প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি শ্রেণীকক্ষ, বারান্দায় চলে শিক্ষার্থীর পাঠদান
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি ভবনে মাত্র দুইটি কক্ষ। একটি শিক্ষকদের অফিস রুম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অন্যটি শিক্ষার্থীদের শ্রেণী কক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে শিশু শিক্ষার্থীর নিয়মিত পাঠদান চলছে স্কুলের বারান্দায় ও শিক্ষকদের অফিস রুমে ব্রাঞ্চ পেতে।
এমন একটি স্কুলের সন্ধান মিলেছে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নে। স্কুলটির নাম বারাজান নিগম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। সরেজমিনে বিদ্যালয়টিতে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।বিদ্যালয়টিতে ছাত্র- ছাত্রী সংখ্যা ৮৬ জন। শিশু শ্রেণীতে ১১ জন, প্রথম শ্রেণীতে ১৫ জন, দ্বিতীয় শ্রেণীতে ১১ জন, তৃতীয় শ্রেণীতে ১৭ জন, চতুর্থ শ্রেণীতে ১৩ জন ও পঞ্চম শ্রেণীতে ১৬ জন।
গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা রমজান আলী জানান, স্কুলটি হওয়ায় গ্রামের কৃষক ও দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা বিদ্যালয়ে খুব সহজে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু শ্রেণী কক্ষের অভাবে বেশী ছেলে মেয়ে কে পড়ানোর সুযোগ নেই। তাই সচ্ছল পরিবারের সন্তানদের এখানে এই স্কুলে ভর্তি করায় না। তাদের অন্যত্র ভর্তি করায়। ফলে শিক্ষার্থী সংখ্যা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। নতুন ভবন সহ আধুনিক সুযোগ সুবিধা পেলে শিক্ষার্থী কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে বলে জানান।
অভিভাবক আব্দুর রহমান জানান, বিগত সরকারের আমলে এই এলাকার সন্তান ১০ বছর মন্ত্রী ছিলেন। তার কাছে স্কুলটির একটি ভবন নির্মাণে গিয়েও পাওয়া যায়নি। এছাড়াও চলবলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মোঃ মিজানুর রহমান মিজু। তিনি পর পর তিন বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ছিলেন। তিনি নির্বাচনের আগে প্রতিবার শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন। নির্বাচিত হয়েই ভুলে যান। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজামান আহম্মেদ তার নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের তেমন কোন ভূমিকা পালন করেনি। শুধু নিজের ও পরিবারের উন্নয়নে ব্যস্ত ছিলেন।
পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোছাঃ নুসরাত জাহান রাফিকা জানায়, বারান্দায় কোন ফ্যানের ব্যবস্থা নেই। রাস্তার পাশে স্কুলটি গাড়ির শব্দে ক্লাসে পাঠদানে মনোযোগ থাকে না। নেই কোন স্বাস্থ্য সম্মত টয়লেট নেই। নেই পয়নিস্কাশন ব্যবস্থা। বিশুদ্ধ পানি পানের জন্য একটি নলকূপ পর্যন্ত নেই। গরমে পানি পান করতে বাজারের দোকানে অথবা অন্যের বাড়িতে যেতে হয়।
বারাজান নিগম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুধাংশু কুমার রায় জানান, বিদ্যালয়টিতে শ্রেণী কক্ষের অভাবে পাঠদানের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। বাধ্য হয়ে শিক্ষকদের রুমে ও বারান্দায় ক্লাস নিচ্ছি। নতুন ভবন নির্মাণ জরুরী হয়ে পড়েছে। প্রতিবছর বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আসছি। এই হচ্ছে, এই হবে বলে নতুন ভবন আর হয় না।
কালীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোছাঃ আবেদা সুলতানা জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। এই স্কুলটিতে নতুন ভবনের খুব প্রয়োজন। হয়তো খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার রায় চৌধুরী জানায়, উপজেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে আমরা যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেছি। এটি আমাদের নজরে আছে। দ্রুত জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রপোজাল পাঠানো হবে। আশা করছি খুব শীঘ্রই এর ভালো ফলাফল পাবো।