কিংবদন্তি সুচিত্রা সেনের ৯৪তম জন্মদিন আজ, পাবনায় নানা আয়োজন
বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়িকা সুচিত্রা সেনের ৯৪তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল পাবনা শহরে জন্মগ্রহণ করেন রূপালি পর্দার এই অমর নায়িকা। তার জন্মদিন ঘিরে পাবনায় নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। আয়োজন করা হয়েছে কেক কাটা, আলোচনা সভা এবং সুচিত্রা সেন অভিনীত চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর।
সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এসব কর্মসূচির আয়োজন করেছে। তার স্মৃতিবিজড়িত পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনে অবস্থিত পৈত্রিক বাড়িটি এখনও কিংবদন্তি নায়িকার স্মৃতিকে ধারণ করে আছে।


সুচিত্রা সেনের প্রকৃত নাম ছিল রমা দাশগুপ্ত। তার বাবা করুনাময় দাশগুপ্ত ছিলেন পাবনা মিউনিসিপ্যালিটির স্যানিটারি ইন্সপেক্টর এবং মা ইন্দিরা দাশগুপ্ত ছিলেন গৃহিণী। দু’বোনের মধ্যে রমা ছিলেন বড়। ছোট বোনের নাম হেনা দাশগুপ্ত।
শৈশব-কৈশোর কাটে পাবনা শহরের মহাকালী পাঠশালা (বর্তমানে টাউন গার্লস হাই স্কুল) ও পাবনা বালিকা বিদ্যালয়ে। পড়ালেখায় খুব একটা আগ্রহী না হলেও গান, নাটক ও অভিনয়ের প্রতি তার ঝোঁক ছিল প্রবল। পাবনার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাওয়া এবং নাটকে অভিনয় করতেন তিনি।
উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে রমা বিয়ের পর বনেদি পরিবারের গৃহিণী হলেও, অভিনয়ের টানে যুক্ত হন চলচ্চিত্র জগতে। ১৯৫২ সালে ‘শেষ কোথায়’ নামের একটি ছবিতে প্রথম অভিনয় করলেও ছবিটি মুক্তি পায়নি। এরপর ১৯৫৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সাত নম্বর কয়েদি’ চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। পরিচালক সুকুমার দাশগুপ্তের এই ছবির সহকারী পরিচালক নীতিশ রায়ই তার নতুন নাম রাখেন— সুচিত্রা সেন।
সুচিত্রা সেন বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে মোট ৬৩টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। উত্তম কুমারের সঙ্গে তার জুটি হয়ে ওঠে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক কালজয়ী অধ্যায়। ১৯৭৮ সালে উত্তম কুমারের মৃত্যুতে তিনি চলচ্চিত্র জগত থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন।
১৯৬৩ সালে ‘সাত পাকে বাঁধা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি সিলভার প্রাইজ ফর বেস্ট অ্যাকট্রেস পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী, যিনি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এমন সম্মান পেয়েছিলেন। ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে। ২০০৫ সালে তাকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারের প্রস্তাব দেওয়া হলেও জনসমক্ষে না আসার সিদ্ধান্তে তিনি তা গ্রহণ করেননি। ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মানে ভূষিত করে।
সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. নরেশ চন্দ্র মধু বলেন, “মহান নায়িকার জন্মদিন উপলক্ষে আমাদের পক্ষ থেকে কেক কাটা ও আলোচনাসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া পাবনার আরও কয়েকটি সংগঠনও দিনটি ঘিরে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।”