Print

সারাদিন

সাগরকন্যা ‘কুয়াকাটা’ যেন কন্যা হয়েই থাকুক!

প্রকাশিত: ৫:৩৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১২, ২০২২

মোঃ কামরুল ইসলাম:

সমুদ্র সৈকতের কথা মনে হলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে কক্সবাজার সৈকতের ছবি। পাশাপাশি চট্টগ্রামের পতেঙ্গার ছবিও উঠে আসে। কিন্তু বাংলাদেশের আরো একটি সমুদ্র সৈকত রয়েছে যা অবহেলায় নিমজ্জিত, তা হচ্ছে দক্ষিণ বঙ্গের কুয়াকাটা। বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমও সেইভাবে কুয়াকাটাকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেনি, যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে কক্সবাজার কিংবা চট্টগ্রামকে।

কিছুদিন আগেও কুয়াকাটার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য পর্যটকদের প্রধান সমস্যা ছিলো যোগাযোগ ব্যবস্থা। সেই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের সাথে সাথে কুয়াকাটায় দর্শনার্থীদের ব্যাপক সমাগম দেখা যাচ্ছে। ঢাকা থেকে মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে, ভাঙ্গা-বরিশাল এক্সপ্রেসওয়ে সহ নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরপুর দেশের সর্ববৃহৎ পদ্মা সেতু যোগাযোগের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব পরিবর্তন এনে দিয়েছে।

কুয়াকাটা দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীতে অবস্থিত। ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সমুদ্র সৈকত “সাগর কন্যা” হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। কক্সবাজারের চাকচিক্য এখনো গ্রাস করেনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কুয়াকাটাকে। বিশাল বিশাল অট্টালিকা গড়ে উঠেনি। সমুদ্র পাড়ে হকার, ফটোগ্রাফারদের আধিক্য এখনো গ্রাস করতে পারেনি কুয়াকাটাকে।

কুয়াকাটায় পর্যটকরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুঁজে ফিরে তিনচাকার বাহন রিকশা কিংবা অটো রিকশা বা মটর সাইকেলে চড়ে। মায়াবী সূর্যোদয় আর রক্তিম সূর্যের আভা মিশিয়ে সূর্যাস্ত একই স্থান থেকে দেখার সৌভাগ্য সাধারণত হয়ে উঠে না। কুয়াকাটা সেই সৌভাগ্য বহন করছে আপনার জন্য।

প্রকৃতির নির্মল পরিবেশ উপভোগের জন্য কুয়াকাটা ভ্রমণ উপভোগ্য হয়ে উঠে তখন, যখন সমুদ্র সৈকতের চেয়ারে অলস সময়ে রাতের তারা আর জোৎস্নার আলো শরীরে মেখে সামুদ্রিক মাছের ফ্রাই আর বারবিকিউ সহ রাতের খাবার খাওয়ার সুযোগ। যা ভালোলাগার কল্পনাকেও হার মানাতে পারে কুয়াকাটার নিস্তব্ধ নির্ঝঞ্জাট পরিবেশ। মধ্যরাত অবধি নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো পরিবেশ সমুদ্রের জোয়ার ভাটায় ঢ়েউয়ের গর্জন উপভোগ করার তাড়না বারবার কুয়াকাটায় আসার ইচ্ছে জাগিয়ে তোলে।

ঢাকা কিংবা সারাদেশ থেকে দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় আসার জন্য সড়কপথ, নদীপথ কিংবা আকাশপথের সুযোগ রয়েছে। ভবিষ্যতে রেলপথে কুয়াকাটা ভ্রমণের সুযোগ তৈরী হচ্ছে। নিজেকে আবিষ্কার করার জন্য কোলাহল মুক্ত পরিবেশের খোঁজে পর্যটকরা কুয়াকাটায় ভ্রমণ করছে। কুয়াকাটার প্রধান সৈকত থেকে পূর্ব ও পশ্চিম দু’দিকে বেশ কিছু পর্যটন গন্তব্য রয়েছে, যা পর্যটকদের কুয়াকাটা ভ্রমণকে উপভোগ্য করে তুলে।

Nagad
Nagad

পূর্ব ও পশ্চিমের ঝাউবন এক মায়াবী পরশের ছোঁয়া দিতে ঠায় দাড়িয়ে আছে পর্যটকদের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। তিন নদীর মোহনা, লেম্বুর চর, কাউয়ার চর, বৌদ্ধ মন্দির, সবুজ অরণ্য, পশ্চিমের সৈকতের পাশে ঝাউবনের সৌন্দর্য উপভোগের সাথে সাথে সুন্দরবনের একাংশ দেখার সুযোগ। কাকডাকা ভোরে সূর্য উদয়ের সৌন্দর্য দর্শনে কাউয়ার চড়ে ভ্রমণ মনে রাখবার মতো বাস্তব চিত্র স্মৃতি হয়ে থাকবে।

ফাতরার বন কিংবা কুয়াকাটার মিষ্টি পানির কুয়া, গঙ্গামতির জঙ্গল, মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির কিংবা সীমা বৌদ্ধ মন্দির দর্শন করা যেতে পারে কুয়াকাটা ভ্রমণে।

রাখাইনদের হাতে তৈরী নানারকম উপকরণ পাওয়া যায় রাখাইন মার্কেটগুলোতে। আতিথেয়তা যেন কুয়াকাটাবাসীদের ঐতিহ্যের অংশ। যা পর্যটন গন্তব্যগুলোর প্রধান উপজীব্য। নানা শ্রেনী পেশার পর্যটকদের আবাসন ব্যবস্থায় পর্যাপ্ততার জন্য ইতিমধ্যে বেশ কিছু আধুনিক হোটেল মোটেল, রিসোর্ট নির্মাণের কাজ চলছে। অধিক পর্যটকদের ধারণ করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে অবকাঠামো গঠনে আরো বেশী প্রো-একটিভ হয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে যা হতে হবে পর্যটক বান্ধব।

লেখক, মোঃ কামরুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।