জুলিয়েট ও রোমিও চির বিচ্ছেদ

মানুষের মতোই প্রেমে মজে প্রাণীরা। একেক প্রাণীর প্রেমের প্রকাশ একেক রকম । সুন্দরবনের বণ্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্র করমজলের পুরুষ কুমির জুলিয়েট ও মাদি কুমির রোমিও প্রেমে মজে ছিলেন। করমজলের প্রাণচঞ্চল এ প্রাণী দুটির জীবনেও এখন বেঁজেছে চিরবিচ্ছেদের সূর। রোমিওকে ছেড়ে জুলিয়েটের ভাগ্যে জুটেছে বনবাস।

গত ১৩ মার্চ বন বিভাগ সুন্দরবনে লোনা পানির কুমিরের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে জানতে পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে সুন্দরবনের নদীতে অবমুক্ত করেছে দুটি কুমির। এর মধ্যে একটি পুরুষ ও অন্যটি স্ত্রী। পুরুষ কুমিরটি ছিল জুলিয়েট। আর স্ত্রী কুমির মধুকে সম্প্রতি যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ির মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ির এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।

করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবীর। দীর্ঘ দিন চাকরি করার সুবাধে প্রজনন কেন্দ্রে থাকা কুমিরসহ অন্যান্য বণ্য প্রাণীর সাথে তার গড়ে ওঠেছে গভীর সখ্যতা। তাই বণ্য প্রাণীর আচরণ পরিবর্তন সহজেই তার চোখে ধরা পড়ে। রোমিও জুলিয়েটের ভালোবাসা নিয়ে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেছেন তিনি।

তার ভাষ্য ‘ রোমিও ও জুলিয়েটের মধ্যে ভালোবাসা ছিল। তারা সমবয়সী ৩৭ বছর হবে। ২৩ বছরের জুটি তাদের। জুলিয়েট বনে চলে যাওয়ার পর নিস্তেজ হয়ে পড়েছে রোমিও। আগেরমত প্রাণ চঞ্চলতা নেই ওর ভিতরে। ওর হিংস্র চোখ ভালোবাসার মায়া নিয়ে বারেবারে জুলিয়েটকে খুঁজছে। জুলিয়েট যেখানে বসে থাকতো সেখানে ও বারবার যাচ্ছে। এই অবস্থায় অন্য কুমিরকেও ওর সঙ্গী হিসেবে সহ্য করবে না। রোমিও জুলিয়েটের পুনরায় দেখা বা এক হওয়ার সম্ভাবনা নাই। এখানেই তাদের দাম্পত্য জীবনের ইতি যোগ করেন আজাদ কবির।

এদিকে স্যাটেলাইলে সিগন্যাল অনুযায়ী জুলিয়েট সুন্দরবনের গভীরে বর্তমানে অবস্থার করছে। কখনো খালের পানিতে নামছে । বেশীরভাগ সময় চুপ করে ডাঙায় বসে থাকছে।

২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল পর্যটন কেন্দ্রে ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে আট একর জায়গায় বন বিভাগের উদ্যোগে দেশের একমাত্র সরকারি কুমির প্রজনন কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়। প্রথমে জেলেদের জালে আটক ছোট-বড় পাঁচটি কুমির দিয়ে শুরু হয় কেন্দ্রের প্রজনন কার্যক্রম। এদের মধ্য থেকে প্রজননে সক্ষম দুটি মাদি কুমির ও একটি পুরুষ কুমিরকে বাছাই করা হয়। কুমির দুটির নাম রাখা হয় জুলিয়েট ও পিলপিল এবং পুরুষ কুমিরটির নাম দেওয়া হয় রোমিও । আর এরা ওই নামেই দর্শনার্থীদের কাছে বেশ পরিচিত হয়ে ওঠে।

Nagad

প্রজননে অক্ষম হয়ে ওঠায় ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে প্রজনন কেন্দ্রের প্যানে আরেকটি পুরুষ কুমির আনা হয়। এটির নাম দেওয়া হয় আলেকজান্ডার । পরে মাদি কুমির পিলপিলকে দেওয়া হয় আলেকজান্ডারের সাথে। আর রোমিও জুলিয়েট জুটি ঠিক রেখে আলাদা পুকুরে রাখা হয়।