‘আজকে বিদেশি কূটনীতিকদের অনেকে বলেছেন, দিস ইজ শেইম’

নিজস্ব প্রতিবেদক:নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ৯:৪৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৪, ২০২৪

কোটা সংস্থার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকার কিছু স্থাপনায় যে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে তার মধ্যে থেকে মেট্রোরেলসহ কয়েকটি স্থাপনা বিদেশি কূটনীতিকদের সরেজমিনে দেখিয়েছে সরকার। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন- আজকে বিদেশি কূটনীতিকদের অনেকে বলেছেন, দিস ইজ শেইম। অনেকেই আমার কাছে অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি, তবে এটা তোমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তারা স্বচক্ষে দেখার পর স্তম্ভিত হয়ে গেছেন, আমি নিজেও স্তম্ভিত হয়ে গেছি। প্রতিটি জায়গায় এরকম ধ্বংসযজ্ঞ, এটা কল্পনার বাহিরে ছিল।

এসব ধ্বংসযজ্ঞ দেখে কূটনীতিকরা বলেছেন, আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি।

বুধবার (২৪ জুলাই) বিদেশি কূটনীতিকদের কিছু স্থাপনা দেখানোর পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাংবাদিকদের ব্রিফ করে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, মোট ৪৯টি মিশনের প্রতিনিধি ছিলেন। ২৩ জন রাষ্ট্রদূত ছিলেন। আজকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আমাদের সঙ্গে ছিলেন। কূটনীতিকদের মেট্রোরেলের ধ্বংসযজ্ঞ, সড়ক ভবন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিটিভি দেখিয়েছি। আমাদের পরিকল্পনা ছিল আরও কিছু দেখানোর। তাদের আমরা সব জায়গায় নিতে পারিনি। অর্ধদিনের নোটিশে এই কঠিন সময়ে এত রাষ্ট্রদূত যাওয়া সহজ কাজ ছিল না।

গত ১৮ জুলাই ঢাকার কূটনৈতিক মিশন থেকে পাঠানো ব্রিফ নোটের প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, আমরা মন্ত্রণালয় থেকে সবার কাছে নোট পাঠিয়েছি। কোনো বিদেশি দূতাবাস বা কূটনীতিকরা যেন গণমাধ্যমে কোনো বিবৃতি না পাঠান। তারা সেটি মেনেছেন। অতীতে এ ধরনের কিছু ঘটলে কূটনীতিকদের প্রভোক করা হতো। এবার গণমাধ্যম করেনি। হয়তো কিছু দেশ তাদের মতো বিবৃতি দিয়েছে।

কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে কত লোক মারা গেছে, তার তথ্য কূটনীতিকরা জানতে চেয়েছে কি না- এ প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, সেটি সবাই জানতে চায়। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

Nagad

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে জাতিসংঘের ভেইকল ব্যবহার নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, জাতিসংঘের কোনো ভেইকল ব্যবহার করা হচ্ছে না। ওটা জাতিসংঘ শান্তি মিশনে ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। লোগোটা মোছা হয়নি। এখন লোগোটা মুছে দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে ঘটনা ঘটেছে সেখানে ল অ্যান্ড ফোর্সমেন্ট ও ইনটেলিজেন্সির কোনো ব্যর্থতা ছিল কি না এবং সরকারের সেটি তদন্ত করার প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, এখানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমাদের ল অ্যান্ড এনফোর্সেমেন্ট এজেন্সিগুলো কাজ করছে। কাজ করে তারা শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে। আমাদের ল অ্যান্ড এনফোর্সেমেন্ট যথেষ্ট চেষ্টা করছে।

মন্ত্রী বলেন, বিটিভি হচ্ছে টেলিভিশনের আতুরঘর। আজ যারা টেলিভিশন চ্যানেলগুলো চালায় তাদের অনেকের হাতেখড়ি হয়েছে বিটিভিতে। এই অঞ্চলের প্রথম টিভি চ্যানেল বিটিভি। ১৯৬৪ সালে এটি স্থাপিত হয়। তখন এটি বাংলা ভাষার প্রথম চ্যানেল, ভারতে তখনও টেলিভিশন চ্যানেল হয়নি। সেখানে যেভাবে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এবং কী পরিমাণ ধ্বংসযজ্ঞ, সারি সারি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেতু ভবনেও একই অবস্থা। মেট্রোরেলের পাশের গাড়িগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এগুলো রাষ্ট্রের ওপর হামলা। এগুলো জনগণের সম্পত্তি, এগুলো কোনো সম্পত্তি নয়। তাদের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তাণ্ডবকেও হার মানিয়েছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কিন্তু আমাদের টেলিভিশন চ্যানেল জ্বালিয়ে দেয়নি, কিন্তু তারা জ্বালিয়ে দিয়েছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে মানুষের ঘরবাড়ি পুড়িয়েছে তারা একই কায়দায় মানুষের সম্পত্তি পুড়িয়েছে, রাষ্ট্রের সম্পত্তি পুড়িয়েছে। ঘরবাড়ি পুড়িয়েছে।

ড. হাছান বলেন, লস অ্যাঞ্জেলসে আমাদের মিশনের সামনে একটি বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে পাকিস্তানিরা যোগ দিয়েছিল। বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেটি আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। একইভাবে আমাদের বিভিন্ন মিশনের সামনে যে বিক্ষোভ হয়েছে সেখানে বিএনপি-জামায়াত চক্র পাকিস্তান কমিউনিটির সহায়তা নিয়েছে। সেই সহায়তা নিয়ে এসব জায়গায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে এবং গুজব ছড়াচ্ছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে সবার কাছে নোট পাঠিয়েছিলাম যে এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, এটি নিয়ে যেন বিদেশি দূতাবাসগুলো বা কূটনীতিকরা গণমাধ্যমে কোনো বিবৃতি না পাঠায়। তাদের রাষ্ট্রীয় পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গায় বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে এবং তারা সেটি মেনে চলেছে। আজ সেজন্য গণমাধ্যমকে সেখানে ডাকিনি। তারাও গণমাধ্যমে কথা বলতে চাননি। তারা এটি মেনে চলেছেন। অতীতে এ ধরনের কিছু ঘটলেই আমাদের কূটনীতিকদের উদ্বুদ্ধ করা হতো কথা বলার জন্য। এবার আপনারা (গণমাধ্যম) করেননি সেজন্য আপনাদেরও ধন্যবাদ জানাই।