Print

সারাদিন

‘স্বেচ্ছাচারিতার’ অভিযোগ, জাপা থেকে ৬৬৮ নেতা-কর্মীর পদত্যাগ

প্রকাশিত: ৮:০০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৫, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে ‘স্বেচ্ছাচারিতার’ অভিযোগ তুলে দলটির ঢাকা মহানগর উত্তরের ১০ থানার ৬৬৮ নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছে।

এ সময়- জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে সবাই স্বৈরাচার ডাকলেও তিনি আসলে স্বৈরাচার নন, বরং পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যানই বড় স্বৈরাচার বলে মন্তব্য করেছেন দলের কেন্দ্রীয় নেত্রী ও পার্টির রিসার্স উইং’র যুগ্ম আহ্বায়ক সাহিন আরা সুলতানা। অন্যদিকে, দলের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু অভিযোগ করে বলেন, জিএম কাদের জাতীয় পার্টিকে মুদির দোকানে পরিণত করেছেন।

বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের হল রুমে জিএম কাদেরের ‘স্বেচ্ছাচারিতার’ প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতাকর্মীদের গণপদত্যাগ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ দুই নেতা এমন মন্তব্য করেন। এ সময় এই নেতারা গণপদত্যাগের ঘোষণা দেন ঢাকা মহানগর উত্তরের সদ্য বহিষ্কৃত আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু।

সংবাদ সম্মেলনে সেন্টু বলেন, আজকের এই আয়োজন করেছে বহিষ্কৃত নেতা-কর্মীরা। সাংবাদিকরা দেখছেন, গত কিছু দিন ধরে জাতীয় পার্টিতে বহিষ্কার, অন্যায়-অপরাধ দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব করে আসছেন। কিন্তু এর প্রতিবাদ করা যাবে না। কেন করা যাবে না? কারণ তারা দলকে নিজের মনে করে।

গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১১টি আসন পায় একাদশ সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে ২৬জন প্রার্থী দিয়েছিলো দলটি। নির্বাচনে ভরাডুবির জেরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে তুলোধুনো করেছেন দলটির পরাজিত প্রার্থীরা। সম্প্রতি রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের এক মতবিনিময় সভায় বক্তরা জিএম কাদের ও চুন্নুকে ‘বাটপার, প্রতারক’ বলেও গালাগাল করেন।

দলটির বিক্ষুব্ধ নেতাদের দাবি, নির্বাচন উপলক্ষে সরকার জাতীয় পার্টিকে অনেক টাকা দিয়েছে। বেশি আসনে ছাড় দিতেও রাজি ছিলো। কিন্তু নিজেদের ব্যর্থতার কারণে জাতীয় পার্টি সেটা আদায় করতে পারেনি। এর জন্য দলের মহাসচিব চুন্নু বেশি দায়ী বলে মনে করেন তারা।

Nagad
Nagad

নির্বাচনের পর দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের বিরুদ্ধে বনানীর দলীয় কার্যালয়ে বিক্ষোভও করে দলটির নেতা-কর্মীরা।

এরমধ্যে দলের বেশ কয়েকজন নেতা-কে বহিষ্কার করেছেন জি এম কাদের। যাদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, দলের জ্যেষ্ঠ নেতা সুনীল শুভ রায়ও আছেন।

সংবাদ সম্মেলনে সেন্টু বলেন, তারা (চেয়ারম্যান-মহাসচিব) মনে করেন এটা তাদের মুদি দোকান। চেয়ারম্যান এটাকে মুদির দোকান মনে করেন। তিনি মালিক। সকালে আসেন সন্ধ্যায় অফিস থেকে বেরিয়ে যান। মানে একটা দোকানদার সকালে আসে সন্ধ্যায় বেরিয়ে যান। দোকনে বসে খাওয়া দাওয়া করেন। তিনি নিজে একটা ফাঁদ তৈরি করেছেন। কিছু লোক আছে তারা সারাদিন দোকানদারি করে সন্ধ্যার পর হিসাব দেন। হিসাব নিয়ে চেয়ারম্যান বাসায় চলে যান। এদের বেড়াজালে তিনি পড়ে গেছেন। এর থেকে বের হতে পারবেন না।

বহিষ্কৃত এই জাপা নেতা বলেন, গণমাধ্যমের মাধ্যমে বলতে চাই, ফাঁদ থেকে চেয়ারম্যান বের হতে পারবেন না। উনি লাট্টুর মতো ঘুরছেন। আর ওই লাট্টুর সুতা মহাসচিবের হাতে।

মোহাম্মদপুর থানা সভাপতি নজরুল ইসলাম মুকুল বলেন, যে ইমাম নামাজে ভুল করে তার নেতৃত্বে নামাজ পড়া যায় না। তেমনি জিএম কাদেরের মত একটি লোকের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি করা সম্ভব নয়, গুড বাই জাতীয় পার্টি।

শেরেবাংলা থানা জাপার সভাপতি আশরাফুল হক শিবলী বলেন, জিএম কাদের পার্টিকে প্রাইভেট কোম্পানিতে রূপান্তরিত করেছেন। ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন তার কাছে নেই, মূল্যায়ন করা হয় চাটুকারদের। সেন্টুর মত নিবেদিত প্রাণকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তার প্রতিবাদে জিএম কাদেরের জাতীয় পার্টি থেকে আমরাই পদত্যাগ করছি।

হাতিরঝিল থানা সভাপতি মাসুদুর রহমান মাসুম বলেন, ’৮২ থেকে এ দল করে আসছি। পল্লীবন্ধু এরশাদের গড়া জাতীয় পার্টিকে জিএম কাদের ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। তার নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি বিকশিত হওয়া সম্ভব নয়।

পল্লবী থানা সভাপতি আসাদ খান সামী বলেন, উনি (জিএম কাদের) নিজেকে জনবন্ধু দাবি করেন। উনি তো কর্মীবন্ধুই হতে পারেননি। জনবন্ধু হন কীভাবে। আপনি (কাদের) কী আমাদের অব্যাহতি দেবেন, আগামী দিনে আমরাই আপনাকে অব্যাহতি দেব।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম পাঠান। এ সময় মোহাম্মদপুর, আদাবর, পল্লবী, হাতিরঝিল, মিরপুর, দারুসসালাম, শেরেবাংলা, বাড্ডা, রূপনগর থানার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের ৯৬৮ নেতাকর্মী জিএম কাদেরের স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে জাতীয় পার্টি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন- রূপনগর থানা সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ খান, আদাবর থানা সভাপতি মকবুল হোসেন মুকুল, ছাত্র সমাজের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সিরাজুল ইসলাম, মোহাম্মদপুর থানা যুব সংহতির সভাপতি আমজাদ হোসেনসহ বিভিন্ন থানার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

উপস্থিত ছিলেন সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া চৌধুরী, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আমানত হোসেন খান, যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল আহসান শাহজাদা, কেন্দ্রীয় নেতা খোরশেদ আলম খুশু, আবুল আহসান জুয়েলসহ মহানগর উত্তরের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দ।