প্রকাশিত: ৭:০৭ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৬, ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চাকরি জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে আনসাররা সচিবালয় ঘেরাও করলেও এর পেছনে তাদের অন্য উদ্দেশ্য ছিল বলে মনে করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
আনসার সদস্যদের প্রতিহত করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এগিয়ে না এলে সচিবালয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি হতো বলে জানান-আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন-চাকরি জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে আনসাররা সচিবালয় ঘেরাও করলেও এর পেছনে তাদের অন্য উদ্দেশ্য ছিল।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘আপনারা তাদের (আনসারদের) যুদ্ধাংদেহী মনোভাব দেখেছেন। তাদের দাবি ছিল এক্ষুণি রাত ১০টার সময় প্রজ্ঞাপন করে তাদের জাতীয়করণ করতে হবে। তারা (আনসার) এমন একটা অসম্ভব দাবি তুলেছিল, অবাস্তব এবং অসম্ভব দাবি করেছিল গণ্ডগোল করার জন্য, সারা সচিবালয় ঘেরাও করে রেখেছিল। হয়ত আরও অনেকে যোগ দিত। ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে পারত।’
সোমবার (২৬ আগস্ট) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। আনসারদের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে তিনি ঢাকা মেডিকেলে যান।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘যে জাগ্রত ছাত্রসমাজ স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে, তারা আবারও তাদের যে অপরিসীম ত্যাগের ভূমিকায় এই পুরো পরিস্থিতিটা মোকাবেলা করেছে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা খুবই ব্যথিত এই ঘটনা দেখে। আমরা মনে করি, কালকে আনসার বাহিনীর ছদ্মা আবরণে যারা এসেছিল, কোনো দাবি আদায়ের এজেন্ডা তাদের ছিল না। দাবি আদায়ের এজেন্ডা হয় আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে। তারা বারবার আলাপ আলোচনা করে সম্মত হয়ে ফিরে গেছে। বারবার আমাদের ঘিরে রেখেছে। লাঠি তাদের স্টকে ছিল। আপনারা দেখেছেন, তারা কী মারমুখীভাবে ছাত্রদের ওপর, যে ছাত্ররা স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে, যারা আমাদের স্বপ্ন এবং যাদের ভবিষ্যতের প্রতিভূ হিসেবে দেখি, তাদের রাস্তায় ফেলে কী নির্মমভাবে মেরেছে।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘যারা অপশক্তির দোসর আছে, যারা বিভিন্ন ছদ্মাআবরণে ছাত্র জনতার বিপ্লবকে নস্যাৎ করতে চায়, তাদের জন্য একটা বার্তা দিয়েছে, যে এই দেশের ছাত্র সমাজ জাগ্রত রয়েছে। কোনো ষড়যন্ত্র সফল হবে না। যারা ষড়যন্ত্র করবে, যারা ছাত্র জনতার এই গণঅভ্যুত্থানকে দাবি আদায়ের ছদ্মাআবরণে বা বিভিন্ন অজুহাতে, বিভিন্ন ছদ্মাবরণে যারা এটাকে নস্যাৎ করতে চাইবে, তাদের বিরুদ্ধে তো আমরা প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেব, প্রচলিত আইনে, এছাড়া ছাত্র সমাজ যারা আছে তারা জাগ্রত আছে। এই ছাত্র সমাজকে পরাজিত করা এবং তাদেরকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। এই মেসেজই দিতে চাই।’
আনসারদের প্রতি আহ্বান রেখে তিনি বলেন, ‘যারা সঠিক পথে দাবি আদায়ের আন্দোলন করছেন, আপনাদের কাছে অনুরোধ, আপনারা বিবেচনা করে দেখবেন, ১৭ বছরের বৈষম্য এবং শোষণ ১৭ দিনে কী করা যায়? এটা একটু বিবেচনা করে দেখবেন। ধৈর্য ধরেন এবং নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় দাবি জানান।’
এসময় তিনি আরও জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকা মেডিকেলে প্রায় দুই হাজার ব্যক্তি চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে ৮০০ জনকে ভর্তি দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে হাসপাতালে ১০০ জন গুলিবিদ্ধ আহতসহ চিকিৎসাধীন রয়েছে। এছাড়া নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আই সি ইউ) ৯ জন রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আইসিইউতে যারা রয়েছেন তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। হাসপাতালে যারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন কর্তৃপক্ষ তাদের চিকিৎসা সম্পূর্ণ ফ্রি করা করবে। অনেক ওষুধ সরকারিভাবে সাপ্লাই হয় না। সেগুলোও আমরা তাদের দিয়ে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করেছি। ঢামেক হাসপাতালে আহতরা যেন সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা পায় সেজন্য তাদের ডেডিকেটেড আলাদা ওয়ার্ড করা হয়েছে।
তিনি জানান, সবার উদ্দেশ্যে বলতে চাই আপনারা হাসপাতালের ভিতরে অযথা ভিড় করবেন না এবং রোগীদের সঙ্গে একজন অ্যাটেনডেন্ট থাকবেন। কেন না আহতরা বিভিন্ন জীবাণুতে আক্রান্ত হতে পারেন। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে তাদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের আপনারা সবাই সহযোগিতা করবেন।