লালমনিরহাটে আওয়ামী লীগের দখলে মাঠ, শক্তি বাড়াচ্ছে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি
লালমনিরহাটে হঠাৎ করে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ২০২৩ সালের নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি বিভিন্ন কর্মসূচী দিয়ে মাঠ দখলের চেষ্টা করলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ তা প্রতিরোধের ডাক দিচ্ছে। জেলার ৫টি উপজেলার মধ্যে ৩টিতে বিএনপি ও ২টিতে আওয়ামীলীগ নিজের অবস্থান জানান দেয়ার চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টিও সাংগঠনিক ভাবে সুসংগঠিত হতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
সম্প্রতি বিএনপি’র নানা কর্মসূচী জেলা সদর, আদিতমারী ও কালীগঞ্জ উপজেলায় বাঁধা ছাড়ায় পালিত হয়েছে। কিন্তু হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলায় তেমন কোনো কর্মসূচী দিতে পারেনি বিএনপি। হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলায় বিএনপি কর্মসূচী দেয়ার চেষ্টা করলেও আওয়ামীলীগ পাল্টা কর্মসূচী দিয়ে তা প্রতিহত করেছে। কিন্তু জেলা সদর, আদিতমারী ও কালীগঞ্জ উপজেলায় বিএনপি’র কর্মসূচীর বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগ তেমন প্রতিরোধ গড়ে তুলতেই পারেনি।
গত ৫ সেপ্টেম্বর জেলা যুবদলের সম্মেলনে বিএনপি’র হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের শহর জুড়ে শোডাউন নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। এর আগে সদর উপজেলার বড়বাড়ীতে ফুটবল খেলার আদলে ৭ দিন ধরে বিএনপির নানা কর্মসূচী পালিত হয়েছে। যে কর্মসূচী গুলোতে হাজার হাজার বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। এ নিয়ে খোদ আওয়ামীলীগ সমর্থিত নেতা-কর্মীরা বলছে, সারা দেশে যখন বিএনপি তাদের কর্মসূচীতে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে ঠিক তখন লালমনিরহাট জেলা সদরে একের পর এক বিএনপি কর্মসূচীতে সফল হচ্ছে কি ভাবে ? এতে আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা মনে হচ্ছে।
এছাড়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এ জেলার সদর আসনের সংসদ সদস্য। জাতীয় পার্টি ছেড়ে যারা অন্য দলে চলে গেছেন তাদের দলে ফিরে আনার জন্য তিনি কাজ করছেন। তাদের দাবী দলকে দ্রুত সময়ে মধ্যে সুসংগঠিত করা হবে।
লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি। তার নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচী দিয়ে বিএনপি’কে কোনঠাসা করে রেখেছেন। এ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী ব্যারিস্টার হাসান রাজীব প্রধান বেশিভাগ সময় ঢাকায় অবস্থান করেন। ফলে নেতাদের সাথে তার যোগাযোগ থাকলেও কর্মীদের সাথে যোগাযোগ নেই বলে চলে। এ দুই উপজেলায় বিএনপি’র চেয়ে জাতীয় পার্টি ও জামাতেই অনেকটা সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী।
হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম উপজেলায় বিএনপি’র সাংগঠনিক অবস্থান এতটা দুর্বল যে দলীয় কার্যালয়েও আওয়ামীলীগের বাঁধার ভয়ে অনেকটা পুলিশী পাহাড়ায় কর্মসূচী পালন করেন। এ ছাড়া কমিটিতে ত্যাগীদের মূল্যায়ন না করার অভিযোগ রয়েছে ব্যারিস্টার হাসান রাজীব প্রধানের বিরুদ্ধে।
লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) আসনের সংসদ সদস্য সমাজকাল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় দলকে তেমন সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী করতে না পারলেও বিএনপি’র প্রার্থী রোকন উদ্দিন বাবুল দলকে শক্তিশালী করতে চেষ্টা করছেন। নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছেন বিএনপি।
তবে সম্প্রতি মন্ত্রী পুত্র ও জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুজ্জামান আহমেদ দলকে গতিশীল করতে চেষ্টা শুরু করেছেন। পাশাপাশি মিজানুর রহমান মিজু কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পাওয়ার পর দলীয় নানা কর্মসূচী দেখা যাচ্ছে।
লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। এ জেলায় জাতীয় পার্টির তেমন সাংগঠনিক অবস্থান নেই বলে চলে। বিএনপি’র একের পর এক কর্মসূচীতে আওয়ামীলীগের মাঠ পযার্য়ের নেতা-কর্মীদের সমলোচনায় জেলা ও উপজেলা কমিটি’র নেতারা বিপাকে। আওয়ামীলীগ সমর্থিত কর্মীদের অভিযোগ দলের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে বিএনপি’র কর্মসূচীর বিরুদ্ধে পাল্টা কর্মসূচী দিয়ে পারছে না আওয়ামীলীগ।
লালমনিরহাট জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, শুধু বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা নয়, সাধারণ মানুষ আমাদের সাথে রয়েছেন। ফলে আওয়ামীলীগ আমাদের বিরুদ্ধে কর্মসূচী দেয়ার সাহস পাচ্ছে না।
লালমনিরহাট জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন এমপি বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী করলে করতে পারে। কিন্তু কর্মসূচীর নামে যদি ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করেন তাহলে সঠিক জবাব দেয়া হবে। লালমনিরহাটের সাধারণ মানুষ আওয়ামীলীগের সাথে আছেন।