প্রকাশিত: ৭:৩৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৮, ২০২৪
শাহজালাল রোহান
সেদিন শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর)। ব্যস্ত কর্মজীবনের রুটিন ভেঙে এবার পা পড়ল রাজশাহীতে। উদ্দেশ্য ছিল রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) সাইবার ফেস্ট ২০২৪-এর নিউজ কভার করা, রাজশাহী ঘুরে দেখা। বেরিয়ে পড়লাম; দুই দিনের এই আয়োজন শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবনে উৎসাহ দিতে করা হয়েছিল। পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল দেশের শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) লিমিটেড এবং সাইবার সিকিউরিটি পার্টনার ছিল ক্যাসপারস্কি।
রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ট্রেনে চড়তেই মনে হলো, শহরের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পাচ্ছি। তবে কি; এই প্রথম ট্রেন লেটের সুবিধা পেলাম। যাই হোক উঠলাম; ট্রেনও ছাড়ল। তবে ঢাকা থেকে যত দূরে যাচ্ছিলাম, ইন্টারনেট সেবার মান তত খারাপ হচ্ছিল। উল্লাপাড়া, ইশ্বরদী স্টেশনে নেট ছিলো কিন্তু আব্দুলপুর স্টেশনে একদমই নেটওয়ার্ক পাইনি। মোবাইলে নিউজ লেখার অভ্যাস থাকলেও, নেট না থাকায় বিরক্ত লাগছিল। ট্রেন চলছে; আর আমি একের পড় এক স্টেশনের অপেক্ষায় ছিলাম; তখন নেট আসবে প্রয়োজনীয় কাজ সারব। এভাবেই চলছিলো সাড়ে ছয়টা থেকেদুপুর একটা পর্যন্ত ট্রেন জার্নি।
রাজশাহীর প্রথম ছোঁয়া
শহরে নামার পরেই ভালো লাগলো শহরের পরিচ্ছন্ন পরিবেশ দেখে। এখানকার রিকশা ভাড়াও বেশ সাশ্রয়ী। যেখানে ৩০ টাকার ভাড়া ঢাকায়, সেখানে রাজশাহীতে মাত্র ১০ টাকা। খাবারের দামও খুব কম। যা হোক, রুয়েট ক্যাম্পাসে ঢুকে মুগ্ধ হলাম সবুজের সমারোহ দেখে। পুরো ক্যাম্পাস যেন প্রকৃতির মধ্যে লুকিয়ে থাকা এক শান্ত জায়গা। বিশেষ করে প্রশস্ত রাস্তা, গাছ-গাছালি, সেন্ট্রাল মসজিদ এবং টিনশেড হলের স্থাপত্য নজর কেড়েছে।
রাজশাহীতে এসে খাবারের স্বাদ না নিলে বোধহয় ভ্রমণ পূর্ণতা পায় না। বিকেলে রনির দোকানে খাওয়া ছানার মিষ্টি , লুচি ছিল দারুণ। লম্বা সিরিয়াল পেরিয়ে ভিড় ঠেলে খেতে হলো, কিন্তু স্বাদে সব কষ্ট ভুলে গেছি। পদ্মার পাড়ে মুক্ত মঞ্চে গিয়ে আরও এক অন্যরকম অনুভূতি। ঠাণ্ডা বাতাস, পরিবার নিয়ে মানুষদের ঘোরাঘুরি, গরম চা আর ফুসকা খাওয়ার দৃশ্য মন ভালো করে দেয়। আমরা বসে বসে দেখছিলাম।
ইব্রাহিম ভাইয়ের কালাভুনার গল্প
রাতের খাবারের জন্য আমরা গেলাম ইব্রাহিম ভাইয়ের ঐতিহ্যবাহী কালাভুনা খেতে। রাজশাহীর কাটাখালীতে জুলমিলের উল্টো দিকে থাকা এই খাবারের দোকান এক অনন্য অভিজ্ঞতা দিল। গরম ভাত আর কালাভুনার স্বাদ যে এতটা তৃপ্তি দিতে পারে, তা আগে জানা ছিল না। দোকানের বর্তমান মালিক, ইব্রাহিম ভাইয়ের ছেলে জানালেন, এই দোকান তাদের দাদার আমল থেকে চলছে। তার বাবা ৬০ বছর ধরে চালিয়েছেন, আর এখন তিনি তা চালিয়ে যাচ্ছেন। দিনে ৫০ কেজি গরুর মাংসের কালাভুনা বিক্রি হয় এখানে। স্বাদ, কালার সেই একই রকম আছে।
রাজশাহীর মানুষের মুখের ভাষা যেমন মিষ্টি, তেমনি তাদের আচরণও শিক্ষিত ও পরিশীলিত। যাঁদের সঙ্গেই কথা বলেছি, তাঁরা খুবই ভদ্র ও সহযোগিতাপূর্ণ। শহরটি পরিচ্ছন্ন, গাছপালায় ভরা এবং শান্ত। রুয়েট সাইবার ফেস্টের আয়োজন, রাজশাহীর খাবারের স্বাদ, আর পদ্মার পাড়ের সৌন্দর্য সবকিছু মিলে এক অনন্য অভিজ্ঞতা দিল। শহরটির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আর সহকর্মীদের সৌহার্দ্যতা দীর্ঘদিন মনে থাকবে। স্মৃতির পাতায় রাজশাহী এবং রুয়েট একটি বিশেষ জায়গা করে নিল।
সারাদিন/৮ ডিসেম্বর/ আরএ