পার্বত‌্য ২৮টি পাড়াকেন্দ্রে ডিজিটাল ক্লাসরুমের অভিযাত্রা শুরু

তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিবেদক:তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ৪:০৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৯, ২০২২

দুর্গম পার্বত‌্য অঞ্চলের ২৮টি পাড়াকেন্দ্রে ডিজিটাল ক্লাসরুমের অভিযাত্রা শুরু হলো। পার্বত‌্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ২৮টি পাড়াকেন্দ্রে ডিজিটাল ক্লাসরুম উপকরণ, ডিজিটাল কন্টেন্টসহ ট‌্যাবলেট এবং পাঠ‌্যপুস্তক হস্তান্তরের মাধ‌্যমে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সুবিধা বঞ্চিত অঞ্চলের সরকারি প্রাথমিক বিদ‌্যালয়ের শিক্ষা ব‌্যবস্থা ডিজিটাল করণ শীর্ষক প্রকল্পের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।

মন্ত্রী ডিজিটাল যুগের চ‌্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন । তিনি বলেন, শিক্ষা গ্রহণ করার বিষয়। জ্ঞান আহরণ করার ক্ষেত্রে ছাত্ররা তা ধারণ করতে না পারলে শিক্ষার মূল‌্য থাকে না।

মন্ত্রী এই উপলক্ষ‌্যে রাঙ্গামাটিতে পার্বত‌্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ডিজিটার প্লাটফর্মে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।

বিটিআরসির চেয়ারম‌্যন শ‌্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিজয় ডিজিটাল-এর সিইও জেসমিন জুই। অনুষ্ঠানে পার্বত‌্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম‌্যান নুরুল আলম চৌধুরী, রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান , পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ এবং প্রকল্প পরিচালক আবদুল ওয়াহাব বক্তৃতা করেন।

মন্ত্রী দুর্গম অঞ্চলের সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে প্রথাগত শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির চেয়ে ভাল কাজ হতে পারে না উল্লেখ করে বলেন, শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে এটি হলো একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ডিজিটাল ডিভাইসে ডিজিটাল কনটেন্টে পাঠ প্রদানের ফলপ্রসূ অবদান তুলে ধরে ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের অগ্রদূত জনাব মোস্তফা জব্বার বলেন, শিশুরা ডিজিটাল এই পদ্ধতিতে আনন্দের সাথে তাদের এক বছরের সিলেবাস ৩ মাসের মধ্যে শেষ করতে সক্ষম হয়। শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের স্বপ্নদ্রষ্টা জনাব মোস্তাফা জব্বার নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলায় তার পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত একটি ডিজিটাল স্কুলের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলেন, শিশুদেরকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করতেই হবে। ডিজিটাল কনটেন্ট পাওয়ার পর ছুটির পরও বাড়ি যেতে চায় না ছোট্ট শিক্ষার্থীরা।

মন্ত্রী মানিকগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ জেলায় এই প্রকল্পের অধীন পরিচালিত কয়েকটি বিদ‌্যালয়ের ডিজিটাল পাঠদান কার্যক্রম সরেজমিনে পরিদর্শনকালে তার অভিজ্ঞতা ব‌্যক্ত করে বলেন, আশপাশের স্কুলের শিক্ষার্থীরা অনেকে টিসি নিয়ে এই সকল স্কুলে চলে আসছে। যে স্কুলে মাল্টি মিডিয়া আছে সে প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল কনটেন্ট দেওয়ার দাবি উঠেছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি আমাদের এগিয়ে যাওয়ার চালিকা শক্তি। করোনাকালে উন্নত দুনিয়ার তুলনায় আমাদের ভাল করার মূল মন্ত্রটি ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি।

Nagad

মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সাল থেকে গত ১৪ বছরে হাটি হাটি পা পা করে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যক্রম ডিজিটালে রূপান্তরে সক্ষম হয়েছি। বিশ্বে বাংলা ভাষায় এ ধরনের ডিজিটাল উপাত্ত তৈরি করা এটাই প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র। ডিজিটাল শিক্ষার মানে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন কিংবা শিক্ষার্থীদের জন্য টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ধারণ করা ক্লাশ নয়। শিক্ষার ডিজিটাল কনটেন্ট হচ্ছে ডিজিটাল যন্ত্রে পাঠদানের জন্য প্রচলিত পাঠ্য সূচির মানসম্মত ইন্টার এক্টিভিটি, ছবি, অডিও, ভিডিও, এ্যানিমেসন, টেক্সট ও অন্যান্য মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট দিয়ে প্রোগ্রামিং করা সফটওয়্যার দিয়ে ডিজিটাল ডিভাইসে শিক্ষার প্রবর্তন করা । উন্নত বিশ্বে বহু আগে থেকেই এই পদ্ধতি অবলম্বনে শিক্ষা দেয়া হয়ে আসছে। বাংলাদেশেও আনন্দ মাল্টিমিডিয়ার উদ্যোগে ১৯৯৯ সাল থেকে সীমিত পরিসরে ৩২টি মাল্টিমিডিয়া স্কুলে এই পদ্ধতিতে শিক্ষা প্রদান করে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের অভিযাত্রা শুরু হয়। তিনি ডিজিটাল শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে শিক্ষাবিদ, প্রযুক্তিবিদ, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করার আহ্বান জানান। মন্ত্রী সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মধ‌্যে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে সম্ভাব‌্য সব ধরণের সহযোগিতা প্রদানের দৃঢ় অঙ্গিকার ব‌্যক্ত করেন।

মূল প্রবন্ধে জেসমিন জুই বলেন শিশুদের জন্য মান সম্মত একটি ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। গত ১৪ বছরে বিজয় ডিজিটাল কনটেন্ট সে চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরিতে মাননীয় মন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শিক্ষা উপকরণ অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়- শিক্ষা উপকরণে ভুল বলে কোন কিছুই থাকতে পারে না। তিনি শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে মানসম্মত ডিজিটাল কনটেন্টের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, একটি ভালো কনটেন্ট শিশুদের প্রতিভা বিকাশে ফলপ্রসূ অবদান রাখছে। তিনি শিক্ষার ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির বিভিন্ন কারিগরি দিক তুলে ধরে তার এ সেক্টরে বিগত ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, কোয়ালিটির সাথে আপোষ করতে পারি না বলেই দীর্ঘ সময় কনটেন্ট তৈরিতে ব্যয় করতে হয়েছে।

সুবিধা বঞ্চিত প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলের ৬শত ৫০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে বিটিআরসি‘র এসওএফ তহবিলের অর্থায়নে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের আওতায় পার্বত‌্য অঞ্চলের ২৮টি পাড়াকেন্দ্রে প্রাথমিক বিদ্যালয় ডিজিটাল কনটেন্টের মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রমের যাত্রা শুরু হয়।

পার্বত‌্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অধীন সবকটি পাড়াকেন্দ্র ডিজিটাল ক্লাসরুমের আওতায় আনার দাবী করছেন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মধ‌্যে ডিজিটাল বৈষম‌্য দূর করার মাধ‌্যমে ডিজিটাল মানবসম্পদ গড়ে তুলতে সহায়তার জন‌্য ডিজিটাল ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর প্রতি এই দাবী জানান পার্বত‌্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম‌্যানসহ অন‌্যান‌্য বক্তারা।

পরে বিজয় ডিজিটাল-এর সিইও জেসমিন জুই ছাত্র-ছাত্রীদের মধ‌্যে ডিজিটাল কন্টেন্ট ও ল‌্যাপটপ বিতরণ করেন।