Print

সারাদিন

জি এম কাদের-চুন্নুকে বহিষ্কার, নিজেকে জাপার চেয়ারম্যান ঘোষণা রওশনের

প্রকাশিত: ৩:৫৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৮, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতি দিয়ে নিজেকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করেছেন দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। পাশাপাশি কাজী মামুনুর রশিদকে পার্টির মহাসচিব হিসেবে ঘোষণা করেন তিনি।

আজ রোববার (২৮ জানুয়ারি) রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসায় এক সভার আয়োজন করেন রওশন এরশাদ। এ সময় দলটির আগে বহিষ্কার হওয়া নেতাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেন তিনি। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমি বেগম রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা কো-চেয়ারম্যান এবং প্রধান পৃষ্ঠপোষক এই মর্মে বিগত দিনের জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক ব্যর্থতা পর্যালোচনা করে আমি কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি। আমাদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন জাতীয় পার্টিতে এখন একটি ক্রান্তিকাল বিরাজ করছে।’

বিজ্ঞপ্তিতে জি এম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বে থাকাকালে সৃষ্ট জাতীয় পার্টির ছয়টি সংকটের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, ‘দ্বাদশ নির্বাচনের পূর্বে পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের বক্তব্য ও বিবৃতি এবং দ্বাদশ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তাদের ভূমিকা পার্টিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৭টি আসনে প্রার্থী মনোনয়ন প্রদান করে ২৬টি আসনে সমঝোতা করা এবং আসন সমঝোতার পরেও জনসম্মুখে অস্বীকার করে দেশবাসী ও পার্টির মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে পার্টিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। ২৬টি আসন সমঝোতার পর বাকি আসনের প্রার্থীদের রাজনৈতিকভাবে জনগণের বিরূপ সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। চেয়ারম্যান ও মহাসচিব তাদের কোনো খোঁজ-খবর না নেওয়ার ফলে ভোটের মাঠে পার্টি চরমভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন।’

‘নির্বাচনে ভরাডুবি হওয়ায় পার্টির নেতাকর্মীরা তার প্রতিবাদ করার অধিকার রাখেন। এই প্রতিবাদী নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনোরূপ আলোচনা কিংবা সান্ত্বনা প্রদান না করে ক্রমাগত বহিষ্কার ও অব্যাহতির মাধ্যমে পার্টির অস্তিত্ব নষ্ট করা হয়েছে। পার্টির অবস্থা সার্বিকভাবে বিবেচনায় করে আমি গত ২২ জানুয়ারি পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে দলে ঐক্য ফিরিয়ে এনে সব বহিষ্কার ও অব্যাহতির আদেশ বাতিল করে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টি গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু, দুঃখের বিষয় তারা তা আমলে নেননি। এই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ জানুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে পল্লীবন্ধুর ৬৬৮ জন নেতাকর্মী পার্টি থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করায় দলে বিরাট সংকট সৃষ্টি হয়েছে’, উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

নিজের পদক্ষেপ তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তিতে রওশন এরশাদ বলেন, ‘এমতাবস্থায় উল্লেখিত সংকট নিরসনে পার্টির নেতাকর্মীদের অনুরোধে এবং পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১ ধারায় বর্ণিত ক্ষমতাবলে আমি পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতি প্রদান করলাম। নেতাকর্মীদের অনুরোধে আমি পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করলাম। পরবর্তী সম্মেলন না হওয়া পর্যন্ত আমি কাজী মো. মামুনুর রশিদকে মহাসচিবের দায়িত্ব প্রদান করলাম। তিনি সার্বিকভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।’

Nagad
Nagad

রওশন এরশাদ আরও বলেন, ‘পার্টির অন্যান্য পদ-পদবি স্ব স্ব অবস্থায় বহাল থাকবে। পার্টির যেসব নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে কিংবা বহিষ্কার করা হয়েছে এবং যাদেরকে পার্টির কমিটির বাইরে রাখা হয়েছিল, তাদের পূর্বের স্বপদে পুনর্বহাল করা হবে। যথাশিগগিরই পার্টির জাতীয় সম্মেলন আহ্বান করা হবে।’

প্রসঙ্গত- দলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বেশ কয়েকবার ভাঙনের মুখে পড়ে এরশাদের হাতেগড়া দল জাতীয় পার্টি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপরই নানা অভিযোগে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় দলটির একাংশ। সম্প্রতি দল থেকে পদত্যাগ করেন ৬০০ শতাধিক নেতাকর্মী। এসব নেতারা দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের নেতৃত্বে কাউন্সিলের ঘোষণা দেন।

তবে দলে ভাঙনের শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে নতুন দল গঠন হলে সেই দলকে তারা স্বাগত জানাবে বলে জানান মুজিবুল হক চুন্নু। গতকাল শনিবার চুন্নু বলেন, ‘নতুন দল গঠন করলে স্বাগতম। এতে কোনো সমস্যা নেই। জাতীয় পার্টি থেকে তো এর আগে অনেকেই চলে গেছে তাতে কী আসে যায়। আমি চলে গেলেও জাতীয় পার্টির কোনো ক্ষতি হবে না। জিএম কাদেরের নেতৃত্বে এই দল আছে এবং তার নেতৃত্বে যে দল আছে সেটিই জাতীয় পার্টি।’