তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ২০৩১ পর্যন্ত কর অব্যাহতির দাবি প্রযুক্তি সংগঠনগুলোর

তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিবেদক:তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ৫:১০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৪, ২০২৪

জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা অনুযায়ী সফটওয়্যার ও আইটিইএস খাতের আয়কর এবং মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতির সুবিধা শেষ হচ্ছে এ বছরের ৩০ জুন। এবারের পরিপূরক বাজেটে সম্ভাবনাময় এই খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে আরও সাত বছরের কর অব্যাহতি দাবি করেছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জাতীয় শীর্ষ ৫ বাণিজ্য সংগঠন। তারা বলছে-আইএমএফ এর প্রেসক্রিপসন বাস্তবায়ন না করে সরকার যেন জাতীয় স্বার্থ বিবেবচনা করেন। না হলে-উদিয়মান এই খাতের বিপর্যয় অবশ্যম্ভবী।

আজ বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) কাওরানবাজার বেসিস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন (আইএসপিএবি) এবং ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশেন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর যৌথ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সেইখানেই বক্তরা এসব কথা বলেন। এতে বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ, বিসিএস সভাপতি সুব্রত সরকার, বাক্কো সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ, আইএসপিএবি সভাপতি মোঃ ইমদাদুল হক এবং ই-ক‍্যাব-এর জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন উপস্থিত থেকে নিজ নিজ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে মতামত তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়-বর্তমানে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা খাতের বার্ষিক অভ্যন্তরীণ বাজারের আকার প্রায় ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ, পাশাপাশি রপ্তানি প্রায় ১.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। ‘রূপকল্প ২০৪১ অনুযায়ী স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে ২০২৯ সাল নাগাদ সরকারের ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বিশ্বমানের সক্ষমতা তৈরি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিশ্চিতকরণ, দেশীয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে উৎসাহ প্রদান, এবং স্থানীয় বাজারের ক্রমান্বয় বৃদ্ধির এ সময়ে নিজেদের দেশীয় বেসরকারি তথ্যপ্রযুক্তি খাতের মাধ্যমেই সেই চাহিদা পূরণ এবং অত্যন্ত মূল্যবান বৈদেশিক মূদ্রা বাইরে চলে যাওয়া রক্ষার্থে, বিদেশি তথ্যপ্রযুক্তি খাতের এগ্রেসিভ বিপণন ও বাজার কৌশলের সম্মুখে দেশীয় বেসরকারি তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে প্রতিযোগীতামূলক রাখতে ২০৩১ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি সুবিধা বলবৎ রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন।

তাই এসব লক্ষ্য অর্জনে সরকারের ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় আনতে হবে বলে দাবি করেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।

বর্তমানে চলমান তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর অব্যাহতির মেয়াদ ৩০ জুন, ২০২৪-এ শেষ হয়ে যাবে জানিয়ে বক্তরা বলেন- দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদি কোনো বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না। উপরন্তু, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি থমকে যেতে পারে এবং দেশীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক ব্যয় অনেকাংশে বেড়ে গিয়ে আমরা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পরতে পারি। এছাড়াও, সামগ্রিকভাবে সরকারঘোষিত অগ্রাধিকার খাত ও শিল্প হিসেবে বিবেচিত এই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায় তরুণ উদ্যোক্তা ও পেশাজীবীদের এবং বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছর থেকে এ অব্যাহতির সময়সীমা বৃদ্ধির বিকল্প নেই।

Nagad

গত মাসে বেসিস সহ পাঁচটি তথ্যপ্রযুক্তি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সরকারকে কর অব্যাহতির মেয়াদ ২০৩১ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন জানিয়ে নেতৃবৃন্দরা বলেন- শীর্ষ আইটি বাণিজ্য সংগঠনগুলো অর্থমন্ত্রীকে চিঠি লিখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে কর অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হলে খাতের প্রবৃদ্ধি, বিনিযোগ এবং রপ্তানি হ্রাস পেতে পারে।

বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, “তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে যদি করের আওতায় আনা হয়, সেটা মোট রাজস্ব আয়ের ১ শতাংশও হবে না। তথ্যপ্রযুক্তি খাত সবে মাত্র দাঁড়াতে শুরু করেছে, সামনে আমাদের দৌড়ানোর সময়। এসময়ে শুধুমাত্র সরকারের এই অল্প আয়ের জন্য একটা সম্ভাবনাময় খাতকে হুমকির মুখে ফেলা ঠিক হবে না। যেহেতু সরকার দেশকে একটি স্মার্ট’ বাংলাদেশে রূপান্তর করতে চায়, তাই এই খাতে কর অব্যাহতি বজায় রাখা আগের চেয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কমপক্ষে ২০৩১ সাল পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উপর কর অব্যাহতির দাবি করছি এবং এব্যাপারে বেসিস সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলার পাশাপাশি আনুষ্ঠানিকভাবে লিখিত আকারেও চিঠি নিয়েছে।

আশা করছি সরকার স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার ও সভাবনাময় এই খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্যে কর অব্যাহতির দাবি অতি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবে জানিয়ে তিনি বলেন- এই খাতে কর অব্যাহতি মানে শুধু এটা না যে- তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠানের উপর এই কর অব্যাহতি, এটা আসলে সমগ্র দেশের উন্নয়ন এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

বিসিএস সভাপতি সুব্রত সরকার বলেন, “স্মার্ট’ বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কর অব্যাহতির সুবিধা ২০৩১ সাল পর্যন্ত বলবৎ রাখা উচিৎ বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশের স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা সুদুরপ্রসারী চিন্তা করে বিনিয়োগ করে, সেক্ষেত্রে কর অব্যাহতির ফলে কেবল মাত্র এই ইন্ডাস্ট্রি দাঁড়াতে শুরু করেছে। তাই আমি মনে করি এই কর অব্যাহতির সুবিধা বলবৎ রাখার কোনো বিকল্প নেই।”

বাক্কো সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ বলেন, বর্তমান সময়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে যে সাফল্য পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা এই খাতে কর অব্যাহতি সুবিধা প্রদানের ফলেই অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে সরকার মনে করছে এই শিল্প খাত থেকে কোন রাজস্ব পাচ্ছে না। কিন্তু এই শিল্পে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং কর্মরত পেশাজীবীদের ক্রয়ক্ষমতা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায়, তারা ব্যক্তিগত আয়কর প্রদান এবং মূল্য সংযোজন কর প্রদানের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কর অব্যাহতির মেয়াদ বৃদ্ধি করা না হলে সামগ্রিকভাবে রপ্তানি আয় ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ব্যাহত হবে, পাশাপাশি নতুন উদ্যোক্তারা এই শিল্পে বিনিযোগে আগ্রহ হারাবে। ফলে এই শিল্পের উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়বে এবং এই খাতে কর্মরত পেশাজীবীদের একটি বড় অংশ কর্মহীন হয়ে পড়বে। সুতরাং তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে কর অব্যাহতি সুবিধা বাতিল করা হলে ভবিষ্যতে সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনও বাধাগ্রস্ত হবে।

আইএসপিএবি সভাপতি মোঃ ইমদাদুল হক বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা খাতের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নে কর অব্যাহতির সুবিধা ২০৩১ সাল পর্যন্ত বলবৎ রাখা অত্যন্ত জরুরী। পাশাপাশি আমি আইএসপিএবি ইন্ডাস্ট্রিকে তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা (ITES) খাতের অন্তরভূক্ত করার জন্য আবারও দাবী জানাচ্ছি। তাছাড়া বর্তমান প্রতিযোগীতা মূলক ইন্টারনেট সেবায় আমদানী নির্ভর আইএসপি সেক্টরের যন্ত্রপাতি ও ডলারের উর্ধগতির বাস্তবতায় সকল আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোর ইন্টারনেট সার্ভিসের ব্যয় বহন করে রেভিনিউ এর উপর ১০% লাভ করতে পারেনা। ফলে ইন্টারনেট সার্ভিসের বিলের উপর অতিরিক্ত ১০% (AIT) কর আরোপে সকল আইএসপি প্রতিষ্ঠান ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। আগামী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ইন্টারনেট সার্ভিসের উপর ১০% (AIT) রহিত করার জন্য জোড় দাবী জানাচ্ছি।

ই-ক্যাব-এর জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন বলেন, “প্রযুক্তি এবং আরো আনুষঙ্গিক অবস্থার পরিবর্তনের কারণে প্রযুক্তি খাতকে আমাদের আরো কিছুদিন বিশেষ যত্ন ও সুবিধার প্রয়োজন। কর অব্যাহতি হলো তার একটি। এর মাধ্যমে এখাত টেকসই ও সক্ষম হয়ে উঠবে। এখনি অব্যাহতি রহিত করলে এই খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমাদের বিশ্বাস সকলে বিষয়টি অনুধাবন করতে পারবেন।”

সংবাদ সম্মেলনে বাক্কোর সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন, বেসিস-এর সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর সহ পাঁচ সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।