করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টে উদ্বেগ, নমুনা পরীক্ষার অর্ধেকই পজিটিভ

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ, জুন ৪, ২০২৫

দেশে আবারও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে। দীর্ঘ সময় স্থিতিশীল থাকার পর হঠাৎ করেই নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণের হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। এতে জনমনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে—ফিরে আসছে কি সেই মহামারির দিনগুলো? স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২ জুন দেশে ২৪ ঘণ্টায় ২৮টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৪ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। অর্থাৎ, পরীক্ষার অর্ধেকই পজিটিভ। একই সময়ে অবশ্য করোনায় কেউ মারা যায়নি। দেশে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭২০ জনে। মহামারির শুরু থেকে গড় শনাক্তের হার ১৩.০৫ শতাংশ হলেও গত ২৪ ঘণ্টায় তা দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, দেশে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই সংক্রমণ ধীরে ধীরে বাড়ছে। শুধু রাজশাহীতেই গেল দুই দিনে ১১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে চারজন চিকিৎসক রয়েছেন।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. খন্দকার মো. ফয়সাল আলম বলেন, আক্রান্তদের উপসর্গ প্রায় একই ধরনের এবং তাদের পরিবারের সদস্যরাও একই লক্ষণ প্রকাশ করছেন।

পার্শ্ববর্তী ভারতেও সংক্রমণ বাড়ছে। দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২৬ মে থেকে ৩০ মে পর্যন্ত চারদিনে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়ে ২৭১০ জনে পৌঁছেছে। কেরালা, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, গুজরাটসহ বিভিন্ন রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এখন পর্যন্ত অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের অধিকাংশই বয়স্ক।

ভারতের ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, ভারতে শনাক্তের কিছুদিন পরই বাংলাদেশেও নতুন ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণের ঘটনা বাড়ছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘এই সময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপও রয়েছে। পাশাপাশি আবহাওয়াজনিত কারণে সর্দি, কাশি, জ্বর বাড়ছে। তবে করোনাভাইরাস নিয়ে আগের মতো উদ্বেগের প্রয়োজন নেই। সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই ঝুঁকি অনেকটা কমে যাবে।’

Nagad

তিনি আরও বলেন, যারা করোনা ও ডেঙ্গুতে একসঙ্গে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের জটিলতা বেশি হচ্ছে। বয়স্ক ও জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবশ্যই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

১ জুন রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র অর্ভিন আদিত্য করোনা পরবর্তী ফুসফুসের জটিলতায় মারা যান। চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চেষ্টার পরও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। এটি স্মরণ করিয়ে দেয়, করোনা পরবর্তী জটিলতা অনেক সময় বিপজ্জনক হতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক ডা. ফরহাদ হোসাইন বলেন,‘করোনাভাইরাস এখন আর পুরোপুরি নির্মূল হওয়ার নয়। মাঝে মাঝে নতুন ভ্যারিয়েন্ট দেখা দেবে, তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই প্রতিরোধ সম্ভব।’

করোনার বর্তমান প্রভাব এখনো মহামারির পর্যায়ে না পৌঁছালেও সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। সর্দি-কাশি বা জ্বর দেখা দিলে পরীক্ষা করানো এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। পাশাপাশি, মাস্ক পরা, হাত ধোয়া এবং ভিড় এড়িয়ে চলার মতো স্বাস্থ্যবিধি মানলে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। সূত্র: ঢাকা মেইল