Print

সারাদিন

এবার গ্যাবনে সেনা অভ্যুত্থান, ৫৫ বছরের ক্ষমতার অবসান

প্রকাশিত: ১২:২১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৩১, ২০২৩

সারাদিন ডেস্ক

নাইজারের মতো আফ্রিকার দেশ গ্যাবনে বুধবার একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে দেশটির সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা এবং তারা অন্তর্বর্তীকালীন নেতা হিসাবে জেনারেল ব্রাইস ওলিগুই এনগুয়েমার-এর নাম ঘোষণা করেছে।

এর আগে রাজধানী লিব্রেভিলের রাস্তায় জেনারেল এনগুয়েমাকে তার সৈন্যরা কাঁধে তুলে বিজয় মিছিল করে।

ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট, আলী বঙ্গো তার বাড়ি থেকে একটি ভিডিও বার্তায় সবার সামনে আসেন এবং তিনি তার ‘সারা বিশ্বের বন্ধুদের’ তার পক্ষে ‘সরব হওয়ার’ আহ্বান জানান।

সাবেক ফরাসি উপনিবেশ এই দেশটি আফ্রিকার অন্যতম প্রধান তেল উৎপাদনকারী দেশ। বঙ্গোর ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার মাধ্যমে তার পরিবারের ৫৫ বছরের ক্ষমতার অবসান হয়েছে।

বুধবার (৩০ আগস্ট) ভোররাতে সেনা কর্মকর্তারা টিভিতে উপস্থিত হয়ে বলেন যে তারা ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন। তারা বলেছে, যে তারা শনিবারের নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করেছে যেখানে বঙ্গোকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল কিন্তু বিরোধীরা বলছে নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে।

কর্মকর্তারা আরও বলেছেন যে তারা বঙ্গোর এক ছেলেকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে, জেনারেলরা আলোচনার জন্য একত্রিত হন। সেখানে তারা সিদ্ধান্ত নেন – পরিবর্তিত সময়ে নেতৃত্ব কে দেবেন।

Nagad
Nagad

পরে প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের প্রাক্তন প্রধান জেনারেল এনগুয়েমার নাম প্রস্তাব করা হলে তাকে নিয়োগের ব্যাপারে সেনারা সর্বসম্মত ভোটে সম্মত হন। সেনাবাহিনীর এই ঘোষণার পর লিব্রেভিল এবং অন্যান্য জায়গায় সাধারণ মানুষ উদযাপন করতে থাকে।

কিন্তু জাতিসংঘ, আফ্রিকান ইউনিয়ন এবং ফ্রান্স এই অভ্যুত্থানের তীব্র নিন্দা করেছে, যাদের সাথে বঙ্গো পরিবারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।

বঙ্গো পরিবারের প্রতি গ্যাবনের বাসিন্দাদের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে তীব্র অসন্তোষ জন্ম নিয়েছিল। টানা ৫৫ বছর ধরে এই পরিবারটি দেশটিকে শাসন করেছে- এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিসহ আরও নানা বিষয় নিয়ে দেশটিকে ঘিরে জনগণের অসন্তোষ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লিব্রেভিলের এক বাসিন্দা বিবিসিকে বলেন, “প্রথমে আমি ভয় পেয়েছিলাম, কিন্তু তারপর আনন্দ হয়েছে।” শুরুতে ভয় পেয়েছে কারণ আমি একটি অভ্যুত্থানের মধ্যেও বেঁচে আছি, কিন্তু আমি আনন্দিত কারণ এই শাসনের উৎখাতের জন্য আমরা এতদিন অপেক্ষা করছিলাম।”

গ্যাবন অভ্যুত্থান: কয়েকটি মৌলিক বিষয়
গ্যাবন কোথায়? এটি মধ্য আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে তেল এবং খনিজ সমৃদ্ধ একটি দেশ, যার জনসংখ্যা মাত্র ২৪ লাখ।

আলী বঙ্গো কে? শনিবারের বিতর্কিত নির্বাচনে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল এবং ২০০৯ সাল থেকে তিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এর আগে, তার বাবা টানা ৪১ বছর ক্ষমতায় ছিলেন।

কেন একটি অভ্যুত্থান হয়েছে? সেনাবাহিনী নির্বাচনের ফলাফল মেনে না নিয়ে বলছে, শান্তি বজায় রাখতে তারা ক্ষমতা গ্রহণ করেছে।

জাতীয় টেলিভিশনে সিনিয়র সেনা কর্মকর্তারা অভ্যুত্থানের ঘোষণা দেয়ার জন্য কয়েকটি বিবৃতি পাঠ করেছেন। এরমধ্যে প্রথম তিনটি বিবৃতিতে অনুপস্থিত ছিলেন ৪৮ বছর বয়সী জেনারেল এনগুয়েমা।

কিন্তু এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে অন্তর্বর্তীকালীন
তিনি ক্ষমতাচ্যুত নেতার বাবা ওমর বঙ্গোর সহকারী-ডি-ক্যাম্প ছিলেন, যিনি ২০০৯ সালে তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় ৪২ বছর শাসন করেছেন।

একজন প্রাক্তন ঘনিষ্ঠ সহকর্মী এএফপি বার্তা সংস্থাকে বলেছেন যে, জেনারেল এনগুয়েমা ওমর বঙ্গোর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ২০০৫ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মি. বঙ্গো স্পেনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তখন জেনারেল এনগুয়েমা তার সেবা করেছিলেন।

আলী বঙ্গোর অধীনে তিনি মরক্কো এবং সেনেগালে গ্যাবনের দূতাবাসে সামরিক অ্যাটাশে হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু ২০১৮ সালে তাকে এলিট রিপাবলিকান গার্ডের অধীনে গোয়েন্দা প্রধান করা হয়। যা গ্যাবনের সবচেয়ে শক্তিশালী সেনা ইউনিট।

জেনারেল পদে উন্নীত হওয়ার আগে আলী বঙ্গোর সৎ ভাই ফ্রেডেরিক বঙ্গো ওই পদে ছিলেন।নেতা মনোনীত করা হয়, এবং তাকে কাঁধে তুলে রাস্তায় উল্লাস করে মিছিল করা হয়। গ্যাবনের আগেরবারের সাধারণ নির্বাচনের মতো শনিবারের নির্বাচনের ভোটের প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ ছিল।

প্রধান বিরোধী প্রার্থী অ্যালবার্ট ওন্ডো ওসা অভিযোগ করেছেন যে অনেক ভোটকেন্দ্রে তার নাম সম্বলিত ব্যালট পেপারের অভাব ছিল। তিনি যে জোটের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে প্রত্যাহার করা কয়েকজনের নাম তখনও ব্যালট পেপারে ছিল।

বঙ্গোর আগের দুটি জয় জালিয়াতির মাধ্যমে হয়েছে এবং ওই দুটি নির্বাচন বিতর্কিত বলে দাবি করেছে প্রতিপক্ষরা। এবার নির্বাচনে ভোট গ্রহণের কয়েক সপ্তাহ আগে ভোটের কাগজপত্রে বিতর্কিত পরিবর্তন আনা হয়েছে।

২০১৮ সালে, বঙ্গো স্ট্রোক করলে তিনি প্রায় এক বছরের জন্য দূরে সরে যান। এবং তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। পরের বছর, একটি ব্যর্থ অভ্যুত্থানের চেষ্টা করায় বিদ্রোহী সেনাদের কারাগারে পাঠানো হয়। তথ্যসূত্র- বিবিসি

সারাদিন/৩১ আগস্ট/এমবি