ট্রাইব্যুনাল ছিল পূর্বপরিকল্পিত, সাজানো বিচার: শিশির মনির

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৬:০১ অপরাহ্ণ, মে ৮, ২০২৫

মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল শুনানিতে আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির অভিযোগ করেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার ছিল ‘পূর্বপরিকল্পিত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। তিনি বলেন, “বিচারের নামে জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। এটি ছিল এক ধরনের জুডিশিয়াল কিলিং।”

বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। আজহারের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনিক আর হক।

শুনানিতে শিশির মনির বলেন, “আরও সময় পেলে এটিএম আজহারের ফাঁসি কার্যকর করত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ফ্যাসিস্ট সরকার। মহান আল্লাহ এবং সময় তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। অন্যায়ভাবে ফাঁসি কার্যকর হলে আমরা আজ এই আদালতের সামনে দাঁড়াতে পারতাম না। এখন সুবিচারের সুযোগ এসেছে।”

আদালত থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, “আপিল বিভাগ যদি এটিএম আজহারকে খালাস দেন, তাহলে দেশে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল, বিচার বিভাগ সেই কলঙ্ক থেকে আংশিক মুক্ত হবে।”

তিনি দাবি করেন, ‘১৮ বছর বয়সী একজন ইন্টারমিডিয়েট পড়ুয়া ছাত্রকে ‘কমান্ডার’ বানিয়ে সাজা দেওয়া হয়েছে। সাক্ষ্য-প্রমাণ ছিল দুর্বল ও অসংলগ্ন।’

শিশির মনির আরও বলেন, ‘একজন সাক্ষী বলেছেন, তিন মাইল দূর থেকে নির্যাতন দৃশ্য দেখেছেন। আরেকজন বলছেন, আজহার ডান হাত দিয়ে থাপ্পড় মেরেছেন ভিকটিমের বাম গালে—যা বাস্তবসম্মত নয়। ত্রুটিপূর্ণ সাক্ষ্য দিয়ে রাজনৈতিকভাবে এটিএম আজহারকে জড়ানো হয়েছে।’

Nagad

তিনি অভিযোগ করেন, ‘সাক্ষীদের জেরা করার অধিকার থাকা সত্ত্বেও তা খর্ব করা হয়েছিল। আইন ও রুলস পরিবর্তন করে আসামিপক্ষের জেরা করার সুযোগ বন্ধ করা হয়।’

এ সময় তিনি বলেন, ‘স্কাইপ কথোপকথন, মেইল যোগাযোগ, সাক্ষী সুখরঞ্জন বালির অপহরণসহ বহু অনিয়মের প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ট্রাইব্যুনাল সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে না দিয়ে আবেদন খারিজ করে দেয়। এমনকি রাষ্ট্রপক্ষের এক সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।’

তিনি জানান, ‘১৯৭৩ সালে প্রণীত আইন সংশোধন করে আওয়ামী লীগ সরকার সাধারণ নাগরিকদের বিচার করার বিধান যুক্ত করে। অথচ যেসব জামায়াত নেতার বিচার হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো থানায় জিডি পর্যন্ত ছিল না।’

তিনি আরও দাবি করেন, ‘একজন সাক্ষী ৬ কিলোমিটার দূর থেকে ট্রেন থেকে নামার দৃশ্য দেখেছেন বলে দাবি করেছেন। ঘটনাস্থল, সময় এবং বিবরণে সাক্ষীদের বক্তব্যে অসংগতি রয়েছে। কেউ বলেছেন, বাবাকে কে মেরেছে তা তিনি জানেন না, অথচ পরবর্তী সাক্ষী এটিএম আজহারের নাম বলেছেন।’

শিশির মনির বলেন, ‘একজন বিচারপতি নিজেই স্বীকার করেছেন, সাক্ষ্যগুলো বিশ্বাসযোগ্য নয়। তিনি কিছু অভিযোগ থেকে আজহারকে খালাসও দেন।’

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দেন। আপিলে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর রায় বহাল থাকে। ২০২০ সালের ১৯ জুলাই রিভিউ আবেদন করা হলে আপিল বিভাগ ২০২৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষে আপিলের অনুমতি (লিভ) মঞ্জুর করেন। বর্তমানে সেই আপিলেরই শুনানি চলছে।