Print

সারাদিন

তুরস্কে আরও শক্তিশালী এরদোয়ান

প্রকাশিত: ৫:৫৪ অপরাহ্ণ, মে ২৯, ২০২৩

সারাদিন ডেস্ক

বিজয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর রেচেপ তাইপ এরদোয়ান রোববার (২৮ মে) রাতে নিজের প্রাসাদের বাইরে জড়ো হওয়া সমর্থকদের হর্ষধ্বনির জবাবে কিছুটা বেসুরো গলায় গান গাইলেও, নির্বাচনের হিসাব-নিকাশে তিনি ছিলেন প্রায় নিখুঁত।

মতামত জরিপ বোদ্ধা অথবা নির্বাচন বিশ্লেষকদের তুলনায় তিনি ভোটারদের মনোভাব খুব ভালো বুঝতে পেরেছিলেন। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলেছিলেন যে, এরদোয়ান বিরোধীদের কাছে হেরে যাবেন। অন্তত এবার আর সেটি হচ্ছেনা।

নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কুলুচদারুলুর সাথে তার পাওয়া ভোটের ব্যবধান চার শতাংশ। সন্দেহ নেই যে, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তৃতীয় মেয়াদে শাসন শুরু করলে হয়ত তার প্রতিফলন দেখা যাবে।

নেটোভূক্ত এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশ তুরস্কের নাগরিকেরা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নিয়েছেন। বেশিরভাগ ভোটার আরো এক মেয়াদে স্বৈরশাসনের অধীনে থাকতে রাজি, কিন্তু তারা কুলুচদারুলুর মতো অপরীক্ষিত গণতান্ত্রিক শাসনে থাকতে রাজি নয়।

বিরোধী নেতা নির্বাচনী প্রচারণায় নিজেকে ‘মিস্টার নাইস গাই’ বা ‘ভালোমানুষ’ হিসেবে তুলে ধরেছেন, যিনি তুরস্কের জন্য নতুন বসন্তের অঙ্গীকার করেছিলেন। পরের দিকে তিনি কিছুটা ডানপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন, শরণার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর অঙ্গীকার করেছিলেন।

এতে তিনি জাতীয়তাবাদী ভোটারদের কাছ থেকে হয়ত কিছু বাড়তি ভোট পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু নির্বাচনে জেতার জন্য তা যথেষ্ট ছিল না।

Nagad
Nagad

তুরস্কের ইসলামপন্থী নেতা এরদোয়ানের সাথে তার সমর্থকদের সম্পর্কের বয়স অন্তত ২০ বছরের পুরনো। অনেকেই তার মতো ধর্মীয় রক্ষণশীল। তারা এরদোয়ানের ভাল-খারাপ সব সময়ই সমর্থন দিয়ে গেছে এবং অতিরিক্ত মুদ্রাস্ফীতির মধ্যেও তাকে আরো পাঁচ বছর শাসন ক্ষমতায় থাকতে সহায়তা করেছে।

দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরপর রাজধানী আঙ্কারার রাস্তা উৎসবের শহর হয়ে ওঠে – মূহুর্তেই শহরটি যেন তুর্কী পতাকার ক্যালাইডোস্কোপে পরিণত হয়, গাড়ির হর্ন বাজিয়ে সড়কে উল্লাস করেন এরদোয়ানের সমর্থকরা।

অনেক সমর্থক এরদোয়ানের এক হাজার কক্ষের প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসের বাইরে গিয়ে জড়ো হয়। বিরোধী নেতা এই রাজপ্রাসাদকে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

৫০ বছর বয়সী হাতিস দুরান, স্কার্ফের নিচ থেকে যিনি হাসছিলেন, বলেন, “আমরা ধন্য হয়েছি যে আমাদের প্রেসিডেন্ট আবার আমাদের নেতৃত্ব দেবেন। এর চেয়ে বড় আর কোন আনন্দ হয় না। তিনি হচ্ছেন সেই নেতা যিনি পুরো বিশ্বকে অবজ্ঞা করেছিলেন এবং পুরো বিশ্বকে শিক্ষা দিয়েছেন।”

এখানেই তার আকর্ষণের একটি মূল জায়গা- এরদোয়ান একজন শক্তিশালী নেতা, আগামী দিনের সুলতান, যিনি কারো কাছে মাথা নত করেন না।

নির্বাচন থেকে পাওয়া বার্তা হচ্ছে, মানুষ আসলে ভালো মানুষের তুলনায় কঠোর একজন মানুষকে বেশি পছন্দ করে।

এখন তিনি নতুন করে উজ্জীবিত। দেশটির বিরোধীদল বাজেভাবে পর্যুদস্ত এবং ক্রেমলিন এই জয় উদযাপন করছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ ধরণের ফলই চেয়েছিলেন এবং আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই যে তিনিই প্রথম নেতা যিনি তুরস্কের নেতাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

পরিস্থিতি তার পক্ষে রাখার জন্য পুতিন সম্ভাব্য সব কিছুই করেছের, যার মধ্যে আছে রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাস কেনার ৬০০ মিলিয়ন ডলারের বিল পরিশোধের মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়া।

নির্বাচনে এরদোয়ান অনেক বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন- নগর এলাকায় নির্বাচনের অভিজ্ঞতা, জনগণের সান্নিধ্য এবং দেশের ৯০ শতাংশ সংবাদমাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণ।

সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, “শুধুমাত্র তুরস্ক জয়ী হয়েছে”- কিন্তু বিরোধী দল বা এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়কে আক্রমণ করতে এরদোয়ান সময় নষ্ট করেননি।

আসছে বছরগুলোতে দেশটিতে এই দুই সম্প্রদায়ই আগের চাইতে বেশি টার্গেটে পরিণত হতে পারে এবং মানবাধিকার ও স্বাধীন মত প্রকাশ আরো বেশি ক্ষুণ্ণ হতে পারে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ক্ষমতার ভারসাম্য আগের চাইতে কম থাকবে, আর সংযমী আচরণের জন্য তুরস্কের দীর্ঘস্থায়ী এ শাসকের সুনাম আছে বলে কেউ জানেন না।

ফলে যারা পরিবর্তন চেয়েছিলেন, প্রায় ৪৮ শতাংশ ভোটার, তারা হতাশায় পড়বেন এবং অনেক ক্ষেত্রে ভয়ে থাকবেন। অনেকে মনে করেন, ধর্মনিরপেক্ষ এই প্রজাতন্ত্রে এখন ধর্ম-চর্চা বেশি হবে এবং জনজীবনে স্বাধীনতা কমে যাবে।

এ বছরের অক্টোবরে তুরস্ক তার প্রতিষ্ঠান শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন করবে। তুরস্ক এখন ভগ্ন অর্থনীতির একটি বিভক্ত দেশ। সমালোচকরা বলছেন, প্রেসিডেন্টের হাতে এর কোনো সমাধান নেই।

আর যদি বলেন নির্বাচনের ফলাফল তুরস্কের প্রতিবেশী এবং তার নেটো মিত্রদের কোথায় দাঁড় করিয়েছে? তারা সজাগ থাকবেন, এজন্য যে তারা জানেন, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান মাঝেমধ্যেই আন্তর্জাতিক শান্তি-শৃঙ্খলার ব্যত্যয় করতে পছন্দ করেন। সূত্র- বিবিসি

সারাদিন/২৯ মে/এমবি