Print

সারাদিন

কুয়াকাটায় ২৪০ বছরের প্রাচীন নৌকাটি অযত্নে-অবহেলায়

প্রকাশিত: ৬:০২ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১২, ২০২২

রাসেল কবির মুরাদ, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:

কুয়াকাটায় প্রায় একযুগ আগে সৈকতের বুক চিরে জেগে উঠেছিলো ২৪০ বছরের পুরাতন প্রাচীন পালতোলা নৌকা। কিন্তু এটিকে ভালো ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হয়নি গত দশ বছরেও। এরফলে অযত্ন-অবহেলায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে প্রত্নতাত্ত্বিক এ নিদর্শনটি।

নৌকাটি ২০১৩ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় কুয়াকাটা শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার সংলগ্ন বেড়িবাঁধের পাশে স্থাপন করে। সেই থেকে এখনও অরক্ষিতই রয়ে গেছে, নেই রাত্রিকালীন আলোর ব্যবস্থা। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রাচীন এ নৌকাটি যথাযথভাবে সংস্কার ও রক্ষণাক্ষেনের দাবি জানিয়েছে পর্যটকসহ স্থানীয়রা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৭৮৪ সালের পরে রাখাইন সম্প্রদায়ের পূর্বপুরুষরা এই নৌকাযোগে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে আসে। পর্যটকদের ব্যাপক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এ নৌকাটি ২০১২ সালে জেলেদের মাধ্যমে স্থানীয় সাংবাদিকদের নজরে আসে। কুয়াকাটা সৈকতের জিরোপয়েন্ট থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরত্বে পূর্বদিকে বালুর বুক চিরে নৌকাটি তখন সামান্য বেড়িয়ে আসে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী টেকনিক্যাল সহায়তায় বাংলাদেশ রেলওয়েকে সম্পৃক্ত করে ২০১৩ সালের ২৭ ফেরুয়ারি রেললাইনে তুলে তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বৌদ্ধবিহারের পাশে প্রতিস্থাপন করা হয়। ৭২ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৪ ফুট প্রস্থের নৌকাটির ওজন ৯০ টন । এই নৌকাটি ২০০ বছর বা তারও অধিক পুরানো। এটি রাখাইনদের তৈরি নৌকা হতে পারে বলে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের দাবি।

ওইসময় নৌকা থেকে উদ্ধার করা হয় তামার তৈরি পেরেক, নারিকেলের মালাই, নারিকেলের ছোবলা দিয়ে বানানো রশি, ভাঙা মৃৎপাত্রের টুকরো, প্রচুর ধানের বহিরাবরণ/চিটা, পাটকাঠি, মাদুরের অবশেষ, পাটের তৈরি ছালার নিদর্শন, লোহার ভারি ও বিশালাকৃতির শিকল। যার মধ্যে বেশ কিছু নিদর্শন বর্তমানে বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরে প্রদর্শিত রয়েছে।

রাজশাহী থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক সিরাজ উদ্দিন তালুকদার বলেন, নৌকাটি উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় একযুগ আগে। কিন্তু এখনো সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা সম্ভব হয় নি এটা দু:খজনক। কুয়াকাটার কেরানীপাড়া রাখাইন নেতা উচাচিং মাতুব্বর বলেন, এ নৌকা তাদের পূর্বপুরুষরাই আরাকানে বসে তৈরি করেছে। এরপর এমন অন্তত ৫০টি নৌকাযোগে ১৫০টি পরিবার মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে এসে ১৭৮৪ সালে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা কুয়াকাটাসহ আশপাশের এলাকায় তারা স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

Nagad
Nagad

কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট এসোসিয়েশন (কুটুম) এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আমির বলেন, ২০১৩ সালে নৌকাটি সংরক্ষণ করলেও এটি যথাযথ ভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। নৌকাটি কুয়াকাটা বিচ থেকে একটু দুরে কোথাও সংরক্ষণ করা হলে আরো একটি পর্যটন স্পট বাড়বে। নৌকাটি থেকে যে সব নিদর্শন পাওয়া গেছে তা কুয়াকাটায় সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের দাবি জানান তিনি।

খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দায়িত্বরত প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের আ লিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা বলেন, প্রাচীন ও প্রাগৈতিহাসিক এ নৌকাটি সংরক্ষণের কাজ চলমান রয়েছে।

 

সারাদিন. ১২ ডিসেম্বর