বাংলাদেশের কাগুজে মুদ্রার নকশার কারিগর কে?
বাংলাদেশের কাগুজে মুদ্রার নোটে আবারও পরিবর্তন এসেছে। বাজারে আসছে নতুন নোট, যার নকশা নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছে। কিন্তু খুব কম মানুষ জানেন—এসব অসাধারণ নকশার কারিগর কে?
বাংলাদেশি মুদ্রার নোটগুলোর নকশাকার নিভৃতচারী শিল্পী মুছলিম মিয়া। দেশের প্রচলিত প্রায় সব নোটেই রয়েছে তাঁর নিপুণ হাতের ছাপ। তিনি টাকশালের সাবেক জেনারেল ম্যানেজার (প্রোডাকশন অ্যান্ড কন্ট্রোল, ডিজাইন অ্যান্ড এনগ্রেভিং)। ২০২০ সালে এই পদ থেকে অবসর নেন তিনি। বর্তমানে নিজের স্টুডিওতে কাজ করে চলেছেন নীরবে।


কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর ধুলদিয়া গ্রামে জন্ম মুছলিম মিয়ার। ছোটবেলায় দেয়াল, পাতা, এমনকি ইটের গুঁড়া দিয়েও আঁকতেন তিনি। এসএসসি পাসের পর বড় ভাইয়ের হাত ধরে ভর্তি হন মোহাম্মদপুরের গ্রাফিক আর্ট কলেজে (বর্তমানে চারুকলা অনুষদ)। ১৯৮৪ সালে ছাপচিত্র বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করেন।
প্রথমে বিজ্ঞাপনী সংস্থায় চাকরি করলেও সেখানে মন বসেনি তাঁর। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের এনগ্রেভার পদের জন্য আবেদন করেন। ভাইভায় পরীক্ষকের ছবি এঁকে তাক লাগিয়ে দেন। সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর পথচলা।
১৯৮৫ সালে শিক্ষানবিশ এনগ্রেভার হিসেবে টাকশালে যোগ দেন। ১৯৮৭ সালে পাঠানো হয় সুইজারল্যান্ডে, যেখানে টাকা ও মুদ্রা খোদাই বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন। এক ইতালিয়ান প্রশিক্ষক তাঁর কাজে মুগ্ধ হয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন—“তুমি অনেক দূর যাবে।”
দেশে ফিরে মুছলিম মিয়া ডিজাইন করেন বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত নীল রঙের ১০ টাকার নোট, সংসদ ভবনসংবলিত ৫০ টাকার নোট, স্মৃতিসৌধ সংবলিত ৫০০ টাকার নোট। এরপর আসে আরও সাফল্য—১০০, ৫০০ ও দেশের প্রথম ১০০০ টাকার নোটের নকশাও তাঁর হাতেই।
পলিমারভিত্তিক ১০ টাকার নোট তৈরির ডিজাইন তিনি বাসার কম্পিউটারে করেন, এতে সরকারের কোটি টাকার সাশ্রয় হয়। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ‘মই দেওয়া’ চিত্রকর্ম স্থান পায় ৫০ টাকার নোটে, সেই নোটের নকশাও করেন তিনি।
২০১১ সালে একযোগে ২ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত নতুন ৯টি নোটের নকশা করেন মুছলিম মিয়া। এসব নোটে স্থান পেয়েছে শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, সংসদ ভবনসহ দেশের গৌরবময় স্থাপনাগুলোর নিখুঁত প্রতিচ্ছবি।
শত শত কোটি টাকার নোটে যাঁর হাতের ছাপ, সেই মুছলিম মিয়া থেকেছেন নিরবে প্রচারের আড়ালে। বাংলাদেশি মুদ্রার ইতিহাসে তাঁর অবদান নিঃসন্দেহে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।