বানারীপাড়ায় মাদ্রাসার ছাত্র ইয়াসিনের মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজাল, লাশ খালে ফেলেন
বরিশালের বানারীপাড়ায় মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র ইয়াসিন হত্যার বিচারের দাবিতে ২১ অক্টোবর সোমবার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের আউয়ার বাজারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বানারীপাড়ার সিরাজুল ইসলামের ছেলে আউয়ার দারুল উলুম মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র ইয়াসিনের মৃত্যু নিয়ে নতুন তথ্য দিল অত্র মাদ্রাসার সহপাঠীরা। দিন যতই যাচ্ছে ইয়াসিনের মৃত্যু নিয়ে রহস্যের জট ততই খুলছে। মৃত্যুর পরপরই শিক্ষকরা মাদ্রাসা বন্ধ করে ঘা ঢাকা দিয়েছেন। মাদ্রাসার পরিচালক, সুপার অন্যান্য শিক্ষকরা ও রয়েছে পলাতক। এ থেকে সন্দেহ আরো গণীভূত হয়।
শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) ওই শিক্ষার্থীর লাশ স্থানীয় আউয়ার খাল থেকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত ইয়াসিন উপজেলার তালাপ্রসাদ গ্রামের মৃত সৈয়দ সিরাজুল হকের ছেলে।


অভিযোগ রয়েছে- অত্র মাদ্রাসার পরিচালক আলমগীর হোসেন ও ভায়রা হাফেজ মাওলানা আব্দুর রব মাদ্রাসাটিকে নিজের বাড়ি ঘর মনে করতেন। বাচ্চাদের দিয়ে সব ধরনের কাজকর্ম করাতেন। সরে জামিন তদন্ত এবং অত্র মাদ্রাসার ছাত্র মুমিনের ভাষ্য মতে ঘটনার দিন মাদ্রাসার শিক্ষকরা ছাত্রদের দিয়ে মাটি টানার কাজ করাচ্ছিল। এতে ইয়াসিন ক্লান্ত হওয়ায় বিশ্রাম নিতে চাইলে শিক্ষকরা মেনে না নিয়ে পুনরায় মাটি টানতে বলে। মাটি টানতে অপারগতা দেখালে অত্র মাদ্রাসার রায়হান নামের এক শিক্ষক ইয়াসিনকে মারধর করে, তারপরও ইয়াসিন মাটি টানতে রাজি না হওয়ায় ইয়াসিন কে শিক্ষক রায়হান খাড়াভাবে লাথি মারেন। তখন সে দেওয়ালে মাথার পিছনে আঘাত পায় ও সাথে সাথে ইয়াসিন অজ্ঞান হয়ে যায়। তখন চিকিৎসা না করে ইয়াসিনকে কাঁথা মুড়িয়ে মাদ্রাসায় একটি কক্ষে আটকে রাখে। সাথে সাথে মাদ্রাসা ছুটি দিয়ে দেয়। হয়তোবা চিকিৎসা করালে ছেলেটি বাচতেও পারতো। বিনা চিকিৎসা হাফেজ ছেলেটি মারা গেল আক্ষেপ করে এমনটাই বললো এলাকাবাসীরা।
বিক্ষোভ মিছিলে সবাই ইয়াসিন হত্যার বিচার দাবি জানিয়ে এলাকাবাসী বলেন- মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ প্রথমে ঘটনা ভিন্ন দিকে নিবার জন্য গভীর রাতে মাদ্রাসার শিক্ষকগণ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বর্গ ইয়াসিনের লাশ নদীতে ফেলে দেয়।
মাদ্রাসার নিকটবর্তী এক বাসিন্দা আঃ সালাম ও তার স্ত্রী হাসিনা বেগম জানান-ওই মাদ্রাসার শিক্ষকরা প্রায় সময়ই ছাত্রদের বেধড়ক পিটায় এছাড়াও বছর-খানেক পূর্বে আমিনুল নামের এক ব্যক্তির ছেলেকে পিটিয়ে আহত করার দায়ে শিক্ষকদের নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছিল। মাদ্রাসার পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা ইউসুফের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন মাদ্রাসায় কি হয় তা আমাদের কখনো জানায় না অথচ আমরা মাদ্রাসার একান্ত নিকটের বাসিন্দা। সৈয়দকাঠি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবু হানিফ হাওলাদার ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ রফিকুল ইসলাম খান, যুবদল আহবায়ক মোঃ হাবিবুর রহমান,সদস্য সচিব ডা. মোঃ মহসিন মাদ্রাসা ছাত্র ইয়াসিনের মৃত্যুর সত্য উদঘাটনের করে প্রকৃত অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দাবি জানিয়েছেন।
বানারীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিন উদ্দিন বলেন, লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া শিশু শিক্ষার্থীর ভিডিও তদন্ত করেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য-গত ১৮ অক্টোবর আউয়ারের বাজারের উত্তর পাশের কবির মোল্লার সমিলের পাশে স্থানীয়রা খালের মধ্যে একটি ভাসমান লাশ দেখতে পেয়ে থানা পুলিশকে খবর দিলে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাস উত্তোলন করে। ইয়াসিন কোরআন শরীফের ২৪ পারা হেফজ সম্পন্ন করেছে। বাবা সিরাজুল ইসলাম ও মাতা শাহানা বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে ইয়াসিন ছোট সন্তান। তার মৃত্যুতে পরিবারের মধ্যে শোকের মাতম বইছে। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ বিক্ষোভ সমাবেশে এলাকাবাসী এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক বিচার দাবি জানিয়েছেন এবং যারা এই ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তাদেরকেও আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত শাস্তি দেওয়া হোক এ দাবি ও জানিয়েছেন।