদের উদ্ভাবনী ও সৃজনশীল পন্থায় সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা।

Nagad

প্রতিমন্ত্রী বলেন-টেলিটক একটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, সেবার মান বাড়িয়ে, গ্রাহকদের কাছে সেবার জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোর সাথে টিকে থাকতে হবে, সামনে আগাতে হবে এবং লাভজনক হতে হবে। সরকারের বিশেষ কোনো সুবিধা নিয়ে আপনাদের যদি ব্যবসা করার পরিকল্পনা থাকলে ভালো হবে না। এজন্য টেলিটক’কে প্রথমত, স্বনির্ভর হতে হবে, নিজের আয় দিয়ে চলতে হবে; দ্বিতীয়ত, টেকসই হতে হবে; এবং তৃতীয়ত, ভবিষ্যৎমূখী হতে হবে। ২০৪১ সালে টেলিকম সেবা কেমন হবে, মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর কেমন হবে, তার সেবার বৈচিত্র্য কেমন হবে সেটা নিয়ে এখনই চিন্তা করতে হবে। সীমিত সম্পদ দিয়ে সৃজনশীল-উদ্ভাবনী সমাধান দেওয়া, সেবা প্রদানের মনোভাব নিয়ে কাজ করা, খরচ-সময়-মেধার অপচয় রোধ করা এবং পাশাপাশি সততা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

টেলিটক যখন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের নিজস্ব মোবাইল অপারেটর হিসেবে আসে তখন মানুষ সারারাত অপেক্ষা করেছে টেলিটকের সিম নেওয়ার জন্য। এই ভেবে যে, এটা সাশ্রয়ী হবে এবং নিজেদের পণ্য, নিজেদের সেবা আমরা ব্যবহার করবো। সেখান থেকে গ্রাহকরা অনেকটাই হতাশ হয়েছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন-টেলিটক যে আমাদের ফোন, এটা যেনো সবাই ব্যবহার করতে চায়, আমাদের তার জন্য তৈরি হতে হবে। আমি আশা করবো, আগামী জুনের মধ্যে আমাদের যতো কঠোর সিদ্ধান্তই নিতে হোক কারো মুখের দিকে তাকিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবো না, এবং টেলিটকে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সিন্ডিকেটের কোনো প্রভাব থাকবে না। যদি কোনো ব্যক্তি, কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী বা কোনো চক্র এখানে বিশেষ প্রভাব খাটাতে চায়, তাহলে তার নাম-পদবী-ঠিকানাসহ কি কারণে, কোন স্বার্থে এধরণের কর্মকাণ্ড করতে চাচ্ছে সেটাসহ সরাসরি আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করবো। এখানে কেউ কোনো ভুল করলে বা অপরাধ করলে সেটা সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হবে না, শাস্তি দেওয়া হবে।

পূর্ব নির্ধারিত স্থানে বৈঠক না করে আজ গুলশানে টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের কার্যালয়ের সভা কক্ষে প্রথম বৈঠক করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

সারাদিন/১৭ জানুয়ারি