Print

সারাদিন

পর্যটন শিল্পে দেশের অন্যতম আকর্ষণ হতে পারতো ‘বেথুলির বটগাছ’

প্রকাশিত: ৯:০৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০২৪

আহমেদ নাসিম আনসারী, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বেথুলি গ্রামের বটগাছ এটি। সামাজিক বন বিভাগের খাতায় যা এশিয়া মহাদেশের প্রাচীন ও অন্যতম বড়। গাছটি সংরক্ষণের বিষয়টি আমলে নিয়ে ২০০৯ সালে দেখভালের দায়িত্ব নেয় সামাজিক বন বিভাগ। কিন্তু তা নামমাত্র।

সরেজমিনে দেখা গেছে,আনুমানিক ৩’শ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন এই বটগাছটির বর্তমান বিস্তৃত এলাকা ১১ একর। বটের ডালপালা ও শিকড় নেমে পুরো এলাকাটি দৃশ্যত পৃথক গাছে পরিণত হয়েছে। মূলগাছ কোনটি তা আর এখন বোঝার উপায় নেই। গাছটির জন্ম কত সালে তার কোন সঠিক ইতিহাসও কারো জানা নেই। তবে বয়োবৃদ্ধদের মুখে শোনা যায়, গাছটির বয়স ৪শ বছরের বেশী হবে। বাংলা ১৩৬০ সালে এই গাছটিকে কেন্দ্র করে মল্লিকপুর বেথুলীতে প্রথম বাজার বসে। বাজারটি এখন অনেক বড় বাজারে পরিণত হয়েছে। গাছের সঙ্গে অনেক বড় হয়ে উঠেছে বাজারটি। দোকানের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বর্তমানে ৫৫ থেকে ৬০ টি দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ওই বাজারে।

বাজারের প্রথম ব্যবসায়ী মল্লিকপুরের মুনসুর আলী, মোনতাজ আলী, আব্দুল হামিদ, বেলায়েত মিয়া, বেথুলী গ্রামের স্বারজিত বিশ্বাস প্রমুখ। উল্লেখিত ব্যক্তিরা প্রথম টং দোকান বসিয়ে ব্যবসা শুরু করেন।

ঝিনাইদহ বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৮২ সালে বিবিসির জরিপে বটগাছটি এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ বট গাছ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালে গাছটির চারপাশ দিয়ে ১১ একর (৩৩) বিঘা জমির উপর দেওয়া হয় সীমানা প্রাচীর। গাছের পাশে প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় একটি রেস্ট হাউজ। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে গাছের জন্য সংরক্ষিত এলাকায় পাকা বেঞ্চ ও গার্ডেন ছাতা সংযোজন করা হয়। রেস্ট হাউজ নির্মিত হওয়ার পর বটগাছের পাশে ১৬৯ মৌজার ১৬নং দাগে ৩২ শতক জমি মল্লিকপুর গ্রামের মৃত জহুর আলী বিশ্বাসের স্ত্রী কুন্টি বিবি ২৫/০৪/৯০ ইং তারিখে ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের নামে দানপত্র দলিল লিখে দেন।

গত ২২ বছর ধরে বিশাল এই বটগাছগুলো দেখভালের দায়িত্বে থাকা একমাত্র মানুষ আব্দুল খালেক জানান, গত চার বছর হলো সম্মানী পান মাত্র ১ হাজার ৮শত টাকা। পুরো ১১ একর জমি জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এলাকাটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নসহ বট গাছের ‘ব’ নামানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটিও করেন তিনি।

সুইতলা মল্লিকপুরের ৭০ বছরের বৃদ্ধ আবুল হাসেম জানান, যেটি হতে পারতো দেশের অন্যতম টুরিস্ট স্পট বা অর্থনৈতিক জোন কিন্তু তা আজ নিঃশেষ হওয়ার পথে।’

Nagad
Nagad

জামাল উদ্দিন জানান,‘একসময় গাছটির দুই হাজার ঝুরি ছিল। এখন সেই ঝুরির সংখ্যা কমে কয়েক শ’তে নেমে এসেছে। পর্যটকদের সুবিধার্থে এখানে ১৯৯০ সালে সরকারীভাবে একটি রেস্ট হাউজ নির্মাণ করা হলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সবই আজ ধ্বংসের পথে।

চুয়াডাঙ্গা থেকে দেখতে আসা আজহারুল ইসলাম বলেন, দেশে যে এত সুন্দর প্রাকৃতিক সৃষ্ট সম্পদ রয়েছে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না।

বটবৃক্ষটি দেখতে আসা রাকিন হাসান বলেন, নানাভাবে গাছটির গল্প শুনে দেখতে এসেছি।

কোলা বাজার এলাকা থেকে গাছটি দেখতে যাওয়া আতিয়ার রহমান বলেন, বাড়িতে নতুন আত্মীয় আসায় তাদের নিয়ে ঘুরতে এসেছি এখানে।

গাছটি সংরক্ষণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম বলেন,‘সম্প্রতি সেখানে গিয়েছিলাম। অনেক গাছ মরে গেছে। ভেতরে বনজঙ্গলে ছেয়ে গেছে। শীঘ্রই তা পরিষ্কার করা হবে এবং গাছটি রক্ষায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে।’