আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল, আজও ভুলতে পারেনি উপকূলবাসী

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৯, ২০২৪

আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল। স্বজনহারাদের আঁতকে ওঠার দিন। প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও ব্যাপক প্রাণহানির দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে উপকূলবাসীর কাছে আবারও ফিরে এসেছে সেই ভয়াল ২৯ এপ্রিল। ১৯৯১ সালের এই দিনে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছিল বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকা। প্রাণ হারিয়েছিল অন্তত ২ লাখ মানুষ। লাখে লাখে মানুষকে গণহারে কবর হয়েছিল। মানুষের লাশ আর লাশ ভেসে এসেছে সেদিন।

নদী-নালা, ডোবায়, খাল-বিল, সমুদ্রে ভেসেছিল মানুষের লাশ আর লাশ। গরু, মহিষ, ভেড়ার মরদেহের স্তুপ যেন ভয়াল এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য।

আজ থেকে ৩৩ বছর আগের এই দিনটিতে ভয়াবহ এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, হাতিয়া, সন্দ্বীপসহ বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকার মানুষ। বঙ্গোপসাগর থেকে তীব্র গতিতে উঠে আসা জলোচ্ছ্বাসে চোখের পলকেই লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় হাজার হাজার উপকূলবাসীর সংসার।

এদিন উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে ১২ থেকে ২০ ফুট উচ্চতায় জ্বলোচ্ছাসে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘হারিকেন’। লাশের পরে লাশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল চারদিকে।

ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার গতিবেগে বাতাস আর প্রায় ২০ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস রাত প্রায় ১২টা নাগাদ উপকূলে আছড়ে পড়ে হারিকেনের শক্তিসম্পন্ন প্রবল এক ঘূর্ণিঝড়। কুতুবদিয়ার ওপর দিয়ে ১২ থেকে ২০ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে। এতে কুতুবদিয়াসহ লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল কক্সবাজার, মহেশখালী, চকরিয়া, বাঁশখালী, আনোয়ারা, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, সীতাকুণ্ড পতেঙ্গাসহ উপকূলীয় এলাকা। বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল।

জলোচ্ছ্বাসে আনুমানিক ১ লক্ষ ৩৮ হাজার মানুষ নিহত এবং প্রায় এক কোটি মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছিল। তবে বেসরকারি হিসাবে এর সংখ্যা আরও বেশি। মারা যায় ২০ লাখ গবাদিপশু। ক্ষতি হয়েছিল ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি সম্পদ।

Nagad

পরদিন বিশ্ববাসী অবাক হয়ে গিয়েছিল সেই ধ্বংসলীলা দেখে। নির্বাক হয়ে তাকিয়ে ছিল জাতি। স্বজনহারানোর অস্থিরতায় বোবা কান্নায় ডুকরে ডুকরে কেঁদেছিল সমগ্র দেশ।

এই ঘূর্ণিঝড়ের ২৮ বছরেও সেসব উপকূলীয় এলাকা এখনো অরক্ষিত।

সেদিনের ঘটনায় বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত হয় হালিশহর, আগ্রাবাদ, কাটঘর, বন্দর, পতেঙ্গাসহ নগরীর উল্লেখযোগ্য এলাকা। বন্দর থেকে ছিটকে যায় নোঙর করা বড় বড় জাহাজ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নৌবাহিনীর জাহাজ। জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায় নৌবাহিনীর অনেক অবকাঠামো। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিমান বাহিনীর উড়োজাহাজ। শিশু-সন্তান ও পরিবার নিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় জলোচ্ছ্বাসে আটকা পড়েন নৌ ও বিমান বাহিনীর বহু সদস্য। ভেসে যায় অনেকের আদরের ছোট্ট শিশু।