Print

সারাদিন

বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস আজ

প্রকাশিত: ২:২৯ অপরাহ্ণ, মে ১৭, ২০২৫

তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিবেদক:

আজ (১৭ মে) বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) ঘোষিত ‘বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস’। দিবসটির মূল লক্ষ্য— টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে উদ্ভাবন, প্রবেশাধিকার, নীতিমালা ও সমঅধিকারে সচেতনতা তৈরি করা। এবারের প্রতিপাদ্য: ‘ডিজিটাল রূপান্তরে লিঙ্গ সমতা’।

এই দিবসের সূচনা ১৮৬৫ সালের ১৭ মে প্যারিসে ‘ইন্টারন্যাশনাল টেলিগ্রাফ কনভেনশন’ এর মধ্য দিয়ে। তখন গঠিত ‘ইন্টারন্যাশনাল টেলিগ্রাফ ইউনিয়ন’ পরবর্তীতে রূপ নেয় আইটিইউতে। ১৯৬৯ সাল থেকে এ দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে পালন করা হচ্ছে।

২০০৩ ও ২০০৫ সালে যথাক্রমে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা ও তিউনিসিয়ার তিউনিস শহরে অনুষ্ঠিত ‘বিশ্ব তথ্য সংঘ সম্মেলন’ ছিল তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের সূচনাবিন্দু। এরপর ২০০৬ সালের ১৭ মে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৭ মে দিনটিকে ‘বিশ্ব তথ্য সংঘ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। ওই বছরই তুরস্কের আনতালিয়ায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়— ‘বিশ্ব টেলিযোগাযোগ দিবস’ ও ‘বিশ্ব তথ্য সংঘ দিবস’ একত্র করে একসঙ্গে উদযাপন করা হবে।

বিশ্বের ১৯৩টি সদস্য দেশের অংশগ্রহণে দিবসটি আজ আইটিইউ কর্তৃক স্বীকৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক উপলক্ষ হয়ে উঠেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইন্টারনেট, মোবাইল নেটওয়ার্ক, ফাইভজি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ব্লকচেইন এবং আইওটি প্রযুক্তি শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থাই বদলে দেয়নি, বরং কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বাণিজ্যেও যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। এসব প্রযুক্তি জীবনের গতি বাড়ানোর পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

তবে ডিজিটাল বৈষম্য বা ‘ডিজিটাল ডিভাইড’ এখনো অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। এখনও অনেক দরিদ্র ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠী উচ্চগতির ইন্টারনেট কিংবা স্মার্ট ডিভাইসের বাইরে। এতে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সমাজে নতুন বৈষম্যের জন্ম দিতে পারে।

Nagad
Nagad

আইটিইউর জেন্ডার ও ইয়ুথ বিভাগের সিনিয়র উপদেষ্টা সিলভিয়া পোল বলেন, “যখন সবাই ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতায়ন লাভ করে, তখন পুরো সমাজ উপকৃত হয়। নারীরা যদি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষা, ব্যবসা ও সেবা গ্রহণে সক্রিয় হতে পারেন, তবে তা সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত করে।”

আইটিইউর ‘ফ্যাক্টস অ্যান্ড ফিগারস ২০২৪’ অনুযায়ী, বিশ্বে ৭০ শতাংশ পুরুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, যেখানে নারীর হার ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ ১৮৯ মিলিয়ন পুরুষ বেশি অনলাইনে থাকেন নারীদের তুলনায়। স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে এই ব্যবধান আরও প্রকট; সেসব দেশে মাত্র ২৯ শতাংশ নারী ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, যেখানে পুরুষদের হার ৪১ শতাংশ।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও বিষয়টি প্রাসঙ্গিক। গত এক দশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে মোবাইল ইন্টারনেট, সাইবার নিরাপত্তা, ডিজিটাল পেমেন্ট এবং স্টার্টআপ খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সংযোগ এবং দক্ষ মানবসম্পদের ঘাটতি রয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কার্যালয়ে মূল অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে আলোচনা সভা ছাড়াও প্রযুক্তিখাতের বিশেষজ্ঞ, রেগুলেটর, উদ্যোক্তা ও শিক্ষাবিদদের নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।

এছাড়া, প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে ডাক অধিদপ্তর একটি স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করবে। বিটিআরসির প্রাঙ্গণে টেলিযোগাযোগ খাতের উদ্যোক্তা ও লাইসেন্সিদের অংশগ্রহণে মেলার আয়োজনও করা হয়েছে।

মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি) স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে হ্যাকাথনের আয়োজন করেছে। ৪ সদস্যের ৩৫টি দল এতে অংশ নিচ্ছে।

এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে অবদান রাখা ব্যক্তি ও দলকে সম্মাননা প্রদান, জুলাই আন্দোলনে আহত বীরদের মাঝে বিশেষ ডিভাইস বিতরণ, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পরিবেশবান্ধব ব্যানারে সজ্জা, টেলিভিশনে টকশো, জাতীয় পত্রিকায় ক্রোড়পত্র এবং বিসিএস (টেলিকম) সমিতির স্মরণিকা প্রকাশেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।