প্রকাশিত: ৩:৪৬ অপরাহ্ণ, জুন ২৮, ২০২৫
কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা:
পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে বিনা পারিশ্রমিকে কবর খুঁড়ে যাওয়া কিশোরগঞ্জের সেই মানবিক মানুষ মনু মিয়া (৬৭) চলে গেলেন ‘কবরের দেশেই’। শনিবার (২৮ জুন) সকাল সাড়ে ৯টায় কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন।
মনু মিয়া ছিলেন একজন সাধারণ মানুষ, কিন্তু কাজ করেছেন অসাধারণ মানবিকতায়। কোনো মৃত্যু সংবাদ পেলেই ঝড়-বৃষ্টি বা রাত-বিরাতের তোয়াক্কা না করে কোদাল, খুন্তিসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে ছুটে যেতেন কবরস্থানে—একজন অপরিচিত মানুষের শেষ শয্যার জায়গাটি ঠিকঠাক করে দিতে।
বিনিময়ে তিনি কখনো কোনো অর্থ বা সুবিধা নেননি। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি এভাবে কাজ করে গেছেন। তার নিজের হাতে খোঁড়া কবরের সংখ্যা ৩ হাজার ৫৭টি, যা তার ডায়েরিতে দিন-তারিখসহ নথিভুক্ত রয়েছে।
দূরের এলাকায় দ্রুত পৌঁছানোর জন্য নিজের ধানিজমি বিক্রি করে তিনি একটি ঘোড়াও কিনেছিলেন, যার পিঠে চড়ে যেতেন কবর খুঁড়তে। দুর্বৃত্তরা সেই ঘোড়াটিকে হত্যা করে। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে দেশ-বিদেশ থেকে অনেকে তাকে সহযোগিতা করতে চাইলেও তিনি কোনো সহায়তা নেননি। বরং সবার কাছে চেয়েছিলেন কেবল তার সুস্থতার জন্য দোয়া—যেন তিনি আবার মানুষের জন্য কবর খুঁড়তে পারেন।
আজ বিকেলে নিজ গ্রামে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হবে। আজ তার নিজের কবর খোঁড়ার প্রস্তুতি চলছে—যেখানে হয়তো একজন অপরিচিত মানুষ তার জন্য কোদাল হাতে কাজ করছেন।
এই নিঃস্বার্থ মানুষটির মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে এলাকায়। তাকে স্মরণ করছেন কেবল একজন কবর খোঁড়ার মানুষ হিসেবে নয়, বরং মানবিকতার এক জ্বলন্ত উদাহরণ হিসেবে।
তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে স্থানীয়রা ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা।