ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে উত্তাল রাজধানীসহ সারা দেশ
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ‘দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’ কর্মসূচির আওতায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে রাজপথে নেমে প্রতিবাদ জানান।
সোমবার (৭ এপ্রিল) সকাল থেকে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, গুলশান, বসুন্ধরা, তেজগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন। এই কর্মসূচিতে সাধারণ জনগণ, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ, এমনকি শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও একাত্মতা প্রকাশ করেন।


সায়েন্সল্যাব এলাকায় সকাল থেকেই একের পর এক মিছিল বের হয়। দুপুর সোয়া ১২টায় ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আসা শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হন। সেখানে তারা ইসরায়েলবিরোধী নানা স্লোগান দেন এবং ফিলিস্তিনের পতাকা বহন করেন।
একই সময়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (NSU), আইইউবি, এআইইউবি ও ইউআইইউ’র শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে অংশ নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তারাও কর্মসূচিতে সংহতি জানান।
গুলশানে মার্কিন দূতাবাস এলাকায় শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বিক্ষোভ মিছিল বের করলে সাময়িকভাবে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। সেখানে উপস্থিত পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখে।
তাদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল— ‘ফিলিস্তিন মুক্তি পাক’, ‘আল আকসা মুক্ত করো’, ‘ভয়েস ফর দ্য ভয়েসলেস’, ‘যাদের হাতে মুসলিমদের রক্ত, তাদের সাথে কীসের বন্ধুত্ব’ ইত্যাদি। স্লোগানে প্রকম্পিত হয় রাজপথ— “ফ্রি, ফ্রি প্যালেস্টাইন”, “জায়নবাদ নিপাত যাক”, “বয়কট ইসরায়েল”।
এছাড়া, বুয়েট ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এবং তেজগাঁওয়ে সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। সায়েন্সল্যাব এলাকায় বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন কর্মসূচিতে।
‘দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’ কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বাড্ডায় মিছিল বের করেছেন ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
‘দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’ সমর্থনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), রাজশাহী বিদ্যালয় (রাবি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাপ্রবি), ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) ক্যাম্পাসেও।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনে যেভাবে সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে তা মানবতাবিরোধী অপরাধ। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। বাংলাদেশ সরকারকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে এবং মুসলিম বিশ্বকে একযোগে এই বর্বরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
শুধু রাজধানী ও বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানেই আজ বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন হচ্ছে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে। এর মধ্যে ঝালকাঠিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের পাওয়া গেছে। সকাল ৯টা থেকে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল নিয়ে ফায়ার সার্ভিস মোড়ে জড়ো হন হাজারো জনতা।
এসময় এ সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জরুরি সেবা ছাড়া সবধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট বন্ধ ছিল। এ কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে ঝালকাঠির বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
লক্ষ্মীপুরেও হরতাল ও বিক্ষোভ মিছিলের খবর পাওয়া গেছে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’ কর্মসূচির সমর্থনে। ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচি বাস্তবায়নে গাজাবাসীর জন্য আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে স্থানীয় সাধারণ মানুষ।
এদিন সকাল ৯টার দিকে সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে শহরের উত্তর তেমুহনী এলাকায় লক্ষ্মীপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে হরতাল পালন করতে দেখা যায়। এ সময় সড়কের দুইপাশে যানজট সৃষ্টি হয়। এছাড়াও গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বাদ জোহর চকবাজার জামে মসজিদ থেকে বিশাল বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন রয়েছে।
‘লাখো শহীদের রক্তের ঋণ, ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন’ স্লোগানে স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করে ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিল ও সমাবেশ করা হয়েছে যশোরে।সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার এই বিক্ষোভে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি এমএম কলেজ, সিটি কলেজ, আল হেরা ডিগ্রি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন। বিশাল এই মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে।
এদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা অবধি নরসিংদী শহরে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। সকাল থেকেই শহরের শিক্ষাচত্বর মোড়ে জড়ো হতে শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবক ও অন্যান্য পেশাজীবীদের সমন্বয়ে বিক্ষোভ মিছিলটি নরসিংদী প্রেসক্লাব এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জেলখানার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
মূলত, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর থেকে আবারও অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। প্রতিদিনই যেন বাড়ছে হামলার তীব্রতা। দখলদার বাহিনীর নির্বিচার এসব হামলায় গাজায় দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। এ অবস্থায় গত ৬ এপ্রিল গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে সোমবার (৭ এপ্রিল) বিশ্বব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ঘোষণা দেয় ফিলিস্তিনি ন্যাশনাল এবং ইসলামিক ফোর্সেস গ্রুপ। কর্মসূচির নাম দেওয়া হয় ‘দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’। দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সূত্রপাতের পরপরই ইয়াসির আরাফাতের অনুমোদনে এবং মারওয়ান বারগুতির নেতৃত্বে গঠিত একটি জোট হলো এই ফিলিস্তিনি ন্যাশনাল এবং ইসলামিক ফোর্সেস গ্রুপ।
তাদের বৈশ্বিক এ ধর্মঘটের ডাকে সাড়া দিয়েই আজ সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। কর্মসূচিতে একাত্ম হচ্ছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষও।