প্রকাশিত: ৬:২৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২২, ২০২৪
লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
চলতি আমন মৌসুমে ধানগাছ ইঁদুরে কেটে নষ্ট করছে। কৃষকরা ইঁদুর নিধনে বিভিন্ন ফাঁদ পাতলেও দমন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ইঁদুর তাড়ানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন আমন ধান চাষিরা।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় আগাম জাতের কিছু ধান কাটা মাড়াই শুরু করেছে কৃষকরা। এখনও অনেক ধানগাছের শীষ বেরহতে শুরু করেছে, ঠিক সেই সময় ধানের গাছ ইঁদুর কেটে সাবাড় করছে। ওষুধ দিয়ে ও প্রাকৃতিক নানাভাবে ইঁদুর মারার চেষ্টা করছে চাষিরা। তাতেও বিশেষ কোনো কাজ না হওয়ায় ইঁদুর তাড়ানো নিয়ে আমন ধান চাষিরা চরম বিপাকে পড়েছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা-গেছে, চলতি মৌসুমে কালীগঞ্জ উপজেলায় ১৭ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষাবাদ হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে কথা হয় কাকিনা চাঁপারতল এলাকার কৃষক আহেদুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, ২০ শতাংশ ধান ক্ষেতে দুইবার ইঁদুর মারার ওষুধ দিলাম কোন কাজ হলো না। ক্ষেতের ধানের শীষ কাটতেছে ইঁদুর। স্প্রে করলাম, ওষুধ দিয়ে কাজ হচ্ছে না। ইঁদুরের গর্তের ভিতরে ওষুধ দিয়ে ও ফাঁদ পেতে ৬ টি ইঁদুর মারছি। এই ধান ঘরে তোলার আগ অবধি ইঁদুরের উপদ্রব কমবে না। প্রতিদিন ফসলের ক্ষতি করছে।
তুষভান্ডার ইউনিয়নের কাঞ্চনশ্বর এলার কৃষক সুজা মিয়া বলেন, জমির সাথেই বাঁশ ঝাড়। রাতের অন্ধকারে ইঁদুর জমিতে নেমে এসে ধানের গাছ কেটে ফেলছে। সে সব এলাকার জমি নিচু, সেখানে ইঁদুরের আক্রমণ বেশি হচ্ছে। ইঁদুরের কবল থেকে রক্ষায় বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনো সুফল পাচ্ছেন না তিনি। বাধ্য হয়ে বাঁশের ডোঙ্গার ফাঁদ দিয়ে ইঁদুর নিধনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলার বিভিন্ন আমন ধানের খেত ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা ইঁদুরের উপদ্রব থেকে ধান রক্ষা করতে খেতের মধ্যে বাঁশের কঞ্চি গেড়ে এতে পলিথিন টাঙিয়ে দিয়েছেন। অনেকে আবার খেতের চারপাশে ইঁদুর মারার ফাঁদ তৈরি করে রেখেছেন। তবুও কোনো কাজে আসছে না। খেতে ইঁদুরের হানা দেওয়া ধানের গাছ দেখে মনে হবে কেউ কাঁচি দিয়ে কেটে রেখেছে
কাকিনা ১ নং ওয়ার্ডের কৃষক ইয়াছিন আলী এবার ১০ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছেন। এখন ধানের শিষ বের হচ্ছে। এ অবস্থায় খেতে ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দেওয়ায় তিনি দুশ্চিন্তায় আছেন। ওষুধ ছিটিয়ে কোনো লাভ হচ্ছে না। খেতের মধ্যে পলিথিন বেঁধে দিয়েছেন। বাতাসে কাগজ উড়ার শব্দে ইঁদুর পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কালীগঞ্জের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (কাকিনা ব্লক) মিজানুর রহমান বলেন, খুব বেশি পরিমাণ খেতে ইঁদুরের আক্রমণ নেই। কিছু কিছু খেতে সামান্য আক্রমণ করেছে। এসব ইঁদুর নিধনে বিষ টোপসহ বিভিন্ন বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তুষার কান্তি রায় বলেন, রোপা আমনখেতে ইঁদুর তাড়ানোর জন্য কীটনাশক প্রয়োগসহ বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। আশা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্য এর সমাধান হয়ে যাবে।’
এ বিষয়ে লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (ডিডি) ড. মো. সাইখুল আরিফিন বলেন, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ইঁদুর নিধন অভিযান আগামী ৯ নভেম্বর থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শুরু হবে।ইঁদুর কেউ একা নিধন করতে পারবে না। সমন্বিত ভাবে এটা নির্মূল করতে হবে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন উঠান বৈঠকে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকে কৃষি বিভাগ। এখন বর্ষা মৌসুম শেষ হয়েছে, ইঁদুর নিধনের উপযুক্ত সময় এটা। ইঁদুর নিধনে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে।