Print

সারাদিন

প্রাণ, প্রকৃতি ও প্রতিবেশ রক্ষায় ‘প্রাকৃতিক কৃষি’

প্রকাশিত: ৯:৫৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৩, ২০২৩

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি:

মানিকগঞ্জের ঘিওরে শীতকালীন ফসল উৎসব ও কৃষি উন্নয়ন মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের সাইংজুরী-রামেশ্বরপট্টি খেলার মাঠে শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে মেলা শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।

মেলায় স্থানীয় অর্ধশত কৃষক-কৃষাণীরা তাদের উৎপাদিত শত প্রকার ফসল, ফল-ফুল, ঔষধি গাছ, গবাদিপশু, বিলুপ্তপ্রায় চাল ও মধু প্রদর্শণ করেন। এছাড়া পৌষের বাহারি পিঠা-পায়েস, কাঁচা খেজুর রস ও দেশীয় আদি সংষ্কৃতির উৎসবে দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো মানুষের সমাগমে মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। উপজেলার কাউটিয়া গ্রামে অবস্থিত প্রাকৃতিক কৃষি কেন্দ্র ও প্রাণবৈচিত্র খামারের কৃষক-কৃষাণীরা এ মেলার আয়োজন করেন।

মালিকানাহীন এই বিপণনকেন্দ্রে সংগঠনের নিজস্ব খামার মানিকগঞ্জের ঘিওর ছাড়াও ঝিনাইদাহ, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, মেহেরপুরের বেশ কয়েকটি গ্রাম থেকে আসছে বিভিন্ন ধরনের পরিবেশবান্ধব উপায়ে উত্পাদিত সবজি, ফল ও বীজ। আশপাশের তিন-চারটি গ্রামের চাষিদের মধ্যে বীজ সুরক্ষা, কেঁচো সার ও নিরাপদ ফসল উত্পাদনে উত্সাহিত করছে এই প্রাকৃতিক কৃষি খামার।

খামারটি কৃত্রিম রাসায়নিক সার, বিষ ও হরমোনমুক্ত, প্রাকৃতিক কৃষি গবেষণা, কৃষক-কৃষানি শিক্ষণ, উত্পাদন ও বীজ সুরক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। খামারটিতে দ্বিতল বাঁশের মাচার ঘর ও বন্যাসহনশীল বাড়ি নির্মাণ মডেল দেখানো হয়েছে। প্রাকৃতিক কৃষিকেন্দ্র সম্পূর্ণ সৌরবিদ্যুতে চলে থাকে। শতাধিক দেশি জাতের ফসল, পাখি, মৌমাছি, পোকামাকড়ে সমৃদ্ধ খামারটি প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষায় ভূমিকা রেখে চলেছে। খামারে মৌসুমভিত্তিক উত্পাদিত সবজি ঢাকার মোহাম্মদপুরে প্রাকৃতিক কৃষি বিপণনকেন্দ্রে বিক্রি করে থাকেন। কৃষিকেন্দ্রে কথা হয় দেলোয়ার জাহানের সঙ্গে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে পাশ করে ঢাকার একটি পত্রিকায় কৃষিবিষয়ক সাংবাদিকতা করছেন তিনি। পাশাপাশি নিজে কৃষিকাজ করা ছাড়াও অন্যদের প্রাকৃতিক উপায়ে কৃষিকাজে উত্সাহিত করছেন। অনার্সে দ্বিতীয় ও মাস্টার্সে প্রথম হয়েছিলেন দেলোয়ার। এরপর সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে চাকরির সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানে না গিয়ে সাংবাদিকতা করছেন। সার ও কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়া ফসল উত্পাদনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন।

Nagad
Nagad

দেলোয়ার জানান, ২০১৩ সালের মার্চে মানিকগঞ্জে জমি লিজ নিয়ে রাসায়নিক সার ও বিষমুক্ত প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে সবজি চাষের মাধ্যমে শুরু হয় প্রাকৃতিক কৃষির কার্যক্রম। বর্তমানে কাজ করছেন ১০ জন কর্মী ও সারা দেশের শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক। চাষিদের ফসলের ন্যায্যমূল্য দিতে ‘প্রাকৃতিক কৃষি আন্দোলন’ ২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবর থেকে ঢাকায় ‘প্রাকৃতিক কৃষি ফসল বিপণন’ কার্যক্রম শুরু করে। এ কাজে তাকে স্ত্রী ডালিয়া আক্তার ডলিও সহায়তা করে আসছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ বিপুল হোসেন বলেন, প্রাকৃতিক কৃষি এই এলাকার কৃষকদের প্রাকৃতিক উপায়ে চাষাবাদ করে কৃষিকে রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। মাঠকর্মীরা তাদের সমস্যার সমাধান ও পরামর্শ প্রদান করে আসছেন।

স্থানীয় বালিয়াখোড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল খান বলেন, তাদের এই কার্যক্রম সফল হলে বিষমুক্ত সবজি এবং কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে সহায়ক হবে।

প্রাকৃতিক কৃষি কেন্দ্রের পরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সকালে মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মাহেলা, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মতিন দেওয়ান, সমাজসেবক দেওয়ান রাজা, কৃষি খামারের প্রশিক্ষক ইফতেখার আহমেদ, স্থানীয় ইউপি সদস্য লেবু মিয়া, কৃষি উদ্যোক্তা আল আমিন, রফিকুল ইসলাম নওশাদ, প্রান্তিক কৃষক ধনী আহমেদ, সোনাই মিয়া, মো. তারা, মোতালেব হোসেন, কালাচাঁদ মিয়া প্রমুখ।

সারাদিন.১৩ জানুয়ারি