হিজবুল্লাহর নতুন প্রধানকে যে হুঁশিয়ারি দিল ইসরায়েল

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৫:০১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩০, ২০২৪

ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহর প্রয়াত প্রধান সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার পর দীর্ঘদিন গোষ্ঠীটির কোনো শীর্ষ নেতা ছিলেন না। অবশেষে লেবাননের সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটি শেখ নাঈম কাসেমকে তাদের প্রধান হিসেবে ঘোষণা করেছে। তিনি এতদিন ইরান সমর্থিত ওই গোষ্ঠীর উপমহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) হিজবুল্লাহর নতুন প্রধানের নাম ঘোষণা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইহুদিবাদী ইসরায়েল। নাইম কাশেমের মেয়াদ হবে ‘সাময়িক’, তিনি বেশি দিন টিকবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসরাইল।

ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে এই প্রতিক্রিয়া জানান। ইয়োভ গ্যালান্ট লিখেছেন- ‘সাময়িক নিয়োগ, দীর্ঘদিনের জন্য নয়।’ মূলত এই প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে ‘হুমকি’ দিলেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

অন্যদিকে এক্সে ইসরাইল সরকারের দাপ্তরিক আরবি ভাষার অ্যাকাউন্টে দেওয়া পোস্টে বলা হয়, তিনি (নাইম) যদি তার পূর্বসূরি হাসান নাসরুল্লাহ ও হাশেম সাফিউদ্দিনের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন, তাহলে এই অবস্থানে (হিজবুল্লাহপ্রধান) তার মেয়াদ সংগঠনটির ইতিহাসে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত হতে পারে।

একই পোস্টে সতর্ক করে আরও বলা হয়েছে, লেবাননে হিজবুল্লাহর সামরিক সক্ষমতাকে ধ্বংস করা ছাড়া আর কোনো সমাধান নেই।

কে এই নাইম কাসেম?

Nagad

১৯৫৩ সালে বৈরুতে জন্মগ্রহণ করেন নাইম কাসেম। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় লেবাননের শিয়া দল আমল মুভমেন্টের মাধ্যমে। ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের প্রভাব তাকে আকৃষ্ট করে। হিজবুল্লাহর প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক সভাগুলোতে অংশ নিয়ে তিনি সংগঠনটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৯১ সালে হিজবুল্লাহর তৎকালীন মহাসচিব আব্বাস আল-মুসাভি কাসেমকে সংগঠনের উপ-প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। মুসাভি পরবর্তীতে এক ইসরায়েলি হামলায় নিহত হলে হাসান নাসরাল্লাহ নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তার বিশ্বস্ত সহকর্মী হিসেবেও সংগঠনের নেতৃত্ব গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন কাসেম।

হিজবুল্লাহর মুখপাত্র হিসেবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে কথা বলা থেকে শুরু করে সংগঠনের রাজনৈতিক পরিকল্পনাগুলোতে নাইম কাসেমের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল লক্ষ্যণীয়।

গত ৮ অক্টোবর এক টেলিভিশন ভাষণে নাইম কাসেম ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর সংঘাতকে ‘কে আগে চোখের জল ফেলবে’ এমন এক যুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, হিজবুল্লাহ কখনোই প্রথমে চোখের জল ফেলবে না।

তবে লেবাননের সংসদীয় স্পিকার নাবিহ বেরির যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানিয়ে তিনি ইঙ্গিত দেন, গাজা যুদ্ধবিরতির শর্ত ছাড়াই এই আলোচনা হতে পারে। এটি হিজবুল্লাহর বর্তমান অবস্থানের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন হিজবুল্লাহর তৎকালীন প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ। এরপর কাসেম প্রথমবারের মতো ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশ্য ভাষণে বলেন, সংগঠনটি দ্রুত নতুন নেতা নির্বাচন করবে এবং ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে।

নাইম কাসেমের নেতৃত্বে হিজবুল্লাহর লক্ষ্য ও কৌশলে পরিবর্তন আসবে বলে অনেকে মনে করলেও তার সাম্প্রতিক বক্তব্যে স্পষ্ট যে, ইসরায়েলের প্রতি কড়া অবস্থান বজায় রেখেই সংগঠনটি সামনের দিকে অগ্রসর হবে।