প্রকাশিত: ৫:৩১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৬, ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক:
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রোডম্যাপ নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা কাটেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন-‘এখনো একটা জিনিস ধোঁয়াশা, যেটা আমার পরিষ্কার হয়নি। যেটা আমি আশা করেছিলাম, প্রধান উপদেষ্টা একটা রোডম্যাপ দিবেন, গণতন্ত্রের পথে কিভাবে যাবেন, তা কিন্তু আমরা পাইনি। সংস্কারের কথা বলেছেন, কিন্তু কোন কোন খাতে সংস্কার আনবেন, সেব্যাপারে কিছু আভাস দিয়েছেন। আমি জানি, এত অল্প সময়ে সেটা সম্ভব নয়। তারপরও একটা ধারণা দিলে, ধারণা করতে পারতাম যে ভালোর দিকে যাচ্ছে। ভালোর দিকে যাক এটা আমাদের প্রত্যাশা।’
আজ সোমবার (২৬ আগস্ট) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত কাজী জাফর আহমদের ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই স্মরণসভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হলে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার গতকালের ভাষণ প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অবশ্যই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে হবে। সেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য রাজনৈতিক নেতা, রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। আমি আশা করব, প্রধান উপদেষ্টা সেই প্রক্রিয়া-রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবেন।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘বাংলাদেশকে আর কোনো দিন কেউ যেন কোনো পুলিশি রাষ্ট্র পরিণত না করতে পারে, তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে’। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরাও সেটা চাই। এ ব্যাপারে সরকার উদ্যোগ নিলে আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে। আমাদের ছেলেদের গুলি করে মারা হবে-এটা আর দেখতে চাই না। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের দায়ীদের বিচার সুনিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আমাদের ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা হয়েছে। এগুলো অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। আমরা পত্রিকায় দেখলাম প্রধান উপদেষ্টার মামলা উঠানো হয়েছে। আরেকজন উপদেষ্টার মামলাও উঠানো হয়েছে- সাজা ছিল তা বাতিল করা হয়েছে। বিএনপি জামায়াত বা সমমনা রাজনৈতিক দলের এমন কেউ নেই যাদের নামে মিথ্যা মামলা নেই। আমাদের ১ লাখ ৪৫ হাজার মিথ্যা গায়েবি মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। এটা আমাদের দাবি।’
সচিবালয় ঘেরাও এবং ছাত্রজনতার ওপর পোশাকধারী আনসার সদস্যদের হামলা প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পোশাকধারী আনসার সদস্য ও কিছু লোক সেখানে বড় ধরনের গোলযোগ সৃষ্টি করতে চেয়েছিল, ছাত্ররা সেটা নস্যাত করে দিয়েছে। আনসার সদস্যদের এই কর্মকাণ্ড অশনিসংকেত। এটা ভালো লক্ষণ নয়। অর্থাৎ যারা পরাজিত, এখন আবার বিভিন্নভাবে চক্রান্ত করছে। ছাত্রজনতার বিজয়কে নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য। তাই আপনারা সবসময় সতর্ক থাকবেন। এই বিষয়গুলোকে কখনো প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।’
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যখন ফ্যাসিবাদ ছিল, তখন তো দাঁড়াবার কথা চিন্তাও করতে পারতেন না। কথা বলার সুযোগ পেতেন না। সুযোগ এসেছে, সময় দিন। কেবল তো দুই সপ্তাহ হল, আপনাদের বিষয়গুলো নিশ্চিয়ই দেখবে। সচিবালয় ঘেরাও করে কোনো কিছু আদায় করার চেষ্টা করবেন না। এটা জনগণ ভালো চোখে দেখবে না।’
ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ছাত্ররাই সব কিছু পরিবর্তন করে এনেছে। ৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। এই পরিবর্তনের ধারাটা তারা সেট করে দিয়েছে। সেজন্য ছাত্রদের বাংলাদেশের মানুষ আলাদা চোখে দেখে, সম্মান করে-ভালোবাসে। তাদের ওপর আস্থা সবসময় থাকে। একইসঙ্গে শিক্ষক ও কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বলপ্রয়োগ করে অযথা এমন অবস্থা তৈরি করবেন না যে সেখানে প্রশাসন নষ্ট হয়ে যায়। আমরা দেখলাম কিছু কিছু স্কুল-কলেজে শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। এটার ব্যবস্থা তো আছেই। অভিযোগ থাকলে অভিযোগ করেন, প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।’
সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা প্রশাসনে এখনো অনেক ব্যক্তিদের দেখতে পাচ্ছি, যারা ফ্যাসিবাদী সরকারকে মদদ দিয়েছেন, সাহায্য করেছেন এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তাদের চেহারা দেখতে চাই না। আবারও বলছি, অতিদ্রুত এদের অপসারিত করে দয়া করে দেশপ্রেমিক, যারা কাজ করতে চায়, যাদের বঞ্চিত করা হয়েছে তাদেরকে নিয়ে এসে প্রশাসনকে চালু করুন। এটা না করলে জাতি আপনাদের ক্ষমা করবে না।’
তিনি আও বলেন, ‘আমাদেরকে ধৈর্য ধরে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলতে হবে। এই সরকার এসেছে, অবশ্যই কাজ করার জন্য এসেছে। সেই সুযোগ তাদের দিতে হবে। আমরা বারবার বলেছি, অবশ্যই আমরা যৌক্তিক সময় দিতে চাই। নির্বাচন দিতেই হবে। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই, সেখানে যেন সবাই ভোট দিতে পারে। এমন যেন না হয় যে, আগের অবস্থা ফিরে আসে। সেজন্যই আমরা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছি। জনগণ অপেক্ষা করছে। সেটা অবশ্যই যৌক্তিক সময় পর্যন্ত হতে হবে। সেই যৌক্তিক সময়ের মধ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতা নির্বাচন হবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে-এটা আমরা বিশ্বাস করি।’